আজকের তারুণ্যের প্রতিটিপর্বে এমন একজন ব্যক্তি অতিথি হিসেবে থাকেন, যিনি তার কাজ ও সমাজের প্রতি অবদানের মাধ্যমে তরুণদের কাছে আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হন। ২৭ই মে ২০২১ এ YSSE দ্বারা আয়োজিত তরুণদের দিকনির্দেশনা এবং অনুপ্রেরণা মূলক অনুষ্ঠান “আজকের তারুণ্য” এর ৪৮ তম পর্বের অতিথি হিসেবে ছিলেন “ইমাম হোসেন” । YSSE এর কনটেন্ট রাইটিং বিভাগের ইনর্টান নুজহাত সাবাবা তিয়াস এবং বিসনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের অ্যাসোসিয়েট মুসফিরাত তাবাস্সুম এর যৌথ উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচারিত হয়েছিল YSSE এর ফেসবুক পেজ থেকে। ইমাম হোসেন বর্তমানে Headman Academy এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা । এছাড়াও তিনি একজন কর্পোরেট প্রশিক্ষক এবং বাংলাদেশ পুলিশ, আর্মি এবং বিসিএস ক্যাডারস দের জন্য ইংরেজি ভাষা বিশেষজ্ঞ। Headman Academy একটি ইংরেজি ভাষা ও কর্পোরেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তিনি একজন প্রাণবন্ত এবং ইন্টারঅ্যাক্টিভ ব্যক্তিত্বের মানুষ। আর তার ইংরেজী ভাষার প্রতি তার ভালোবাসা থেকেই আজ সে একজন সফল ইংরেজী শিক্ষক হতে পেরেছেন।
Headman Academy এর পিছনের গল্প জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ” করোনাকালীন সময়ে মার্চের শেষের দিকে মাত্র ৩০০০ ফলোয়ার্স নিয়ে অনলাইনে তার এই যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে অ্যাক্টিভ থেকে সিনিয়র, বাচ্চাদের নিয়ে ক্লাস, লেসন, কুইজ ভিত্তিক কাজ করতে করতে এখন প্রায় ৭লাখ+ এর পরিবার আমাদের Headman Academy। এটাই আমার কাছে স্বার্থকতা যে আজ এতো মানুষ আমাকে এবং আমাদের এই পরিবারকে ভালোবাসে।”
তার ফেইসবুক পেইজের নাম Headman Academy কেন দিয়েছিলেন জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ” প্রথমে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল Skills development hub, যেখানে থেকে আপনি আপনার সব ধরনের স্কিলসগুলো ডেভেলপ করতে পারবেন। তারপর ইউনিক কিছু চিন্তা করতে গিয়ে Headman Academy এই নামটি দেওয়া যার অর্থ হলো – যে একাডেমি সবচেয়ে বেস্ট ( সব প্রতিষ্ঠানের হেড যাকে বলা হয়)। আর যার উদ্দেশ্য হলো সবাইকে সাহায্য করা।”
ছোটবেলা থেকেই সবার জীবনে লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও যখন তিনি একটি ভিন্ন পেশায় আছেন। এতে প্রথমদিকে কী কোনো নেগেটিভিটি এর সম্মুখীন হতে হয়েছিল না কি জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “প্রথমদিকে ফ্যামিলি এবং আত্মীয়স্বজনদের কাছে থেকে অনেক রকমের কথা শুনতে হয়েছে। তারা বলতো যে, পৃথিবীতে লাখ লাখ শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও তুমি কীভাবে ভিন্ন হবা? কিন্তু আমি আগে থেকেই ভাবতাম সব সময় যে, কোনো জিনিসকে ভালোবেসে সেই একই জিনিস কীভাবে ভিন্নভাবে করা যায়। আর যেই ভাবা সেই কাজ থেকেই আজকে আমি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি।”
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই যখন খোলা হয় তখন তার স্ট্রাগল পিরিয়ড কম বেশি থাকেই। আর Headman Academy এর স্ট্রাগল পিরিয়ড সম্পর্কে জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “প্রথমদিকে স্ট্রাগল বলতে শুরুর ৮-৯ মাস আর্থিক সংকটে পড়ে গিয়েছিলাম। কারণ একটি ভিডিও যখন বানানো হয় সেটার শুটিং, এডিটিং ইত্যাদি সবকিছুর জন্য আলাদা মানুষের প্রয়োজন হয় কিন্তু সেই খরচটা বহন করার মতো পরিস্থিতি তখন ছিলনা। তাই তখন সে কাজগুলো আমার একাই করতে হতো যা অনেক চ্যালেঞ্জিং। মানুষ যখন কিছু শুরু করে তখন এই সময়গুলোতে হাল ছেড়ে দেয় কিন্তু আমি দেইনি, যা আমার জন্য একটি শিক্ষনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা কী জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হলো ব্যর্থতাগুলো। এখন মানুষ প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পর ই হাল ছেড়ে দেয়, তাই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবেনা তখনই সফলতা আসবে। ব্যর্থতাগুলো থেকে শিখেছি এবং তার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি।”
