লাইসেন্স বিহীন বিআরটিসির ৫৫ বাস!
ভারতের অশোক লেল্যান্ড ও টাটার কাছ থেকে সম্প্রতি ৬০০টি নতুন বাস কিনেছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। বাসগুলো সংস্থাটির বহরে যুক্ত হওয়ার ছয় মাস পার হতে চলল। তবে এর মধ্যে ৫৫টি বাসের এখনো নিবন্ধন হয়নি। সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন ছাড়া কোনো ধরনের মোটরযান রাস্তায় চলার নিয়ম না থাকলেও বিআরটিসির নিবন্ধনহীন এই ৫৫টি বাস বিভিন্ন রুটে চালানো হচ্ছে।
বিআরটিসির কর্মকর্তাদের দাবি, বাসগুলো নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দুটি আঞ্চলিক অফিসে কিছু জটিলতার কারণে বিলম্বিত হচ্ছে নিবন্ধন সনদপ্রাপ্তি। গত বছর অশোক লেল্যান্ডের ৩০০টি দ্বিতল ও ২০০টি এসি বাস কেনে বিআরটিসি। পাশাপাশি টাটার কাছ থেকে কেনা হয় আরো ১০০টি নন-এসি বাস।
গত বছর বাসগুলো সংস্থাটির বহরে যোগ হয়। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ৫৪৫টি বাসের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। নিবন্ধনের অপেক্ষায় থাকা বাসের সংখ্যা ৫৫। নিবন্ধন না থাকলেও এই বাসগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। বিআরটিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসগুলোর বেশির ভাগই চলছে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটে। নিবন্ধন ছাড়া চলাচল করা বাসগুলোর ৩৪টি এসি ও ২১ দ্বিতল।
নিবন্ধনহীন বিআরটিসির বাসগুলোতে ছয় ডিজিটের রেট্রো রিফ্লেকটিভ নম্বরপ্লেটের বদলে চার ডিজিটের বিশেষ নম্বর ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব বিশেষ নম্বর ব্যবহূত হচ্ছে বিআরটিসিতে বাসগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য। গতকাল ঢাকার বাংলামোটরে চোখে পড়ে নিবন্ধনহীন বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাস।
মতিঝিলগামী বাসটির সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সেটি এসেছে গাজীপুর থেকে। নিবন্ধনহীন বাস চালানোর বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারি বাস। সরকারি বাসের নিবন্ধন না থাকলেও সেটি চালানো যায়।’ বিষয়টি বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
তবে বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এমন কোনো নিয়মের কথা জানা যায়নি। সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) আমজাদ হোসেন বলেন, নিবন্ধন ছাড়া কোনো মোটরযানই রাস্তায় চলতে পারবে না। তবে বিআরটিসির যেসব বাস এখনো নিবন্ধন পায়নি, সেগুলো বিআরটিএতে নিবন্ধনের জন্য প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় আছে।
নিবন্ধন পেতে বিলম্ব হওয়ার জন্য বিআরটিএর আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, যে বাসগুলোর নিবন্ধন বাকি আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই গাজীপুর ডিপোর। বাসগুলো প্রথমে বিআরটিএর গাজীপুর অফিস থেকে নিবন্ধনের জন্য পাঠানো হয়। সেখানে বাসগুলোর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন বিআরটিএর কর্মকর্তারা।
তবে পরবর্তী সময়ে এ সিদ্ধান্ত বদলে বাসগুলো নিবন্ধনের জন্য ঢাকার ইকুরিয়া সার্কেল অফিসে পাঠানো হয়। তবে বাসগুলোর কাগজপত্রে গাজীপুর অফিসের পরিদর্শকদের স্বাক্ষর থাকায় ইকুরিয়া সার্কেল থেকে নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে না। নিবন্ধনহীন বাসগুলো অ্যাপ্লায়েড ফর রেজিস্ট্রেশন বা এএফআর দিয়ে চালানো হচ্ছে, যার মেয়াদ আগামী জুন পর্যন্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে নিবন্ধনহীন বাসগুলো রাস্তায় চালানোর বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাধারণ যাত্রীরা। ফার্মগেট-মতিঝিল রুটের নিয়মিত যাত্রী মনিরুল ইসলাম জানান, যেখানে সরকার ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের কথা বলছে, সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন করার কথা বলছে, সেখানে যখন কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি নিবন্ধন ছাড়াই চলাচল করে, তখন আইনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যায়। নিবন্ধন সনদ হাতে পাওয়ার পরই বিআরটিসির বাসগুলো রাস্তায় নামানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিআরটিসির বহরে বর্তমানে বাস আছে ১ হাজার ৮৩০টি। এর মধ্যে নতুন বাস ৬০০টি। নতুন-পুরনো মিলিয়ে সংস্থাটিতে সচল বাস আছে ১ হাজার ৫০৭টি। ২৪৮টি অচল ও ৭৫টি বাস রয়েছে হালকা ও ভারী মেরামতে। বেশির ভাগ বাসই চলাচল করছে রাজধানীতে। ঢাকায় চলাচল করা বাসের সংখ্যা ৭২৩। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন রুটে চলছে ৩৬৩টি। এর বাইরে ৯৬টি বাস দেয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি লিজে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সব মিলিয়ে ৩৮৪টি রুটে বাস সেবা পরিচালনা করছে বিআরটিসি। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা