সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, দেশ এগিয়ে যায় বলে দাবি করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জনতাই আমাদের মূল শক্তি। কাজেই জনতার শক্তিতেই বলীয়ান হয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনের জাতীয় কমিটির সভার শুরুতে তিনি এ কথা বলেন। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সভা পরিচালনা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণভবনের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় পৃথক প্যান্ডেল করে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাতীয় কমিটির সদস্যসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা উপস্থিত আছেন।
দলের গঠনতন্ত্রের ১৭ (ক) ধারায় বলা আছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি জাতীয় কমিটি থাকিবে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা হইতে একজন করিয় সদস্য স্ব স্ব জেলা ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল কর্তৃক জাতীয় কমিটিতে নির্বাচিত হইবেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মকর্তা, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যবৃন্দ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি কর্তৃক মনোনীত ২১ জন সদস্য এবং উপযুক্তভাবে নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যবৃন্দকে লইয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি গঠিত হইবে। জাতীয় কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা হইবে ১৮০ জন, যার মধ্যে ৮১ জন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, ৭৮ জন সাংগঠনিক জেলা প্রতিনিধি এবং ২১ জন সভাপতি কর্তৃক মনোনীত।’
আগামী ২৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আসন্ন ২২তম জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে এই বর্তমান কমিটির মেয়াদে জাতীয় কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে আসন্ন সম্মেলনের বাজেট পেশ করা হয় এবং যারা বিভিন্ন সাংগঠনিক অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার করে আবেদন করেছেন, তাদের বিষটিও তোলা হয়। এছাড়া আগামী জাতীয় কাউন্সিল সম্পর্কে জাতীয় কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে, এদেশ এগিয়ে যাবে। তবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা করতে হবে। তার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগে থেকে মানুষকে সাবধান করে দিচ্ছি। আমরা সঞ্চয়ের কথা বলছি, সাশ্রয়ের কথা বলছি। বিদ্যুৎ-পানি থেকে শুরু করে আমাদের সবকিছু সাশ্রয় করতে হবে। আমাদের জ্বালানি তেল সাশ্রয় করতে হবে। কারণ, অনেক দাম দিয়ে আমাদের এখন জ্বালানি কিনতে হচ্ছে। প্রচণ্ড চাপ পড়েছে বাজেটের ওপর। তারপরও আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি।
জাতির পিতা এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, এদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে- এমন দৃঢ়তা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আজ যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদা নিয়েই চলবে। স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী- যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন; আমরা তাদের বিচার করছি। জাতির পিতার হত্যাকারীদের জিয়াউর রহমান অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। আর আলবদর-রাজাকারদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আমরা তাদের বিচার করেছি।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াও খুনি রশিদ-হুদাকে ভোট চুরি করে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। তাদেরও বিচার করেছি। তাদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকায় খুনি রাশেদ, কানাডাতে খুনি নূর, পাকিস্তানে খুনি রশিদ আর ডালিম আশ্রয় নিয়ে আছে। মোসলেম উদ্দিন বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। কখনো তার হদিস পাওয়া যায়, কখনো যায় না। কিন্তু প্রতিটি দেশের সরকারের কাছে আমরা আবেদন করেছি তাদের ফিরে আনতে। এরা জাতির পিতার হত্যাকারী, নারী হত্যাকারী, শিশু হত্যাকারী- এদেরকে ফেরত দিতে হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের কাছ থেকে আমরা সেই সাড়া পাই না।’
‘আমরা যারা আপনজন হারিয়েছি, আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হল, সেই বিবেচনা তাদের নেই। কিন্তু ওই খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে তারা ব্যস্ত। কারণ তাদের ফাঁসির হুকুম হয়েছে। সেজন্য তাদের অধিকার রক্ষা করে যাচ্ছে। এটাই হচ্ছে আমাদের দুভার্গ্যের বিষয়’- এভাবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সরকার ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে বিচারহীনতার কালচার শুরু করেছিল জিয়াউর রহমান; সেখান থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রত্যেকটা সেক্টরের উন্নতি করেছি। জাতির পিতার এই বাংলাদেশে একটি মানুষও অভুক্ত থাকবে না। একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ তার মৌলিক অধিকার পাবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশ আজ উন্নয়নশীল হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। সেই পরিকল্পনাও তৈরি করে আমরা তা কার্যকর করতে শুরু করেছি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ রুখতে পারবে না।’
সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম