রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক বছর মেয়াদের কমিটি দিয়ে এক দশক পার করার পর নতুন নেতৃত্ব আনার প্রক্রিয়ায় চট্টগ্রাম মহানগরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া পড়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে মূল নেতৃত্বে আসার চেষ্টা তো আছেই, কোনোভাবে কমিটিতে ঢোকার চেষ্টায়ও আছেন অনেকে। ছাত্রলীগের ভেতর আওয়ামী লীগ নেতাদের বলয়, কলেজকেন্দ্রিক গ্রুপ-উপগ্রুপ, কে কীভাবে আসবেন নেতৃত্বে— তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
তবে গত চার দশকের ধারাবাহিকতায় এবারও সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্র থেকে ‘নাজিল হওয়া’ কমিটি পাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ— এটি মোটামুটি নিশ্চিত।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ইউনিটগুলোর মধ্যে ছাত্রলীগের মহানগর ইউনিট অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে, এ ইউনিটের মধ্য দিয়েই চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের পরবর্তী নেতৃত্বের হাতেখড়ি হয়। প্রয়াত রাজনীতিক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, দক্ষিণের সাবেক সভাপতি প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের মতো অনেক নেতা উঠে এসেছেন নগর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে নেতৃত্ব পাওয়ার আগ্রহ তুঙ্গে।
মহানগর ছাত্রলীগের অতীত নেতৃত্বের ইতিহাস অনুযায়ী, সরকারি সিটি কলেজ, ওমরগণি এমইএস কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজের নেতাকর্মীরাই মোটামুটি নেতৃত্বের শীর্ষে থাকেন। কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ গত চার দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে এমইএস কলেজ ও সিটি কলেজ বলয়ের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
তবে ১৯৮২ সাল থেকে সাড়ে তিন দশক ধরে ছাত্রশিবিরের দখলে থাকা চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুক্ত করে নগর ছাত্রলীগ। এরপর সেখানে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হয়েছে। এখন এ দুটি কলেজ শাখার নেতারাও নগর ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে আসার জোর চেষ্টায় আছেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রামে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এমইএস কলেজ ও সিটি কলেজের আধিপত্য ও প্রভাব কেন্দ্র কতটুকু অগ্রাহ্য করতে পারবে, তা নিয়েও চলছে আলোচনা।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক কলিম সরওয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বলয়কেন্দ্রিক চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা উচিত। কলেজকেন্দ্রিক নেতৃত্ব বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে নিয়মিত ছাত্রত্ব আছে— এমন তরুণদের নেতৃত্বে আনা উচিত। নিয়মিত ছাত্র নন— এমন কাউকে পদ দিলে তখন আর ছাত্রদের জন্য রাজনীতিটা হয় না, টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজি হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়াজ হত্যার ঘটনা আমরা স্মরণে নিতে পারি। তখনো টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। সুতরাং নেতার বলয়, কলেজের আধিপত্য— এসব চিন্তা থেকে বাইরে এসে নগর ছাত্রলীগের কমিটি করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজভিত্তিক চিন্তা করে কোনো ফায়দা হবে না। যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হোক। যে কলেজ থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে, তাকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করা হোক। অন্যান্য সব পদেও যোগ্যরাই আসুক। যাদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, তারাই আসুক। কলেজকেন্দ্রিক সমতার কথা চিন্তা করলে অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্যরাও চলে আসতে পারে। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ যেহেতু সারাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, এর নেতৃত্ব নির্বাচন সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর ছাত্রলীগের সাবেক এক শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘কলেজকেন্দ্রিক নেতৃত্বের কথা যদি বলতে হয়, এমইএস কলেজ ও সিটি কলেজ সবসময় আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক সংগ্রামে এ দুটি কলেজের নেতাকর্মীরা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভ্যানগার্ড হিসেবে কাজ করেছে।’
‘রাজনৈতিক পরিস্থিতি সবসময় এমন না-ও থাকতে পারে। আওয়ামী লীগের সুদিন সবসময় না-ও থাকতে পারে। সুতরাং যাদের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা-যোগ্যতা আছে তাদের নেতৃত্বে আনা উচিত। তার মানে এই নয় যে চট্টগ্রাম কলেজ-মহসীন কলেজকে বাদ দিতে হবে। সমন্বয়ের মাধ্যমে এমন নেতৃত্ব তৈরি করা উচিত, যারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংকট এলে রাজপথে দাঁড়াতে পারবে,’— বলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাত বছর পর ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এতে আলতাফ হোসেন চৌধুরী সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর ১৯৮৪ সালের ২৩ মে সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যেমে কমিটি হয়। ওই সময় রফিক হোসেন বাচ্চুকে সভাপতি ও গোলাম মোস্তফা বাচ্চুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এরপর সম্মেলন ছাড়াই কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয় নগর ছাত্রলীগের চারটি কমিটি। ১৯৮৮ সালে জাফর আহমেদকে সভাপতি ও জিএম সাহাবুদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৯ সালে মফিজুর রহমানকে সভাপতি ও রহিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি পাঠায় কেন্দ্র। