ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বিতরণ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী না দিলেও দলটির চার নেতা এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন জাতীয় পার্টির এক প্রার্থী।
অন্যদিকে ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৯ জন ও ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬৯ জন রয়েছেন ভোটের লড়াইয়ে। তবে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ফরহাদ আলমকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরীর তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন। এর পরপরই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করে দেন।
ময়মনসিংহ সিটির বর্তমান মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরামুল হক টিটু এবারও প্রার্থী হয়েছেন এই নির্বাচনে। তিনি পেয়েছেন ঘড়ি প্রতীক। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম পেয়েছেন ঘোড়া প্রতীক। শহর আওয়ামী লীগ সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কি টজু পেয়েছেন হাতি প্রতীক। আর কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হক পেয়েছেন হরিণ প্রতীক। জাতীয় পার্টির শহীদুল ইসলাম স্বপন মন্ডল নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকি চারজন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেও দলটি দলীয়ভাবে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে প্রতীক বরাদ্দের শুরুতে মেয়র পদে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক দেওয়া হয়। এ সময় ইকরামুল হক টিটু ও সাকেদুল হক খান— দুজনেই হাতি প্রতীক চান। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের সমঝোতা করে নিতে বলেন। সমঝোতা না হলে লটারির মাধ্যমে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান।
পরে ইকরামুল নিজেই ঘড়ি প্রতীক চেয়ে নেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা তাকে ঘড়ি ও সাদেকুলকে হাতি প্রতীক বরাদ্দ দেন। আওয়ামী লীগের বাকি দুই নেতার মধ্যে এহতেশামুল আলম ঘোড়া প্রতীক বেছে নেন, রেজাউল হক পান হরিণ। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী শহিদুল ইসলামকে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা প্রচার ও জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। ইকরামুল হক টিটু দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করেন। মিছিল নিয়ে শহর ঘুরে সবার দোয়া কামনা করেন। ফের জয় পেলে মেয়র হিসেবে প্রথম মেয়াদের অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম ঘোড়া প্রতীক নিয়ে শুরু করেছেন জনসংযোগ। সিটি করপোরেশন হলেও ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদল হয়নি জানিয়ে তিনি তাদের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেন। শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাদেক খান মিল্কী টজু প্রতীক পেয়ে অডিটোরিয়াম থেকেই হাতি প্রতীক নিয়ে মিছিল নিয়ে বের হন। হরিণ প্রতীক নিয়ে প্রচার শুরু করেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সাবেক সদস্য কৃষিবিদ ড. রেজাউল হকও।
মেয়র প্রার্থীদের মতো সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রার্থীরাও নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন।
ময়মনসিংহের দ্বিতীয় সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে অধ্যাপক গোলম ফেরদৌস জিলু বাছাইয়ে বাদ পড়েন। বাকি ছয়জনের মধ্যে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন নেন অ্যাডভোকেট ফারামার্জ আল নূর রাজীব। ফলে পাঁচজন প্রার্থী ময়মনসিংহের নগরপিতা হতে লড়াই করছেন।
এই নির্বাচনে ৩৩টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই ও আপিল শেষে বৈধ প্রার্থী ছিলেন ১৫৮ জন। এর মধ্যে ৯ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে ৩৩ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে এখন মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ১৪৯ জন। এর মধ্যে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে কেবল ফরহাদ আলমের মনোনয়নপত্রই বৈধ হওয়ায় তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ভোট হবে ৩২টি ওয়ার্ডে।
এদিকে ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ৬৯ জন। তাদের কারও মনোনয়নপত্রই যাচাই-বাছাইয়ে বাতিল হয়নি। তাদের কেউ প্রার্থিতাও প্রত্যাহার করেননি। ফলে ৬৯ জনের সবাইই ভোটের মাঠে লড়াই করবেন।
দেশের অষ্টম বিভাগ ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর সিটি করপোরেশন ঘোষণা করা হলে পৌর মেয়র থেকে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান মো. ইকরামুল হক টিটু। ২০১৯ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনিই। এবার এই সিটির দ্বিতীয় নির্বাচন আগামী ৯ মার্চ।
বর্তমান সিটি করপোরেশনে ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৬ জন। ৯ মার্চের নির্বাচনে ভোটারদের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট দিতে হবে। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৮টি।
The post মসিক নির্বাচন: প্রতীক পেয়ে প্রচারে ঘড়ি-ঘোড়া-হাতি-হরিণ-লাঙ্গল appeared first on Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment.