সকলের জীবনেই সাফল্যের দেখা মেলা সম্ভব যদি না কিছু কিছু জিনিস সে একটু এড়িয়ে চলতে জানে। একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপই যে সব সময় সঠিক হবে এমনটা নয়। কিন্তু আমরা আমাদের স্বপ্নের রাস্তায় নামার পড় থেকেই নানা দিকের নানা বিষয়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা আমাদের সাফল্যের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাই।
কখনও কখনও এতটাই বিচ্যুত হয়ে যাই যে আমাদের আর আমাদের মূল পথে ফিরে আসতে পারি না। তাই আমাদের এখনই জেনে নেওয়া উচিৎ যে আসলে কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের সাফল্যের অন্তরায় এবং কীভাবে আমরা এর থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং আমরা নিজেদেরকে সাফল্যের দোয়ারে নিয়ে যেতে পারি।
১০। অন্যের কথায় কান না দিয়ে চলুনঃ আপনি যখনি কোন ভালো কাজে নামবেন অনেকই আপনাকে অনেক রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে চলবে, অনেকেই বলতে পারে আপনি ভুল করছেন। অনেকেই আপনাকে নানাভাবে বিচার করতে চাইবে, অনেকেই অনেক নেগেটিভ কথা বলে আপনার রাস্তায় বড় একটা দেয়াল তুলে দেবার চেষ্টা করবে। কিন্তু আপনাকে এসব এড়িয়ে চলতে জানতে হবে। আফ্রিকান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন – প্রতিটি কাজই অসম্ভব যতক্ষণ না সেটা সম্ভব করা হচ্ছে। তাই যে আপনাকে যাই বলুক না কেন, নিজের উপর বিশ্বাস রেখে চলতে শুরু করুণ ।
০৯। অতীতের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবনা বাদ দিনঃ আপনি আপনার জীবনে অতিতে অনেক ভুল করেছেন বা আপনার জীবনে অতীতে অনেক সমস্যায় ছিলেন কিন্তু সেসব সমস্যার চিন্তা নিয়ে যদি আপনি আজ ও ভেবে চলেন তবে আপনি আপনার সাফল্যের রাস্তা থেকে ক্রমেই সড়ে আসছেন।
অতীতের সমস্যার চিন্তা আপনাকে বর্তমানে চিন্তিত করে রাখে ও নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার পথে বড় বাধা হিসাবে দেখা দেয়। তাই অতীতের ব্যার্থতা নিয়ে খুব বেশি মাথা না ঘামিয়ে সামনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি আলোচনা করুণ আরো বেশি সময় দিতে শিখুন। আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা কিন্তু কখনই তার অতীতের সমস্যাগুলো বিচলিত ছিলেন না তাই তিনি তার জীবনে দুই ডজন ব্যার্থতার পরেও নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সাফল্যমণ্ডিত ব্যাক্তি হিসাবে পরিচিত করিয়ে দিতে পেরেছেন।
০৮। নিজের আরাম নিয়ে চিন্তা কমিয়ে দিনঃ সাফল্য অর্জনের পূর্ব শর্তই হলো আপনাকে অনেক অনেক বেশি শ্রম দিতে হবে, নিজেকে নিয়ে ভাবনার চেয়ে আপনাকে ভাবতে হবে আপনার সাফল্য নিয়ে। সেখানে আপনার আরাম আয়েশের সময় খুবই কম। তাই নিজের বেশি কষ্ট হচ্ছে বা নিজেকে খুব বেশি সময় দিতে পারছেন না এসব নিয়ে চিন্তা করলে আপনি আপনার সাফল্যের রাস্তা থেকে আস্তে আস্তে পিছিয়ে পড়বেন। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অস্কারজয়ী অভিনেতা জ্যাকি চ্যান তার ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে দিনে মাত্র ২ –৪ ঘণ্টা ঘুমাতেন, অনেক সময় সেই সময়টাও তিনি পেতেন অভিনয়ের মাঝের বিরতিতে।
০৭। নেতিবাচক ভাবনা গুলোকে এড়িয়ে চলুনঃ জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা টেনে নিয়ে আসে নেতিবাচক চিন্তা গুলো, আপনি যতই নেতিবাচক চিন্তা করবেন ততই আপনি ধীরে ধীরে আরো নেতিবাচক চিন্তা চেতনায় আটকে যাবেন। তখন আস্তে আস্তে আপনার কাছে খুব সহজ একটা কাজকেও অনেক কঠিন বলে মনে হতে শুরু করবে। তাই সব সময়ই পজেটিভ বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন এবং নিজের উপর ভরসা রাখতে শিখুন।