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের পর সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যান মফিজুর রহমান। বিলুপ্ত হয়ে যায় মফিজুর-রহিম কমিটি। এই কমিটি বিলুপ্তির পর প্রায় চার বছর কাণ্ডারিবিহীন ছিল নগর ছাত্রলীগ। ২০০০ সালে নগরীর বহদ্দারহাটে ছাত্রলীগের আট নেতাকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে শিবিরের সন্ত্রাসীরা। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্র থেকে ২০০০ সালে ১২ সদস্যের একটি স্টিয়ারিং কমিটি ঘোষণা করা হয়।
২০০৩ সালে স্টিয়ারিং কমিটি বিলুপ্ত করে এম আর আজিমকে সভাপতি ও মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি ১০ বছর দায়িত্ব পালন করে। আজিম এমইএস কলেজ ও সালাহউদ্দিন সিটি কলেজ বলয়ের ছিলেন।
এরপর ২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদের কমিটি পাঠায় কেন্দ্র। ইমু সিটি কলেজ ও রনি এমইএস কলেজ বলয়ের ছিলেন। বিভিন্ন ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত হয়ে ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন নুরুল আজিম রনি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে। পরে তাকে ভারমুক্ত করা হয়। তিনিও এমইএস কলেজ বলয়ের।
১০ বছর পর আবার নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দফতর সেলে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে
আওয়ামী লীগের মতো চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বড় অংশও দুই নেতার বলয়ে বিভক্ত। প্রয়াত রাজনীতিক এ বি এম মহিউদ্দিন অনুসারী হিসেবে যারা পরিচিত তারা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বলয়ে আছেন। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের নিয়ন্ত্রণে আছে আরেকটি অংশ। এর বাইরে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের অনুসারী বলয়ও আছে।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর শিক্ষামন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ইমু আবার সুজনের বলয়েও আছেন।
ওমরগণি এমইএস কলেজ ও চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ পুরোপুরি নওফেল অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। আবার এমইএস কলেজ ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সদস্য আরশেদুল আলম বাচ্চু ও চসিক কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর দুই উপগ্রুপে বিভক্ত। এ বলয় থেকে নেতৃত্বে আসতে চান চান্দগাঁও থানার সভাপতি নূরনবী সাহেদ, ডবলমুরিং থানার সাধারণ সম্পাদক রাকিব হায়দার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্পণ চক্রবর্তী, বাকলিয়া থানার আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম প্রমি ও নুরুল আবসার রাফি।
নূরনবী সাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে আসছি। সব পরিস্থিতিতে আমাদের নেতা নওফেল ভাইয়ের নির্দেশে রাজপথে ছিলাম, এখনো আছি। ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত-বিএনপির বিরুদ্ধে রাজপথে ছিলাম। করোনাকালে নেতার নির্দেশে ৪৩টি ওয়ার্ডে ত্রাণসাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। নেতার সিদ্ধান্তের ওপর আমার বিশ্বাস অটুট আছে এবং এগিয়ে যাব।’
বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্পণ চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্কুলেই ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হই। এমইএস কলেজে পড়ার সময় রাজপথে অনেক প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করেছি। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ছাত্রশিবিরের তাড়াতে লড়াই করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে গতানুগতিক ছাত্র রাজনীতির ধারা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছি। সবসময় নিজেকে সৃজনশীলতা, শিক্ষা, মেধা ও লেখাপড়ার মধ্য দিয়ে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছি। শিক্ষামন্ত্রী আমাদের অভিভাবক। নেতৃত্ব পেলে অভিভাবকের মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট থাকব, এটুকু বলতে পারি।’
রাকিব হায়দার সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমি কলেজ ও মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত। নগরে সব দলীয় কর্মসূচিতে মিছিল নিয়ে যোগদান করেছি। সবার মতো আমারও আশা আছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসার। শিক্ষামন্ত্রী এবং নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমু ভাই ও সাধারণ সম্পাদক দস্তগীর ভাই যেভাবে চান, সেভাবেই আমি এগিয়ে যাব। উনাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করব।’
