সাদিয়া খানম নামে এক তরুণ বাংলাদেশী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী কোভিড–১৯ এর সাথে লড়াইয়ের জন্য এমনই এক জীবাণুনাশক স্প্রে উদ্ভাবন করেছেন যাকে এর বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে নাসার (NASA) মতে এক “গ্রাউন্ড ব্রেকিং” উদ্ভাবন হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সাদিয়ার ভল্টিক (Voltique) নামের এই জীবাণুনাশক স্প্রে ১১৮ কোটি টাকা বা ১০ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার পেয়েছে।
তরুণ এই বিজ্ঞানী তার বাবা–মার রেস্টুরেন্টে কাজ করার সময় প্রায় ১৪ মাসের কঠোর গবেষণার পরে এই স্প্রে তৈরি করেন যা কোনও সার্ফেসের সমস্ত রোগজীবাণু (ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাক এবং অন্যান্য জীবাণুগুলি) আকর্ষণ করে এবং হত্যা করে, এটি মূলত সমস্ত প্যাথোজেনকে আকর্ষণ করে এবং হত্যা করে– সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল এই স্প্রে যেকোন সার্ফেসে প্রয়োগের পর প্রায় ১৪ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে!
চেস্টার (Chester) থেকে আসা সাদিয়া কোভিড মহামারীর সময় তার পিএইচডি সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে তার বাবা–মা‘র রেস্তোঁরা ক্যাফে ইন্ডিয়ায় কাজ করার সময় স্প্রেটির বিকাশ শুরু করেছিলেন। সেখানে তিনি ন্যানো আণবিক স্তরে একটি ভাইরাস নিয়ে অধ্যয়ন করেন এবং একে মেরে ফেলার সঠিক সূত্র খুঁজতে বিভিন্ন সমীকরণ তৈরি করেন। সাদিয়া তারপরে রেস্তোঁরাটিকেই কেস স্টাডি হিসাবে ব্যবহার করে এই স্প্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য চামড়া থেকে শুরু করে কাঠের ফ্যাবরিক পর্যন্ত বিভিন্ন সার্ফেসে তার আবিষ্কার পরীক্ষা করেন।
এনএইচএস (NHS), নাসা (NASA)এবং বিভিন্ন স্বতন্ত্র পিয়ার–রিভিউড ল্যাবগুলি সফলভাবে ভল্টিকের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে– এটি এখন বেশ কয়েকটি সরকার এবং ব্লু চিপ সংস্থা গ্রহণ করবে। যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলি বলেছে যে এই স্প্রেটি করোনাভাইরাস দমনে ১০০% কার্যকর এবং এই স্প্রে বিভিন্ন সংগঠনের পরিচ্ছন্নতা পণ্যর বিলের পরিমাণ প্রায় ৭০% পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে। সাদিয়া খানম ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৩ টি দেশ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের ভল্টিকের অর্ডার পেয়েছে। স্প্রেটি চিকিৎসা সুবিধা, হোটেল, রেস্তোঁরা, বিমান এমনকি নিউক্লিয়ার স্টেশনেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
তার এই আবিষ্কারে বাবা কবির আহমেদ যারপরনাই গর্বিত। তিনি বলেন, “আমার মেয়ের এই আবিষ্কারের সাহায্যে আমরা যদি বিশ্বজুড়ে মানুষকে সাহায্য করতে পারি তা জানার চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই।“
পরিবারটি যুক্তরাজ্যের চেস্টার ( Chester, UK) শহরে থাকে। তার বাবা একটি রেস্টুরেন্ট চালান, এবং তার দাদা আজমত আলী ১৯৬৪ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান।
তার বাবা প্রথমে তাকে স্থানীয় ব্ল্যাকবার্ন মাদ্রাসায় ভর্তি করেছিলেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন যে তাঁর মেয়ের পড়াশোনা ধর্ম বিষয়ক পাঠ দিয়ে শুরু করা উচিত।
এরপর ব্ল্যাকবার্ন মাদ্রাসা থেকে সাদিয়া সফলভাবে তার সিসিএসই এবং আলিমা কোর্স পাস করেন। তিনি ম্যানচেস্টারের হলি ক্রস সিক্সথ ফর্ম কলেজে পড়াশোনা করতে যান এবং শেষে চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিনেটিক্সে স্নাতকোত্তর অর্জন করেন।
নাদিয়া নওশের
ইন্টার্ন, কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
YSSE