স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: খাতা জমার পর শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার সেই খাতা ফেরত নিয়ে তিন ছাত্রের পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এদিকে, পরীক্ষায় নকলের অপরাধে একই কেন্দ্রের চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি চার পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে তাদের পরীক্ষা বাতিলের জন্য কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান।
বহিষ্কৃতরা হলেন- মাহাতির মাহমুদ, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, মো. আবদুল্লাহ তালুকদার ও মো. শোয়েব জামান। এদের মধ্যে মাহাতির মাহমুদ চট্টগ্রাম পলিকেটনিক ইনস্টিটিউটের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী হিসেবে অষ্টম পর্বের সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। শ্যামলী আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের সিভিল বিভাগের একই সেশনের ছাত্র জিয়াউর রহমান।
আবদুল্লাহ তালুকদার ও শোয়েব জামান শ্যামলী আইডিয়ালের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী। তারা দ্বিতীয় পর্বের সমাপনী পরীক্ষার্থী।
অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিকেলের শিফটে অর্থাৎ বেলা ২টা থেকে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় তারা অংশ নিয়েছিল। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিদর্শনের সময় তাদের নকলসহ হাতে-নাতে ধরা হয়। এরপর তাদের বহিষ্কার করে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। আমরা তাদের পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশ করেছি। সেটা বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের সময় মূল্যায়ন করবে।’
এদিকে, আগেরদিন একই প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর প্রকাশ সিকদার তাকে হুমকি দিয়ে খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করার বিষয়ে ইনস্টিটিউটের উপাধ্যক্ষ স্বপন কুমার নাথকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে একজন বিভাগীয় প্রধান ও একজন শিক্ষক সদস্য হিসেবে আছেন। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চতুর্থ পর্বের সমাপনী পরীক্ষায় পছন্দের আসনে বসতে না পেরে খাতা জমা দিয়ে বেরিয়ে যান তিন ছাত্র মুহিতুল আজিম, মিফজাহুল আশরাফ ও মোশাররফ হোসেন।
প্রকাশ সিকদারের ভাষ্য অনুযায়ী, পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তারা ইনস্টিটিউটের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন ওমরসহ কয়েকজনে ডেকে আনে। ছাত্রলীগ নেতারা তিন ছাত্রকে খাতা ও প্রশ্নপত্র ফেরত দিয়ে ফের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবি জানায়। প্রকাশ সিকদার অস্বীকৃতি জানালে তারা শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকিধমকি দেয়। খবর পেয়ে তিনজন বিভাগীয় প্রধান ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের খাতাগুলো ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন। খাতা ফেরত পেয়ে তিন ছাত্র তাদের পছন্দমতো আসনে বসে পরীক্ষা দেন।
ঘটনার পর প্রকাশ সিকদার তাকে হুমকি দিয়ে খাতা ফেরত দিতে বাধ্য করার বিষয়ে ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। রাতে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে নগরীর খুলশী থানায় জিডি করেন।
শাহদাত হোসেন ওমর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বলয়ের যুবলীগ নেতা মো. মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম