স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুরো স্থাপনা না ভেঙে নতুন শহিদ মিনারকে দৃশ্যমান করতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে ১০টি সুপারিশ জমা দিয়েছে এ সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি। এতে সদ্যনির্মিত শহিদ মিনারের কয়েকটি দেয়াল ভেঙে ফেলার পাশাপাশি একটি নতুন র্যাম্প নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মিত স্তম্ভের উচ্চতাও বাড়াতে বলা হয়েছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) টেকনিক্যাল কমিটি চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে সুপারিশ জমা দেয়।
কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যে খুব সন্তুষ্ট হয়ে সুপারিশ করেছি তা নয়। যে শহিদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে সেটি জনসাধারণের জন্য সহজগম্য নয়। এটি দৃশ্যমান নয় বিধায় জনসাধারণের সঙ্গে এর বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। যেহেতু সরকার একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করেই ফেলেছে, সেজন্য মন্দের ভালো হিসেবে ১০ দফা সুপারিশ করেছি।’
২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কে সি দে রোডে মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ভেঙে একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স বা সাংস্কৃতিক বলয় নির্মাণ করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে এর কাজ শুরু হয়। নির্মাণ করা হয়েছে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আটতলা অডিটরিয়াম ভবন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি উন্মুক্ত গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ এবং ক্যাফে ও মিনি মিউজিয়াম। গত বছরের ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন।
২০২১ সালের অক্টোবরে আগের শহিদ মিনার ভাঙার আগে সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। তারা দাবি করেছিলেন, বর্তমান অবয়ব ঠিক রেখেই সংস্কার করতে হবে। তখন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, শহিদ মিনারের মূল নকশার কোনো পরিবর্তন করা হবে না।
সংস্কার কার্যক্রম শেষে খুলে দেওয়ার পর গত বছরের ১৮ নভেম্বর মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়ে শহিদ মিনার পরিদর্শন করেন। এ সময় শহিদ মিনার দেখে সংস্কৃতিকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের বক্তব্য, নতুনভাবে নির্মাণের পর শহিদ মিনারটিকে ‘লোকচক্ষুর আড়ালে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, আবেগ ও নান্দনিকতা কিছুই ফুটে ওঠেনি। এ প্রেক্ষাপটে পুরো স্থাপনাটি ভেঙে নতুনভাবে শহিদ মিনার নির্মাণের দাবি ওঠে।
এ অবস্থায় শহীদ মিনারের ত্রুটি চিহ্নিত করে সুপারিশ নির্ধারণের জন্য গত জানুয়ারিতে ১৬ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি প্রায় একমাস ধরে যাচাই-বাছাইয়ের পর ১০টি সুপারিশ করেছে।
প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার সারাবাংলাকে জানান, নতুন নির্মিত শহিদ মিনারের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অর্থাৎ থিয়েটার ইনস্টিটিউটসংলগ্ন স্থানে একটি র্যাম্প নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। র্যাম্পের পেছনে কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, শিমুল জাতীয় দেশীয় গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
শহিদ মিনারের উত্তর প্রান্তে নির্মিত মুক্তমঞ্চের পাশে নির্মিত গ্রিন রুম ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে। মূল স্থাপনার দুই পাশে নির্মিত দেয়ালও অপসারণ করতে বলা হয়েছে। নির্মিত সুড়ঙ্গের মাঝামাঝি দিয়ে শহিদ মিনারে ওঠার একটি পথ তৈরির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমে পুকুর সদৃশ স্থাপনাটি অপসারণ করে সেখানে জনসাধারণের একত্রিত হওয়ায় জায়গা তৈরি করতে বলা হয়েছে।
শহীদ মিনারের চারটি স্তম্ভের মধ্যে মূল স্তম্ভের উচ্চতা বাড়িয়ে অন্তত ৫২ ফুট করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি স্তম্ভগুলো মূল স্তম্ভের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সুবিন্যস্ত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মূল বেদির সামনে ফুলের গাছ লাগানোর যেসব বেড নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলোর সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
চসিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মেয়র সুপারিশগুলো গ্রহণ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘মেয়র মহোদয় আমাদের বলেছেন, কমিটির সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেবেন। মন্ত্রণালয় যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে শহিদ মিনারকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ নেন, সে বিষয়ে তিনি সচেষ্ট থাকবেন। আর শহিদ মিনার দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় দিবসে সেখানে শ্রদ্ধা না জানানোর বিষয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের যে দাবি, তার সঙ্গে মেয়রও একাত্ম আছেন এবং থাকবেন।’
কমিটির সদস্যদের মধ্যে গণপূর্ত অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম খান, নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, স্থপতি আশিক ইমরান, সোহেল মোহাম্মদ শাকুর ও চসিকের সহকারী স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর