ইবি করেসপন্ডেন্ট
ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পাশের নুরজাহান ছাত্রী মেসে এক ছাত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে মেসের ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সংঘর্ষের জেরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় অন্তত ৮ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ওই মেসের মালিক আসন্ন ঝিনাইদহ-১ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নায়েব জোয়াদ্দার।
গতকাল সোমবার (১৪ মে) সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী পদমদি-ত্রিবেণী রোডের পাশের নুরজাহান মহিলা হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে। মেস ম্যানেজারের সঙ্গে হাতাহাতির একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে শিক্ষার্থীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল‘ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ফারিয়া খাতুনের গত চার মাসের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল। সোমবার (১৩ মে) বিকালে ফারিয়ার কাছে মেস ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বিদ্যুৎ বিল চাইলে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে ফারিয়া খাতুন বিষয়টি তার ছেলে বন্ধু আবু হানিফ পিয়াসকে (একই বিভাগ ও শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী) জানায়। সন্ধ্যায় পিয়াস ১০/১২ জন বন্ধুকে নিয়ে এ বিষয়ে মেস ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে যান।
এসময় মেয়েদের মেসে ছেলেদের ডেকে নিয়ে আসায় ওই ছাত্রীর উপর ক্ষিপ্ত হন মেস ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস। কথার একপর্যায়ে উভয়পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে।
মেসের ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস ও কেয়ারটেকার ইসলাম জোয়াদ্দার ছেলে শিক্ষার্থীদের মেস থেকে জোর করে বের করে দেন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারির সূত্রপাত ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদেরকে মারধর করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাকিব আলী, ল‘ অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আবু হানিফ পিয়াস, ইনফরমেশন কমিউনিকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের নাঈম রেজা, ইংরেজি বিভাগের হৃদয় আবির ও স্থানীয় আশিক খানসহ ৮ জন আহত হন।
পরে আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে রাত দশটার দিকে শৈলকূপা থানার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে দু’জন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উভয়পক্ষের মাঝে সমোঝোতা করে দেন।
ফারিয়া খাতুন বলেন, ‘আমি আজ সন্ধ্যায় ম্যানেজারকে বিদ্যুৎ বিল দিতে গেলে তিনি আমাকে বাজে ইঙ্গিত দেন। টাকা নেওয়ার সময় ম্যানেজার আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন। পরে আমি টাকাটা ছুড়ে দিলে তিনি আমাকে মেস ছেড়ে চলে যেতে বলেন। আমি আমার বিভাগের বন্ধুকে (আবু হানিফ পিয়াস) বিষয়টি জানালে সে আমার বিষয়ে মেস ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে এলে ম্যানেজার ও নিরাপত্তাকর্মী তার বাজে আচরণ করে। তখন উভয়পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।’
নুর জাহান মহিলা হোস্টেলের ম্যানেজার বিবেক বিশ্বাস বলেন, ‘গত জানুয়ারি মাসে ওই মেয়ে মেসে উঠে। এরপর সে এতদিন থেকেছে কিন্তু বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। তার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া প্রায় এক হাজার টাকা। আমি কয়েকবার বিল চাইতে গেলে সে বিভিন্নরকম বাহানা দিতে থাকে। সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে কোনো বাজে আচরণ করিনি।’
ফারিয়ার বন্ধু আহত আবু হানিফ পিয়াস বলেন, ‘ফারিয়ার সঙ্গে কিছুদিন ধরে মেস ম্যানেজার বাজে ব্যবহার করছিলো। বিভিন্ন সময় মেস ম্যানেজার তাকে বাজে ইঙ্গিত দেয় বলে সে আমাদের জানায়। এছাড়াও মেসের অন্য মেয়েদের সাথেও প্রায় সময়ই খারাপ আচরণ করে ম্যানেজার। আজও আমার বান্ধবীর সাথে খারাপ আচরণ করলে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতে যাই। তখন তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিবেক আমার এক বন্ধুকে চড় মারে। পরে আমরা উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এসময় স্থানীয় লোকজন সেখানে উপস্থিত হয়ে আমাদের ওপর চড়াও হয়। এতে আমরা চার বন্ধু আহত হই।’
রামচন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির এস আই তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা উভয়পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করেছি। এখানে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল, আমরা সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি। যদি কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহদৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমি এখনো কোনো পক্ষেরই লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যতদূর শুনেছি, এক ছাত্রীর বিদ্যুৎ বিল না দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হয়েছে। ছাত্ররা প্রথমে মেস ম্যানেজারের সাথে ঝামেলা করে চলে এসেছে। পরে স্থানীয়রা ইবি শিক্ষার্থীদের যাকেই পেয়েছে তাকেই মারধর করেছে। সেখানে একটা হুলুস্থুল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল।’
সারাবাংলা/এমও