মোঃ আল-আমিন,শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের জাজিরা সদর ইউনিয়নের চর জাজিরা গফুর মোল্লার কান্দি গ্রামের এক প্রবাসী মহিলা ও তার পরিবার যৌতুক না দেয়ায় গৃহবধুকে হত্যাচেষ্টা এবং তার স্বামী-শশুড় বাড়ির লোকজন কর্তৃক ব্যাপক হয়রানির শিকার বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বাবাকে কারাবাস পর্যন্ত করতে হয়েছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী খালেদা আক্তার বাদী হয়ে জাজিরা থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছিলেন ইতিপূর্বে।
ভুক্তভোগী খালেদা আক্তার(৩১) জানান, গত প্রায় ১৩ বছর পূর্বে তার সাথে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নের জানখার কান্দি এলাকার আজমল খানের ছেলে বাবুল খান(৪৫) এর সাথে। তাদের সংসারে সাদিক(১২) এবং সাইব(৬) নামে দুইটি ছেলেও রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তাদের সংসার জীবন ভালোই চলছিলো। খালেদা আক্তারকেও ইতালিতে নিয়ে যায় তার স্বামী বাবুল খান। যদিও খালেদা আক্তার তাতে রাজী ছিলেননা।
সেখানে গিয়ে তারা উভয়ে মিলে কাজ-কর্ম করে দেশে টাকা-পয়সা পাঠায় এবং দু’জনের নামেই জমিজমা কেনা হয় জাজিরায়। এ নিয়েই বিপত্তি বাঁধে তাদের মধ্যে। ছবিতে উল্লেখিত সদস্যগনসহ পরিবারের অন্যান্য কয়েকজন সদস্যের প্ররোচনায় পরে তাদের নিয়ে একসময় খালেদা আক্তারের স্বামী তাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে এবং তার পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবী করে।
যা নিয়ে ওইসময় জাজিরা থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেন ভুক্তভোগী খালেদা আক্তার। এছাড়া ভুক্তভোগী খালেদা আক্তারকে মারধর করায় ইতালির আদালতেও হয়েছে একটি মামলা। কিন্তু বাবুল খান ও তার পরিবারের লোকজন খালেদা আক্তার ও তার পরিবারকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বাবা-ভাইসহ তাদের ৫ জনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর কোর্টে ৩/২৩ নম্বরের একটি মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছেন বলে অভিযোগ করেন খালেদা আক্তার। এছাড়া আরও একটি মিথ্যা সাধারণ ডায়েরিসহ বিভিন্নভাবে তার পরিবারের লোকজনকে ব্যাপক হয়রানি করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তার।
খালেদা আক্তারের ভাই আল আমিন মোল্লা(৩৩) জানান, তার বোনের সাথে তার বোন জামাইদের সমস্যার বিষয়ে তিনি কিছু না জানলেও তাকে আসামি করে মামলা দিয়ে ব্যাপকভাবে হয়রানি করে যাচ্ছে বাবুল খান ও তার পরিবার। তিনি বলেন, আমি জাজিরা বাজারে ব্যবসা করে চলি, তাদের কারণে আমি ঠিকমত আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বসতে পারছিনা। আমি চাই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমাদের এই হয়রানি থেকে মুক্তি দেয়া হোক।
এদিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাবুল খানের পরকিয়ার বেশ কিছু তথ্য। একটি অডিওতে শোনা যায়, তিনি বাসায় একা রয়েছেন এবং কোন এক মেয়েকে তার বাসায় আসতে আহবান করছেন। এছাড়া তিনি অশ্লীল ছবিও পাঠিয়েছেন তার নিজস্ব ইমু একাউন্ট থেকে। যা নিয়ে খালেদা আক্তার বলেন, এই সমস্ত বিষয়গুলো আমি জেনে যাওয়ায় এবং তার প্রতিবাদ করায়ই আমার ও আমার পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার বোন জামাই প্রাইমারি শিক্ষক জাহিদ মাষ্টার ও অন্যান্যদের পরামর্শে আমাদের বিরুদ্ধে এই হয়রানির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
এছাড়া খালেদা আক্তারকে মারধর করে তার নামে থাকা একটি ডিপিএস থেকে জোরপূর্বক প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা তুলে নেয় এবং খালেদা আক্তারের নামে থাকা কিছু জমিও তাকে মারধর করে লিখে নেয়ার চেষ্টা করে। এমনকি একাধিকবার হত্যার চেষ্টাও করা হয় খালেদা আক্তারকে। এছাড়া তার বাবার বাড়ি থেকে দেয়া সকল স্বর্ণালঙ্কারও ছিনিয়ে নিয়ে যায় বাবুল খান ও তার পরিবার।
এ বিষয়ে খালেদা আক্তারের স্বামী বাবুল খানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি, তবে তার ছোট ভাই হৃদয় খান আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে খালেদা আক্তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে তাদের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করার পাল্টা অভিযোগ করেন।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা ভুক্তভোগী খালেদা আক্তারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ ইতিপূর্বেই পেয়েছি। তবে অভিযোগ দেয়ার পরে আর তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শুনেছি খালেদা আক্তার ইতালিতে চলে গিয়েছেন। তার সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।