সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সা ধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এই দেশের রিজার্ভ গিলে খেয়েছে। বিএনপি এই দেশের অর্থনীতি গিলে খেয়েছে। বিএনপি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে ফেলেছে। বিএনপি এ দেশের স্বাধীনতার আদর্শকে গিলে ফেলেছে। এবার যদি ক্ষমতায় যেতে পারে বিএনপির দেশশুদ্ধ গিলে ফেলবে। সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁও শেরেবাংলা নগর পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সরকারবিরোধী অপরাজনীতির বিরুদ্ধে রাজপথে শক্তির মহড়া দিতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
শনিবার দুপুর ২টার পর রাজধানীর আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে, রংপুরে রং-বেরঙের নাটক চলছে। তিনদিন আগে থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে স্টেজে শুয়ে আছেন, মাঠে শুয়ে আছেন, রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের নামে টাকা আসছে, আর তারা টাকার ওপর শুয়ে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার চেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। গত ৪৭ বছরে দেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাহসী নেতার নামও শেখ হাসিনা।’
বিএনপির শাসনামলে চার বিলিয়ন রিজার্ভ থাকার প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এই দেশের রিজার্ভ গিলে খেয়েছে। বিএনপি এই দেশের অর্থনীতি গিলে খেয়েছে। বিএনপি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে ফেলেছে। বিএনপি এ দেশের স্বাধীনতার আদর্শকে গিলে ফেলেছে। এবার যদি ক্ষমতায় যেতে পারে বিএনপির দেশ শুদ্ধ গিলে ফেলবে৷ সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে এই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘মরণ কামড় আর জীবন কামড় যে যেই কামড়েই দেন আমি ঢাকা জেলার সম্মেলন থেকে বলছি, আন্দোলনে এলে শান্তিপূর্ণভাবে আসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামান। এই ভূত নামিয়ে ফেলুন। তত্ত্বাবধায়ক আর হবে না, আদালত মিউজিয়ামে পাঠিয়েছে। আমাদের দোষ কি? আমরা তো নিষিদ্ধ করিনি? উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছে? সেই তত্ত্বাবধায়ক না হলে নির্বাচনে যাবেন না? যাবেন, গাধা পানি ঘোলা করে খায়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সময় এলে দেখা যাবে নেতাটা কে? মুচলেকা দিয়ে গোপনে ২০০৮ সালে জীবনে আর রাজনীতি করব না লন্ডনে চলে গেছে কে? সেই তারেক রহমান হচ্ছে ফখরুলের নেতা। ফখরুলকে ফরমাশ দেয় লন্ডন থেকে। ফখরুলকে যেমনি নাচায় তেমনি নাচে, ফখরুলের কি দোষ?’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘হাওয়া ভবন আর খাওয়া ভবন আবারও করবেন? সে জন্য টেকব্যাক বাংলাদেশ? আবারও ভোট চুরি করবে? আবারও গণতন্ত্র হরণ করবে? আবারও খুন করবে? বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, শেখ হাসিনাকে একুশে আগস্ট হত্যা করতে চেয়েছিল এই বিএনপি। এই খুনিদেরকে কোনোদিন বাংলার মানুষ ভোট দেবে না, এই খুনিদের সঙ্গে জনগণ নেই।’
‘যত নাচানাচি লাফালাফি করেন কর্মীদের বুঝাচ্ছেন ক্ষমতায় আসছি! আসি আসি! এত আহ্লাদ? এত সুখ, দুবাই থেকে টাকা আসছে আমরা খবর পাচ্ছি? কারা পাঠায় খোঁজ পেয়েছি? ব্যবস্থা হবে।’ বলেও জানান তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যত চেঁচামেচি করুক না কেন, যত সমাবেশ করুক; বাংলাদেশে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে।’
‘বিএনপি আজকে তাফালিং করতেছে কেন জানেন? জানে, ভোট হলে শেখ হাসিনার সঙ্গে হেরে যাবে। হেরে যাবে ফখরুল। রেগে গেলে আরও হেরে যাবে, আর রাগ করবেন না’ বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কত লোক হয়েছে তা মির্জা ফখরুলকে তা টেলিভিশনে দেখার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব মিটিংয়ে যদি থাকেন একটু উঠে গিয়ে টেলিভিশনে দেখুন, ঢাকার ছবিও দেখুন রংপুরের ছবিও দেখুন। আপনাদেরটাও দেখুন আমাদেরটাও দেখুন। এখানে তো শেখ হাসিনা নেই।’
খেলা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে। ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
পরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয় ঘটিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি পদে বেনজির আহমেদকে বহাল রেখে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সম্মেলন মঞ্চে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই- এই পাঁচ উপজেলা নিয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ গঠিত।
সম্মেলনকে ঘিরে দোহার-নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী নেতাদের অনুসারীরা বাস ট্রাক পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে বাদ্য বাজনা তথা ব্যান্ড পার্টিসহ মিছিল সহকারে সম্মেলনস্থলে যোগ দেন।
ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম উপস্থিত নেতাদের নিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। জেলা নেতারাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। সম্মেলন মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে বেনজির আহমেদকে সভাপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের ঢাকা জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
সারাবাংলা/এনআর/একে