চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে বাধার পর সড়ক দখল করে রাখা হকারদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে স্টেশন রোড হয়ে আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
হকারদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। হকারদের হামলায় অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরীর কোতোয়ালী থানার স্টেশন রোডে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়, পরবর্তী সময়ে যা নিউমার্কেট মোড় থেকে ফলমণ্ডি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
গত ৮ ডিসেম্বর নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন, রিয়াজউদ্দিন বাজার, পুরাতন রেলস্টেশন, ফলমণ্ডি, তামাকমুণ্ডি লেইন ও আমতলসহ প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা থেকে হাজারেরও বেশি হকার উচ্ছেদ করে সিটি করপোরেশন। এসব এলাকার ফুটপাত থেকে সড়কের একাংশ দখলে নিয়ে এসব হকার পোশাক, মোবাইল, জুতা, তৈরি খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে আসছিল। ফুটপাত ও সড়কে বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কারণে এসব এলাকায় নিয়মিত যানজট লেগে থাকতো।
প্রথম দফায় সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানের সময়ও হকাররা বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ নিয়ে হকাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। পরদিন হকারদের কেউ কেউ আবারও বসতে চাইলে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। কিন্তু গত তিনদিনে আবারও হকাররা সড়ক ও ফুটপাতের বিভিন্ন অংশ দখলে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় হকারদের পুনর্দখল ঠেকাতে সোমবার দুপুর আড়াইটায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। চসিকের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা, শাহরিন ফেরদৌসী ও আরাফাত রহমান সানিসহ শতাধিক পুলিশ এবং চসিকের কর্মী অভিযানে অংশ নেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্টেশন রোডে ফুটপাতে অবৈধভাবে একটি জেনারেটর বসিয়ে অবৈধ দোকানপাটগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। প্রথম দফা উচ্ছেদ অভিযানের সময় সেটি সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও নেওয়া হয়নি। এ জন্য আজ (সোমবার) উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতেই এর মালিককে ডেকে জরিমানা করা হয়। এরপর যখন জেনারেটরটা সিটি করপোরেশনের লোকজন গাড়িতে তুলছিলেন, তখন অতর্কিতে হামলা শুরু হয়।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ২০০-৩০০ লোক লাঠিসোঠা নিয়ে আক্রমণ করে। তারা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। তখন ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের মধ্যে নিউমার্কেট মোড় থেকে আমতল এবং কোতোয়ালি মোড় ও ফলমণ্ডির দিকে প্রায় আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মার্কেটের ফটকও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ঘটনার সময় নিউমার্কেট মোড়ের উত্তরে মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলের সামনে উচ্ছেদের প্রতিবাদে সমাবেশ করছিল চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতি। সেখানে শতাধিক হকার জড়ো হয়েছিল। তাদের অনেকেই সেখান থেকে গিয়ে হামলায় অংশ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
চট্টগ্রাম ফুটপাত হকার্স সমিতির সভাপতি নুরুল আলম লেদু অবশ্য দাবি করেছেন, হামলা এবং গাড়ি ভাংচুরে ঘটনায় হকারদের কেউ জড়িত নন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, তামাকমুণ্ডি, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার বণিক সমিতি, ব্যবসায়ীরা চান না, ফুটপাতে কেউ ব্যবসা করুক। গরিব মানুষ কম দামে কাপড় কিনতে পারবে, এটা তারা চান না। এজন্য তারা নিজস্ব লোক লেলিয়ে দিয়ে হামলা করেছে, যাতে হকারদের ওপর দায় পড়ে।’
আলাপ-আলোচনা ছাড়া হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদ জানিয়ে লেদু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের ১৭ বছরের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সাহেবও হকারদের নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। কিন্তু সেটা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে। হকাররা কতক্ষণ বসতে পারবেন, সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র সাহেব যেটা করছেন, উনি আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনা করেননি। একজন হকারের সঙ্গেও বসেননি। এতগুলো মানুষের রুটি-রুজি উনি একদিনে বন্ধ করে দিয়েছেন।’
চসিকের ম্যাজিস্ট্রেট চৈতী সর্ববিদ্যা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আকস্মিক হামলায় চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের চার কর্মী আহত হয়েছেন। দু’টি ডাম্প ট্রাক, একটি পিকআপ ও চসিকের বিদ্যুৎ উপ-বিভাগের একটি এরিয়াল লিফট ভাংচুর করে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘হামলার পরও রাস্তা, নালা ও ফুটপাত দখল করা প্রায় ৩০০ অবৈধ স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করেছি। দখলদাররা বাধা দিলে আমরা পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। পুনর্দখল ঠেকাতে আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।’
চসিক মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম সারাবাংলাকে জানান, হকাররা উচ্ছেদ অভিযানে নেওয়া চসিকের অন্তত পাঁচটি যানবাহন ভাংচুর করেছে। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘হামলায় কারা জড়িত সেটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
The post চসিকের উচ্ছেদ অভিযানে হকার-পুলিশ সংঘর্ষ appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.