যখনই আপনি কোনো কর্মক্ষেত্রে যোগদান করছেন তখনই কিন্তু পেশাদারী মনোভাব আপনার কাজের মাঝে চলে আসছে। একটা ক্যারিয়ার হচ্ছে শিক্ষাজীবন শেষে, এক কর্মক্ষেত্র থেকে শিখে অন্য একটা জায়গায় গিয়ে নতুন নতুন শিক্ষা অর্জন করা, জানা এবং বোঝা। আপনি এখন এখানে যে কাজ করছেন তা কিন্তু মূলত পরবর্তীতে আরও ভালো জায়গায় কাজ করার জন্যই একটা শিক্ষা নেওয়া।
তবে কেন এই বিষয়ে আপনি পিছিয়ে থাকবেন? যতটা পারুন, নিজেকে সম্প্রসারিত করুন। ক্যারিয়ার গঠনে আপনার জন্য রইলো সহায়ক আরও কিছু পরামর্শ।
সম্পর্ক তৈরিতে আত্মশক্তির উন্নয়ন: কর্মক্ষেত্রে সবার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি আমাদের সকলের মাঝেই কমবেশি আছে। ধরুন, আপনার যদি সবকিছু সামলে নেওয়ার ক্ষমতা থাকে অথবা আপনি যদি একজন দক্ষ লিডার হয়ে থাকেন তবে অফিসের কঠিন সময়ে এগিয়ে যেতে পারেন।
যদি খুব দ্রুত সমস্যা সমাধানের পথ আপনার জানা থাকে তবে সমস্যা সমাধানে কাজে লাগান সেটিকেও। যদি কোনো লেখা বা ডিজাইন তৈরিতে আপনার কোনো তথ্য জানা থাকে, তবে সে বিষয়ে আপনার কলিগ বা বসকে একটি ভালো রিপোর্ট তৈরিতে সাহায্য করতে পারেন। এই যে আপনাকে বলা হচ্ছে অফিসের সবাইকে অল্পবিস্তর সাহায্য করার জন্য, এর মানে কিন্তু এই নয় যে আপনাকে সব সময় ফ্রি সার্ভিসই দিতে হবে। মনে রাখবেন, কখনও কোনো কাজে বাড়তি সুযোগ নেবেনও না, কাউকে নিতেও দেবেন না।
আপনিই ভালো জানেন কখন কোন সময় নিজের দক্ষতা অন্যের সামনে আপনি প্রকাশ করবেন। আসলে আপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে আপনার কলিগ, বস এবং যেই টিমে আপনি কাজ করছেন তাদের সাথে একটা সুসম্পর্ক বজায় রাখা। মনে রাখবেন, আপনি আপনার কাজে যত দক্ষ, তত দ্রুততার সাথে আপনি সামনে এগোতে পারবেন।
গড়ে তুলুন আবেগীয় দক্ষতা: এটা সত্যি যে শিক্ষা আপনাকে চাকরিক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করে, কিন্তু আপনার আবেগীয় দক্ষতা নিয়ন্ত্রণ করার সমস্ত ক্ষমতা আপনারই হাতে। কর্মক্ষেত্রে আপনাকে অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যেমন, অফিসিয়াল পলিটিক্স, নির্দিষ্ট ডেডলাইন মেনে কাজ আর গ্রাহকদের চাওয়া তো আছেই। এই কঠিন সময়গুলোতে নিজেকে ঠিক রাখাই আসলে চ্যালেঞ্জিং। এই কঠিন সময়ই আপনাকে শেখাবে কী করে কাজের চাপের মধ্যেও স্বাভাবিক চিন্তা করতে হয়, লক্ষ্যে অটুট থাকতে হয়।
একেক ব্যক্তি একেক পরিবারে জন্ম নেয়ার দরুণ আমাদের মাঝে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়, কেউ হয়ত চট করে রেগে যাই, কেউবা ঠান্ডা মাথায় ভাবি। যেটাই হোক কর্মক্ষেত্রে যে সব ধরনের আচরণ করা যায় না এটাও মেনে নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম, মেডিটেশন, মস্তিষ্ক পরিচালনা, আর নিজেই নিজেকে গাইড করা- এ সবের মাধ্যমেই আপনি চিন্তাধারার স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পারবেন।
স্বেচ্ছায় বড় প্রজেক্টে কাজ করুন: বড় প্রজেক্টকে কখনও হাতছাড়া করবেন না। এগুলোই আপনাকে কাজের পোর্টফোলিও বড় করতে সাহায্য করবে। ধরুন, মার্কেটিং টিম একটি ইভেন্ট তৈরি করেছে আর আপনি সবার সামনে বেশ গুছিয়েও কথা বলতে পারেন। তবে কেন আপনি নিজেই সেটি উপস্থাপনা করছেন না?
