নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভ্ক্তু বিমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। গত তিন বছর ধরে কোম্পানির সকল অর্থ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে যাচ্ছে কোম্পানিটি। পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের পর অর্থ সংক্রান্ত কোন তথ্য না জানিয়েছে স্টক এক্সচেঞ্জকে না প্রকাশ করেছে কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। যার ফলে কোম্পানির বর্তমান অবস্থা নিয়ে সঙ্কিত কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০১৯ সালে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোম্পানিটি। তারপর সকল অর্থসংক্রান্ত তথ্যই অপ্রকাশিত রেখেছে কোম্পানিটির পর্ষদ। কোম্পানির ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালের প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন এবং ২০১৯ সালে হাফ ইয়ার্লি প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও ইনভেস্টোর কিংবা শেয়ারহোল্ডারদের অবগতির জন্য কোম্পানির ইপিএস, এনএভিপিএস এবং নিট ওপারেটিং ক্যাশ ফ্লো পার শেয়ার সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করেনি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
অথচ তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানির অর্থসংক্রান্ত সকল তথ্যই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিনিয়োগকারিদের জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ সকল বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি উত্তম কুমার সাধুর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।
কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৮ পর্যন্ত কোম্পানিটির মোট পুঞ্জিভুত আয়ের পরিমান ছিলো ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৬২ টাকা। ৩০ জুন ২০১৮ তে কোম্পানিটির কর পরবর্তি নিট আয়ের পরিমান ছিলো ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৯১ টাকা। ঐ সময়ের তথ্য মতে, কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমান ২২১ কোটি ৩২ লাখ ২৩ হাজার টাকা এর বিপরীতে কোম্পানিটির দায়বদ্ধতা ছিলো ৮০ কোটি ৮৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৩৮ টাকা।
এদিকে গত বছর কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করে মামলা করেছিলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
জানা যায়, গত ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা ফাঁকি দিয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানে বিষয়টি ধরা পড়লে ওই পাঁচ বছরের সুদ ও জরিমানাসহ মোট পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য মতে, কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই। কোম্পানিটি বিগত ৪ বছরে লভ্যাংশ দিয়েছে সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ২০১৭ সালে ২৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড, ২০১৬ সালে ২০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড এবং ২০১৫ সালে ১৮ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড।
ধারাবাহিক ভাবে লভ্যাংশ প্রদান করা বিমা খাতের এই কোম্পানি হঠাৎ গত তিন বছর কোন লভ্যাংশ দেয়নি বিনিয়োগকারীদের। এবং গত ৩ বছরেও আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে না জানতে পেরে হতাশায় ভুগছে সাধারন বিনিয়োগকারী।
অথচ কোম্পানির এ অবস্থাতেও স্টক এক্সচেঞ্জ এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপি নেয়নি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় কোম্পানিটিকে বিশেষ মনিটরিং এর মাধ্যমে ব্যবস্থা না নিলে হুমকির মুখে পড়তে পারে পুঁজিবাজার এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সাধারন বিনিয়োগকারী। তাই পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এবং বিনিয়োগকারিদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আরো কঠোর মনিটরিং করার পরামর্শ দিচ্ছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
৫০০ কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধন সাপেক্ষে ১৯৯৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় বিমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ১২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
কোম্পানিটির মোট শেয়ারের পরিমান ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টি। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩৩.৮৭ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ১৮.১৮ শতাংশ এবং বাকি ৪৭.৯৮ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারির হাতে।
বৃহস্পতিবার শপ্তাহের শেষ কার্য দিবসে কোম্পানিটির শেয়ার ৩.৪৮ শতাংশ কমে সর্বশেষ শেয়ার দর দাড়িয়েছে ১৫৮.৩০ টাকায়। তার আগের কার্য দিবসে ৪.৫৯ শতাংশ বেড়ে শেয়ার দর দাঁড়িয়েছিলো ১৬৪ টাকায়। শপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটি ১৫৭.২০ টাকা থেকে ১৬৩ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করে। ঐ দিন কোম্পানিটি ১ হাজার ৮৯০ বারে ৬ লাখ ০১ হাজার ৪৯ টি শেয়ার লেনদেন করে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৯ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় সর্বনিম্ন ৬১.৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৩৯ টাকায়।