মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
লক্ষ্মীপুর পাসপোর্ট অফিসে সেবার আমূল পরিবর্তন করলেন কর্মকর্তা এ. কে. এম. আবু সাঈদ দৌলতপুর সীমান্তে বিজিবির অভিযানে লক্ষাধিক টাকার মাদক ও নকল সিগারেট জব্দ Sherlyn Chopra Reveals She’s Getting Breast Implants Removed: ‘To Bring Back Stamina Into My Life’ | Bollywood News অ্যাসোসিও অ্যাওয়ার্ড পেল বাংলাদেশি ২ প্রতিষ্ঠান কালিয়াকৈরে শ্রমিক দলের বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় Ian Botham slams England’s lack of preparation before Ashes; batting coach Marcus Trescothick calls it ‘way of the modern game’ | Cricket News Dharmendra Health Update: Esha Deol’s Former Husband Bharat Takhtani Reaches Breach Candy Hospital | Bollywood News জবি ছাত্রদলের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১২ Chess World Cup: ‘Where are the bedbugs?’ Dutch No. 1 Anish Giri lashes out at criticism around playing conditions in Goa | Chess News মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পিরিয়ড এবং সমাজ

প্রতিবেদকের নাম
  • আপডেট সময়: শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০২২
  • ১০১৩ সময় দেখুন
পিরিয়ড এবং সমাজ

জাকিয়া জিহান নিপু:

বাংলাদেশের সিংহভাগ নারীর বসবাস গ্রামে এবং সেখানে পিরিয়ড হলো এক কান লাল হয়ে যাওয়ার মতো লজ্জার বিষয়। আমাদের দেশের ঐ প্রান্তিক নারীরা শহুরে নারীদের মতো অত আধুনিক নন, অন্তত এ বেলায় তারা আজও আপাদমস্তকে বইয়ের ঐ সলজ্জ রমণীই রয়ে গেছেন। পিরিয়ড নিয়ে কথা বলতে তারা যে কি পরিমাণ সংকোচবোধ করেন, তা তাদের সাথে সরাসরি না মিশলে ঠিকঠাকভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝানো কঠিন। আমি স্বচক্ষে এও দেখেছি যে আমাদের দেশে যখন টেলিভিশনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন চলে; আমার দেশের প্রান্তিক মা মেয়েরা তখন তা নীরবে এড়িয়ে যায়, ক্ষেত্রবিশেষে শহুরেরাও। অথবা মাধ্যমিকের বইয়ের পাতায় যখন জেনারেশন ব্রেক থ্রু’র পাঠ সামনে আসে, আমাদের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের চোখ তখন অবনত হয়ে যায়, তারা এক মহাবিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। পিরিয়ডের যন্ত্রণায় কাতর হলে এখানকার নারীরা এখনো সোজা চোখে সরাসরি বলতে পারে না, “পিরিয়ড হয়েছে, তাই শরীর খারাপ লাগছে”। বরং অন্য কোনো অজুহাত দিয়ে বিষয়টা তারা বেমালুম এড়িয়ে যায়। কিন্তু এরকম অভ্যাসগুলি সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা উচিত এবং নারীরা যাতে সাবলীলভাবে পিরিয়ড বিষয়ে কথা বলতে পারে, তেমন পরিবেশ সৃষ্টি হওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু স্যানিটারি প্যাডের সহজলভ্যতা শহরাঞ্চলে বেশি, সেহেতু সেই শহরাঞ্চলেও এই বস্তু কিনতে গেলে আরেক কিসিমের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় মেয়েদের। দেখা যাচ্ছে যে “প্যাড দিন” শব্দদ্বয় শোনার পর দোকানদার কিংবা দোকানে উপস্থিত লোকজন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। অপরদিকে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে, আমাদের দেশের ৯৯.৯৯% দোকানি ঐ স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটটি অত্যন্ত সন্তর্পণে এমনভাবে একটা কাগজে মুড়ে দেন যেন ওটা কোনো স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট নয়, বরং এক আস্ত গুপ্তধন যা লোকের দেখা মানা! একটা ঔষধ দেয়ার সময় তারা যে সহজতা এবং স্বাভাবিকতার সাথে প্যাকেট করে, কেন যেন ঐ স্যানিটারি ন্যাপকিনের বেলায় তারা সেটা পারেন না বা চান না। কিন্তু এই অসুস্থ সংস্কৃতিটা থেকে বেরিয়ে আসা ভীষণ জরুরি, ভীষণ।

তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে মুড সুইং শব্দটার ব্যবহার খুব শোনা যাচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বাধিক।এটাকে নিয়ে চাইলেই ঠাট্টা তামাশা করা যায়। অথচ এটা কোনো খেলো করার বিষয় নয়। পিরিয়ডের সময় যে অমানুষিক শারীরিক এবং মানসিক কষ্ট, উথাল-পাতাল পরিস্থিতি নারীকে সহ্য করতে হয়, তা ঐ তথাকথিত শিক্ষিত বিদ্রুপকারীদের ভাবনারও বাইরে। আমদের দেশের অধিকাংশ পুরুষ নারীর এই অসুস্থতাকে অতটা তীব্রভাবে উপলব্ধি করেন বলে মনে হয় না। সেক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের মা-বাবারা যদি তাদের কন্যাসন্তানদের পাশাপাশি পুত্রসন্তানদেরকেও পিরিয়ড বিষয়ে সঠিক শিক্ষা প্রদান করেন, তাহলে তার সন্তান কখনো এমন কুৎসিত রসিকতায় লিপ্ত হবে বলে আমার মনে হয় না। বরং নারীর প্রতি নিজে সংবেদনশীল আচরণ করবে, অন্যকেও সংবেদনশীল আচরণ করতে উৎসাহিত করবে।

সর্বোপরি, পিরিয়ড কোনো নিষিদ্ধ বিষয় না বরং খুবই স্বাভাবিক ও সার্বজনীন একটা প্রক্রিয়া। এই পিরিয়ডের কারণেই আপনার, আমার এবং আমাদের জন্ম। সুতরাং এটাকে ট্যাবু হিসেবে না রেখে রাষ্ট্রের উচিত, পিরিয়ডের পণ্যগুলিকে পিংক ট্যাক্সের বেড়াজাল থেকে অবমুক্ত করে সকলের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাওয়া মা, বোন, স্ত্রী, প্রেমিকা কিংবা অন্য যেকোনো নারীর পানে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, পিরিয়ড সংক্রান্ত যাবতীয় কুসংস্কারকে সমূলে উপড়ে ফেলার জন্য নিরন্তর পিরিয়ড নিয়ে কথা বলা এবং স্ব স্ব পরিবারকে নারীর পিরিয়ডবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা। কারণ, আমার মনে হয় নারীর পিরিয়ড হলো একটা সমাজকে চেনার জন্য মোক্ষম দর্পণ।

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

এই বিভাগের আরও খবর