আবার ধরুন আপনার কাজের বাইরে অন্য টিম পাবলিক রিলেশনের কাজগুলো ঠিকমত করতে পারছে না আর আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ দক্ষ তবে কেন এই একটি কাজ আপনি দায়িত্ব নিয়ে করবেন না? অন্য জনের একটি কাজে সহায়তা করার অর্থ এই নয় যে আপনি তাকে টেক্কা দিতে চাচ্ছেন, অন্তত তার দিকে সাহায্যের হাত তো বাড়িয়ে দিতেই পারেন। কে জানে কাল হয়ত আপনার কোনো দরকারে সে এগিয়ে আসতে পারে!
বড় করে ভাবুন: ভালো একটা বেতনে কোথাও কাজ করছেন এটা বেশ ভালো। তবে কখনও ভেবেছেন এই বিষয়টিই আপনার দক্ষতা আর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে কিনা? শুধুমাত্র ভালো বেতন পাচ্ছেন-বিষয়টি যেন এমন না হয় যে আপনি একটি দ্বীপের মাঝখানে আটকে আছেন আর ভাবছেন এখানেই সারা জীবন রয়ে যাবেন!
আপনি যেখানে কাজ করছেন সেই কোম্পানি আগামী কয়েক বছরে কোথায় অবস্থান করবে তা নিয়ে ভাবুন। যদি আপনার কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধি পায়, অথবা অন্তত এখন যেভাবে আছে সেভাবে চলবে, তবে ধরে নিতে পারেন আপনি একটা ভালো অবস্থানে আছেন। কিন্তু যদি এটি পূর্বের অবস্থা থেকে পিছিয়ে যায় অথবা আগামী কয়েক বছরে এর মাঝে কোনো উন্নতি আপনি দেখতে না পান তবে বুঝবেন সময় এসেছে পরিবর্তনের!
যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন: যে কোনো ক্যারিয়ারের জন্যই এটি সবচেয়ে জরুরি। বাইরে যান, বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগ দিন, ওয়ার্কশপ করুন, সেই সব মানুষদের সাথে মিশুন যাদের সাথে মিশলে আপনার মনে হবে আপনার ক্যারিয়ার আরও সামনে এগিয়ে যাবে। এই সম্পর্ক হতে পারে অন্য কোম্পানিতে কাজ করছে এমন মানুষ, ট্রেড সোসাইটি অফিসার আর তার সদস্য, প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি, অথবা কনভেনশনে লেকচার দিতে এসেছেন অথবা সদস্য হতে এসেছেন এমন কেউও। সবার সাথে পরিচিত হবার সময় নিজের কার্ড দিতে ভুলবেন না যেন!
স্বশিক্ষিত হোন: শেখার কোনও সময় বা বয়স নেই। নিজের কাজের ব্যাপারে যতটা জানার চেষ্টা থাকতে হবে আপনার মাঝে। নিয়মিত ট্রেনিং করা আর ওয়ার্কশপ করা চালু রাখতে হবে। কোনো ট্রেনিং এ যুক্ত হলে দুইটি কাজ হয়। এক, নিজের দক্ষতা বাড়ে এবং দুই, যোগাযোগের ক্ষেত্র বড় হয়।
এর বাইরে প্রচুর খবর এবং লেখা পড়ুন যা আপনার পেশাকে আরও ত্বরান্বিত করবে। সবকিছুর পাশাপাশি একতা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও সম্পন্ন করে রাখতে পারেন। প্রতিযোগিতায় হয়ত সবই চলবে, তবে একজন স্নাতকোত্তর হিসেবে আপনার নাম অন্যদের মাঝে একটু আলাদাভাবে দেখা হবে সে কিন্তু বলাই যায়।