স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইসলামের আধ্যাত্মিক-তাপসদের মরমীবাদ ‘সুফীবাদ’ নিয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত ছবি নিয়ে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী।
প্রতিযোগিতায় যেসব আলোকচিত্রীর ছবি নির্বাচিত হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দু’টি পুরস্কার জিতেছেন সারাবাংলা’র ফটো করেসপন্ডেন্ট শ্যামল নন্দী।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গ্যালারিতে তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়। বিকেলে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
সুফীবাদ নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিআইআরআই) আয়েজিত ‘ডিআইআরআই ইন্টারন্যাশনাল ফটো অ্যাওয়ার্ডস-২০২২’ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৫১টি দেশের ৭২৪ জন আলোকচিত্রী অংশ নেন। মোট ২ হাজার ৫৭৮টি ছবি থেকে ২০০টি ছবি বাছাই করা হয় প্রদর্শনীর জন্য। চারটি ক্যাটাগরিতে ৫৯ জন আলোকচিত্রীর ১৫১টি ছবিকে পুরস্কার দেওয়া হয়, যার মধ্যে দু’টি ছবি সারাবাংলা’র শ্যামল নন্দীর।
প্রতিযোগিতার ছবি নির্বাচকমণ্ডলীর সদসর্যা হলেন- ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ রশিদ উন নবী, ম্যাপ ফটো এজেন্সির আলোকচিত্রী হাসান সাইফুদ্দীন চন্দন, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার আবির আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ তুষার, সিনিয়র ফটোগ্রাফার কাজী গোলাম কুদ্দুস হেলাল ও আয়োজক সংগঠনের ম্যানেজিং ট্রাস্টি সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী।
পুরস্কার গ্রহণের পর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে শ্যামল নন্দী বলেন, ‘শখের বশেই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম। আন্তর্জাতিক মানের এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামকরা আলোকচিত্রীদের তোলা ছবিআমার ছবিও নির্বাচিত হবে এমন আশা আমি করিনি। যখন শুনলাম, আমার ছবি বাছাইয়ে টিকেছে এবং আমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছি, তখন আমি ভেবেছি অনেক বড় একটি স্বীকৃতি পেলাম। ফটোগ্রাফী শুধু আমার পেশা নয়, আমি এটিকে শিল্পচর্চার মাধ্যম হিসেবেই নিয়েছি। এই পুরস্কার আমার কাজের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আমি মনে করি।’
পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন,‘মানুষকে অন্যায়-পাপাচার থেকে বিরত রেখে সত্যের পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে সৃষ্টিকর্তা আধ্যাত্মিক সাধকদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। উনাদের কর্ম, চিন্তাধারা, মানবকল্যাণ মানুষকে সত্যের পথ দেখিয়েছে। সমাজকে সুন্দর করে গড়ে তোলার জন্য উনারা চিরজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। চট্টগ্রাম আধ্যাত্মিক সাধকদের পূণ্যভুমি। চট্টগ্রামের মানুষেও ধর্মপরায়ণ।
‘আগে সুফিজমের চর্চা সেভাবে হতো না, এখন চর্চা হচ্ছে। সত্যিকারের ধর্ম মানুষকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। আমরা অনেক সময় আমাদের দায়িত্ব ভুলে যাই। আধ্যাত্মিক সাধকরা আমাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেন।’- বলেন মেয়র
সভাপতির বক্তব্যে ডিআইআরআই’র ম্যানেজিং ট্রাস্টি সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘আলোকচিত্রের মাধ্যমে সুফিজমকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্বের মোট ৫১টি দেশ থেকে আলোকচিত্রীরা অংশগ্রহণ করেছেন। তারা তাদের ছবির মাধ্যমে সুফিজমের নানা নিদর্শন তুলে এনেছেন। সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী মানুষের কল্যাণে সপ্তকর্ম পদ্ধতি প্রবর্তন করে গেছেন। সপ্তকর্ম পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষ আত্মশুদ্ধ হতে পারেন।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- একুশে পদকপ্রাপ্ত বংশীবাদক ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম, ইউনাইটেড হাসপাতাল ঢাকা’র ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের প্রধান ডা. রশিদ উন নবী, এগ্রো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দুল হক খান, চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মউদুদুল আলম ও বর্তমান সভাপতি অনুজ কুমার বড়ুয়া এবং ডিআইআরআই’র আন্তর্জাতিক ফটো অ্যাওয়ার্ড আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান শোয়েব ফারুকী।
এর আগে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গ্যালারিতে তিনদিনব্যাপী ছবি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আয়োজন সংগঠনের ট্রাস্টি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী। ডিআইআরআই’র আয়োজনে এবং সৃজনশীল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, গ্লোবাল ফটোগ্রাফিক ইউনিয়ন, সিলি সানাত সারাইয়ি ও চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সহযোগিতায় এই প্রদর্শনী শনিবার পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