তিনি তার চেয়ে বড় ব্যক্তিত্বের মানুষদের (পুলিশ, বিসিএস ক্যাডার) শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এতে কী তার কখনো ইতঃস্তত হতে হয়েছে নাকি জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “যখন আমি সিনিয়র কর্মকর্তাদের পড়াচ্ছি তখন এটা তাদের মেনে নিতে কোনো কষ্ট হয়নি। তারা সবসময় দেখে, তারা যেটা শিখতে চায় আমি তা শিখাতে পারছি কিনা মানে আমার গুন টা দেখে। আর সবাই শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দেয় যার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায়না।”
আমাদের প্রতিটা মানুষেরই এখন ইংরেজীর দরকার হয় সেটা যেই হোক না কেন। আর তিনি সেই বিষয়টাকে কীভাবে নেন জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমরা যারা বাংলাদেশে বা বাংলাভাষী আছি তাদের ইংরেজী শিখতেই হবে, যা বাদ দেয়ার কোনো উপায় নেই। তাই আমি বলবো ইংরেজীকে ভয় না পেয়ে সেটাকে ভালোবাসতে হবে। ভালোবেসে যদি ইংরেজী শেখার চেষ্টা কেউ করে তাহলে অবশ্যই সেটা তাড়াতাড়ি শিখতে পারবে।”
ছোট থেকে আমরা গ্রামার মুখস্ত করে শিখে এসেছি কিন্তু তিনি সেটা ভিন্নভাবে হেসে, গান গেয়ে শিখিয়ে থাকেন। আর তার এই আইডিয়া টা কীভাবে আসলো জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমরা ইংরেজীকে কখনো ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে শিখে থাকিনা, শুধু পাশ করায় জন্য শিখি। আর আমি মনে করি যে একটা বাচ্চাকে যেমন ভাষা শেখানোর আগে হেসে, গান গেয়ে শেখানো যায় সেই ভাবে যদি ইংরেজীটা কে ও শেখার চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই শেখা সম্ভব।”
দশ বছর পর নিজেকে এবং Headman Academy কে কোথায় দেখতে চান জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, “আমি দশ বছর পর আমাকে বা Headman Academy কে আরো বড় কোনো জায়গায় দেখতে চাইনা। আমি আমাদের দেশের মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখতে চাই। মানুষের যে ইংরেজী নিয়ে ভয় সেটা দেখতে চাই না। আমি চাই একদিন আমার এই শিক্ষার্থীরা দেশকে পরিবর্তন করবে। মানুষের যেন আর ইংরেজী নিয়ে আলাদা কোনো কোর্স করতে না হয়, তারা যেন তাদের পরিবার থেকেই টেকনিক্যালি শিখে যেতে পারে। আর এটা শুধু আমার একার পক্ষে করা সম্ভব না। সবাই মিলে একসাথে যদি এই কাজ করা যায় তাহলেই এটি সম্ভব হবে।”
তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “জীবনে এই দুটি উক্তি মনে রাখলে আপনার জীবন বদলে দিতে পারে: ১. মহাত্মা গান্ধীর বিখ্যাত উক্তি – “Be positive” অর্থাৎ প্রথমত জীবন থেকে না বোধক শব্দগুলো বাদ দিয়ে দিতে হবে। ২. Seteven Jobs এর বিখ্যাত উক্তি – ” Stay hungry, stay foolish” অর্থাৎ জীবনে কাউকে কখনো বুঝতে দেয়া যাবেনা যে আপনি অনেক কিছু জানেন, তাহলেই আপনি প্রতিনিয়ত জানতে বা শিখতে পারবেন।”
আজকের এই লাইভ থেকে আমরা জানতে পারি যে, জীবনে যখন কেউ কোনো কাজ শুরু করবেন, যতদিন আপনি বেঁচে থাকবেন হাল কখনো ছাড়বেন না। সেই কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং পজিটিভনেস নিয়ে লেগে থাকতে হবে তাহলে সফলতা আসবেই।
রাজিয়া রহমান
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ইন্টার্ন
ওয়াইএসএসই