০৬। ধৈর্য্য ধরতে শিখুনঃ আমাদের অনেকেরই সাফল্য এর দেখা মেলে না এর একটা বড় কারণ হলো ধর্য্য। আমরা কেউই জানি না কখন আসলে আমরা সাফল্যের দেখা পাবো, অনেক সময় এমন দেখা যায় যে আমরা আমাদের সাফল্যের দরজার একদম চূড়ান্তে পৌঁছে যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্ত্বের আমরা আমাদের ধর্য্য হারিয়ে ফেলি এবং পিছনে চলে আসি। এমন অবস্থায় ধর্য্য শক্তি না রাখতে পারলে কখনই সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। আর সাফল্য এমন কোন সহজলভ্য জিনিস নয় যে সেটা চাওয়া মাত্রই পাওয়া যাবে।
০৫। নিজের আবেগ গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুনঃ আমরা বরই আবেগী এক জীব, অনেক সময় এসব আবেগের কারণেই আমরা নানা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি যা আমাদের সাফল্যের দ্বারে বড় একটা সমস্যা বয়ে নিয়ে আসে। আপনাকে আপনার সাফল্যের পথ ধরে রাখতে অনেক সময় এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা আপনার জন্য অনেক কঠিন। তাই যতদ্রুত আপনি আপনার আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন তত দ্রুত আপনি আপনার সাফল্যের রাজ্যের রাজা হতে পারবেন।
০৪। ছোট ছোট পরাজয় থেকে ভেঙ্গে পড়বেন নাঃ জীবনে জয় পরাজয় আসবেই, শুধুমাত্র পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে বসে থাকলে জয়ের মুখ থেকে বঞ্চিত হতে হবে নিশ্চিত। ছোট ছোট পরাজয় কখনই এটা নির্ধারণ করে না যে আপনার আগামী যুদ্ধতেও আপনি পরাজয় স্বীকার করবেন।
আমরা যদি সেই রবার্ট ব্রুসের সেই যুদ্ধের কথা চিন্তা করি তবে দেখব যে তিনি যতবারই যুদ্ধে হেরেছেন কখনই তিনি নিজেকে যুদ্ধে পরাজিত বলে মনে করেন নাই বরং পরেরবারের জন্য আরো বড় ভাবে পরিকল্পনা করেছেন, যুদ্ধ করেছেন। তাই সাফল্যের চাবিকাঠির পিছনে রয়েছে ছোট ছোট পরাজয়ে পরাজয় না বরন করে সামনের জন্য প্রস্তুত হওয়া।
০৩। অন্যের গল্প শুনে হতাশ হবেন নাঃ বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় একটা সমস্যা যে আমরা অন্যের সাফল্যের গল্পে নিজেকে হারিয়ে ফেলি, আপনার বয়সেই অনেক অনেক সাফল্য হয়ত পেয়েছে এর মানে এই নয় যে আপনি আর আপনার জীবনে সাফল্যের সব দোয়ার হারিয়ে ফেলেছেন। সাফল্য সবার চোখে এক রকম নয়, কারো কাছে অঢেল টাকা আয় করা সাফল্য তো কারো কাছে মানসম্মত একটা চাকরী খুঁজে পাওয়াই সফলতা।
তাহলে অন্যের সফলতার কথা শুনে ভয় পেয়ে যাওয়ার কি আছে, বরং অন্যের সফলতার পিছনের কারণগুলো জানতে চেষ্টা করুন, বুঝতে চেষ্টা করুণ কেন তার সফলতা এসেছে। শুধুমাত্র হতাশা আপনাকে আরো হতাশাতেই নিমজ্জিত করবে সাফল্যের তীরে পৌঁছে দিতে পারবে না।
০২। ভয়কে জয় করতে শিখুনঃ মানব জীবনের সবচেয়ে বড় শত্রু অন্য কেউ নয়, শত্রু আপনার মাঝে থাকা ভয়। জীবনে সফলতা পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে রিক্স নিতেই হবে, সেটা যদি আপনি সঠিক সময়ে নিতে না পারেন তবে ব্যার্থতা নিশ্চিত। এদেশে হাজার হাজার ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় কিন্তু নিজেদের কিছু হেরে যাওয়ার ভয়ের কারণে সেসব উদ্যোগগুলো কখনই সফলতার মুখ দেখে না।
০১। ভুল হতেই পারে – এই বাক্যে বিশ্বাস রাখুনঃ মানুষ মাত্রই ভুল, জীবনে প্রতিটি মানুষই হাজার হাজার ভুল করেন এমনকি বিশ্বের সেরা সফলব্যাক্তিরাও তাদের জীবনে অনেক ভুল করেছেন তাই বলে কেউই সেখানে থেমে যায় নাই, সবাই চলেছে নিজের গতিতে আর সেকারণেই তাদের আজ এই সাফল্য তাই নিজের উপর ভরসা রাখুন। ভুল কিছু করে ফেললে নিজে নিজে বলতে শিখুন – ভুল হতেই পারে।
আপনি যদি এসব প্রতিবন্ধকতা গুলোকে জয় করে এগিয়ে যেতে পারেন তবে আপনার সাফল্যের দ্বারে পৌঁছানো আরো অনেক সহজ ও মসৃণ হয়ে যাবে। মনে রাখবেন সফলতা খুব সহজেই ধরা দেয় না, এরজন্য আপনাকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে, তাহলে সফলতা আপনাকে ধরা দিবে।