এদিকে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক সবুজ, মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কাজী নাঈম, দুই যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পলাশ ও মায়মুন উদ্দীন মামুন মূল নেতৃত্বের জোরালো দাবিদার। ২০১৫ সালে নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে এ দুই কলেজ শিবিরমুক্ত করতে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মাহমুদুল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাদের ছাত্রত্ব আছে, যারা পড়ালেখার সঙ্গে যুক্ত, তাদের নেতৃত্বে আনা উচিত বলে মনে করি। কারণ যেসব নবীন ও তরুণ শিক্ষার্থী আসছেন, তাদের আকৃষ্ট করার মতো যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। অছাত্র কিংবা মেধাহীন নেতৃত্বের পক্ষে তাদের সংগঠনের পতাকাতলে আনা সম্ভব নয়। চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজ মেধাবীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সুতরাং মহানগরের নেতৃত্ব দাবি করার সক্ষমতা এ দুটি কলেজের নেতাকর্মীদের আছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে দরকার স্মার্ট নেতৃত্ব, যে যোগ্যতা এ দুটি কলেজের নেতাকর্মীদের আছে।’
সুভাষ মল্লিক সবুজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি আসন্ন কমিটিতে সভাপতি পদপ্রার্থী। অর্থবিত্ত কিংবা লবিংয়ের দৌড়ে নয়, আদর্শিক অঙ্গীকারে আমি এগিয়ে আছি বলে মনে করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়নে আমি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছি। শিবিরের মিনি ক্যান্টেনম্যান্টখ্যাত চট্টগ্রাম কলেজে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়েছি আমরাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিপরীতে কারও সঙ্গে কিংবা জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে কখনো সখ্য গড়িনি।’
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন পলাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজ শুধু চট্টগ্রামের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, সারাদেশের মধ্যেও এগিয়ে। শত বছরের ঐতিহ্য আছে। জিপিএ-ফাইভ পাওয়া ছাড়া কেউ এসব কলেজে চান্স পাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। সুতরাং এ দুটি কলেজ মেধাবীদের কলেজ। বর্তমান যুগ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। জ্ঞান, মেধা, তথ্যপ্রযুক্তিতে যারা এগিয়ে, তারাই সমাজে আগামীতে নেতৃত্ব দেবে। সুতরাং ছাত্রলীগের কমিটিতেও তাদেরই এগিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করি। আর ছাত্র রাজনীতির কথা বলতে গেলে, আমি বারবার শিবিরের হামলার শিকার হয়েছি। হাসপাতালে থেকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। নিশ্চয় নীতিনির্ধারকরা এসব বিষয় বিবেচনায় রাখবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মায়মুন উদ্দীন মামুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুধুমাত্র পদ-পদবির পরিচয় দেওয়ার জন্য নগর ছাত্রলীগের নেতা হতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কাজ করতে চাই। সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মীদের প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই। ছাত্রদের অধিকার আদায়ে গঠনমূলক রাজনীতির মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করতে চাই। ছাত্রলীগ সবসময় যেভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে একটি দক্ষ ফোর্স হিসেবে কাজ করে, সেটি অব্যাহত রাখব নেতৃত্ব পেলে। একইসঙ্গে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মী যেন দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়, সেই লক্ষ্য থাকবে।’
মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক বোরহান উদ্দিনও দায়িত্বে আসতে আগ্রহী। তিনি আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বোরহান উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘ অপেক্ষার পর মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে আমাদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে শিবিরের দখলে থাকা মহসিন কলেজে ছাত্রলীগের স্লোগান প্রতিষ্ঠার প্রথম সারির একজন কর্মী আমি। ক্যাম্পাসে ও নগরে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সবসময় বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকার চেষ্টা করেছি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা আন্দোলন-সংগ্রামও করেছি। এখন কেন্দ্রীয় নেতারা চাইলে নগর কমিটির হয়ে দায়িত্ব পালন করতে চাই।’
এদিকে চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের বড় অংশ আছে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বলয়ে। সেই কলেজে খোরশেদ আলম সুজনের অনুসারী অংশটিও নওফেল বলয়ে আছেন। আবার সেখানে আ জ ম নাছিরের অনুসারী একটি বলয়ও আছে। ইসলামিয়া কলেজের বড় অংশ নওফেলের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। সেখানেও সুজনের অনুসারীদের একটি গ্রুপ আছে, যারা নওফেল অনুসারীদের সঙ্গে আছেন। কমার্স কলেজ ও মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ নওফেল ও নাছির অনুসারীতে বিভক্ত। এ ছাড়া নগর কমিটির অধীন বিভিন্ন থানা-ওয়ার্ডেও নওফেল অনুসারীদের আধিক্য।
নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি মোহাম্মদ তাসিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নতুন কমিটি হবে, ছাত্রসমাজ খুবই উচ্ছ্বসিত। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটি সুস্থ, সুন্দর প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। একটি বড় সংগঠনে এমন প্রতিযোগিতা স্বাভাবিক। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। আমাদের নেতা শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ভাই যাকে যোগ্য মনে করবেন এবং যার হাতে ছাত্রলীগের পতাকা তুলে দেবেন, আমরা সবাই তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
সারাবাংলা/আরডি/টিআর