স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে বিরোধ নিরসনে ১৫ সাংগঠনিক থানায় ১৫টি ‘তদারকি কমিটি’ গঠন করেছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রের গঠন করে দেওয়া ‘রিভিউ কমিটি’ প্রথম সভায় বসে এই তদারক কমিটিগুলো গঠন করেছে।
শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর বহদ্দারহাটে নগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় বৈঠকে বসেন রিভিউ কমিটির ছয় নেতা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হওয়া বৈঠকটি শেষ হয় পৌনে ৯টার দিকে। মেয়র রেজাউল এতে সভাপতিত্ব করেন।
মেয়র রেজাউল বাদে কমিটির বাকি পাঁচ সদস্য হলেন— শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং সহসভাপতি নঈমউদ্দিন চৌধুরী ও জহিরুল আলম দোভাষ।
জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, নগর আওয়ামী লীগের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে ১৫টি থানা কমিটি করা হয়েছে। একজনকে আহ্বায়ক করে তিন জনকে সদস্য হিসেবে কমিটিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট আসনের সংসদ সদস্য কমিটিতে থাকবেন।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের সম্মেলন নিয়ে বিরোধ: বৈঠকে রিভিউ কমিটির ৬ নেতা
‘তদারকি কমিটি’ থানার অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটে সাংগঠনিক দুর্বলতা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। পাশাপাশি সংগঠনকে কীভাবে গতিশীল করা যায়, সেটিও খতিয়ে দেখে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দেবে। এ ছাড়া এরই মধ্যে হয়ে যাওয়া ইউনিট কমিটিগুলো নিয়ে যদি কোনো আপত্তি থাকে, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে রিভিউ কমিটিকে অবহিত করবে।
‘তদারক কমিটি’কে চলতি মাসের মধ্যে এই কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে বলে জানান মেয়র রেজাউল।
এর আগে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করে নগর আওয়ামী লীগ। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। এরই মধ্যে ১২০টিরও বেশি ইউনিটের সম্মেলন শেষ হয়েছে। তবে কয়েকটি ইউনিটে পাল্টাপাল্টি সম্মেলন হয়েছে। আবার কয়েকটি গোলযোগের কারণে স্থগিত করতে হয়েছে।
ইউনিটের পাশাপাশি গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু ইউনিট সম্মেলন নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর কেন্দ্র থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের সম্মেলন: ‘একক কর্তৃত্বে’র লাগাম টানল কেন্দ্র
তৃণমূলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে পরস্পরবিরোধী দু’টি ধারার বিরোধ আরও জোরালো হয়। দু’টি ধারার একটির নেতৃত্বে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন আছেন। আরেকটি ধারা প্রয়াত নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিউদ্দিনপুত্র মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাদের সঙ্গে আছেন।
ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকেই মহিউদ্দিনের অনুসারীরা অভিযোগ করে আসছিলেন, মাহতাব-নাছিরের একক কর্তৃত্ব ও ইচ্ছায় তৃণমূলে সম্মেলন হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিটে মহিউদ্দিন অনুসারী নেতাকর্মীদের বিভিন্ন কৌশলে সদস্য করা হয়নি। তাদের বাদ দিয়েই সম্মেলন করে এক নেতার অনুসারীদের মাধ্যমে কমিটি করে ফেলা হয়েছে। এছাড়া ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনের আগে সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির জন্য নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি তথ্য বিবরণী ফরম সরবরাহ করা হয়। সেটি নিয়েও আপত্তি তোলেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।
গত ২২ ডিসেম্বর মাহতাব-নাছিরের বিরোধী বলয়ের চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ্য নেতারা ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে ইউনিট সম্মেলন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ করেন। এরপরই কেন্দ্রীয় নেতারা ওয়ার্ড সম্মেলন বন্ধ রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। অভিযোগ জানানো নেতারা চট্টগ্রামে কয়েক দফা বৈঠক করে তাদের করণীয় নির্ধারণ করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা গত ১৬ জানুয়ারি জ্যেষ্ঠ নেতাদের ঢাকায় ডেকে বৈঠক করেন।
বৈঠকে এরই মধ্যে শেষ হওয়া ইউনিট সম্মেলন এবং দলের সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো পর্যালোচনার জন্য ছয় সদস্যের একটি ‘রিভিউ কমিটি’ গঠন করা হয়। এই কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে কেন্দ্রের কাছে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়।
এছাড়া ‘রিভিউ কমিটি’র তত্ত্বাবধানে প্রত্যেক থানার জন্য নগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে একটি করে টিম গঠনের জন্য বলা হয়, যারা থানা ও ওয়ার্ডে সম্মেলনের সম্ভাব্যতা ও বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে রিভিউ কমিটির কাছে প্রতিবেদন দেবে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর