সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ১৭ জোড়া অসহায় তরুণ-তরুণীর যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজন করেছে ঢাকাস্থ ভোলা জেলা সমিতি। একইসঙ্গে, নব দম্পতিদেরকে পরিবার পরিচালনার প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর পান্থপথে সামরাই কনভেনশন সেন্টারে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
আয়োজকরা জানান, ২০১৯ সালে এ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ১২ দম্পতিকে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়। ২০২১ সালে ১৭ দম্পতির বিয়ের মাধ্যমে ভোলা জেলার এতিম ও গরীব ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার সামাজিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়।
পাত্র-পাত্রীর জীবন বৃত্তান্ত বয়স স্থানীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাত্র-পাত্রী নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এক উপজেলা থেকে সর্বনিম্ন একজোড়া পাত্র-পাত্রীর মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিশেষ কারণে ভোলা জেলার পাত্র পাওয়া না গেলে অন্য জেলার পাত্র বিবাহের জন্য বিবেচনা করা হয়ে থাকে। বিয়ে রেজিস্ট্রি উপ-কমিটির তত্ত্বাবধানে ইসলামি বিধি-বিধান এবং পারিবারিক বিধি অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় ব্যক্তিগতভাবে সমিতির অনুমতিক্রমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাও গ্রহণযোগ্য হয় বিয়ের দেনমোহর ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বিবাহ রেজিস্ট্রি উপ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। সমাজের বিত্তবানদের দান-অনুদান ও যাকাতের অর্থের মাধ্যমে বিয়ে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে সমিতি।
আয়োজকরা আরও জানান, শুধু বিয়ে সম্পন্ন করাই নয়, প্রতি দম্পতিকে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য বিবাহকালীন সময়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়, এই আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাত্র-পাত্রীদের দাম্পত্য জীবন শুরু করার জন্য যাবতীয় উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। পাত্রীদের স্মৃতি উপহার হিসেবে স্বর্ণালঙ্কার প্রদান ছাড়াও ইমিটেশন জুয়েলারি দেওয়া হয়। পাত্র-পাত্রীদের বিবাহের প্রস্তুতি হিসেবে শাড়ি পাঞ্জাবি শেরওয়ানি ও পাগড়িসহ নানাবিদ সাজসজ্জা সামগ্রী দিয়ে বিবাহের সাজ-সজ্জার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সাজসজ্জার জন্য পাত্র-পাত্রীদের বিউটি পার্লারের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়।
বর ও কনের আত্মীয়স্বজনকে বিয়ের অনুষ্ঠানে মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয় এ সংক্রান্ত সকল ব্যয় সমিতি বহন করে। সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে যাদের বিয়ে হয়েছে তাদেরকেও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর দেড়টার পর প্রথমে পাত্রীরা কমিউনিটি সেন্টারে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে আসেন, এরপর পাত্রদের ঘোড়ার গাড়িতে করে বিয়ের গেটে নামানো হয়। সেখান থেকে তাদের বরণ করে নিয়ে কমিটিউনিটি সেন্টারের তৃতীয় তলায় বিয়ের আসরে বসানো হয়। সেখানে প্রথম সারিতে কনে এবং দ্বিতীয় সারিতে পাত্ররা বসে থাকেন। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কাজি তাদের বিবাহ পড়ান এবং বিবাহের কাজ সম্পন্ন করে আমন্ত্রিত অতিথিদের খাওয়া-দাওয়া সম্পন্ন হয়। দাম্পত্য জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি কামনায় তাদের জন্য দোয়া কামনা করা হয়।
আয়োজকরা জানান, এসব কনের বাবা-মা অত্যন্ত গরীব। তাদের বিয়ে দেয়ার সামর্থ্য নেই বললেই চলে। আর তাই এমন বিয়ের আয়োজন করা হয়।
এসময় ভোলা সমিতির সভাপতি মাকসুদ হেলালী, সাধারণ সম্পাদক সহিদুল হক মুকুল, বিবাহ সহায়তা প্রকল্পের সমন্বয়ক এ বি এম মামুন অর রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এ.টিএম মহিউদ্দিন ফারুক, আহ্বায়ক এম.ইউ গোলাম রসুল বেলাল, সদস্য সচিব এস.এম মনিরুজ্জামান লিটন, মিডিয়া কমিটির আহ্বায়ক এমদাদুল হাসান আজিজ, সদস্য সচিব মোসলে উদ্দিন রিফাতসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এবিষয়ে ভোলা সমিতির সভাপতি মাকসুদ হেলালী বলেন, ভোলা একটা ছোট অঞ্চল। এখানে বিভিন্ন জায়গায় নদী ভাঙ্গন এলাকা আছে। অনেক অসহায় গরীব দুঃখী মানুষ আছে। আর ভোলা সমিতি এটা সামাজিক প্রতিষ্ঠান, আমরা ঢাকাস্থ সমিতির পক্ষ থেকে গরীব, অসহায় এতিমদের বিবাহ প্রদান করে সামাজিকভাবে অবদান রাখতে চাই। এই অনুষ্ঠান করার জন্য আমাদের অনেকেই অনেক অনুদান দিয়েছে। কারণ তারা জানে এটা ইসলামি শরিয়ত মতো ভাল উদ্যোগ। আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের কিছু আর্থিক অনুদান, কিছু স্বর্ণালংকার, এবং আসা যাওয়ার খরচ, বিবাহের সমস্ত অনুষ্ঠান খরচ, কারো কারো ঘরবাড়ি করে দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। তারপরও যদি তাদের কোন রকম সাহায্য সহযোগিতা দরকার সেটাও আমরা বিভিন্নভাবে করে থাকি, তাদেরকে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তাই আমরা সমাজে যারা বিত্তবান আছে তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, সামাজিকভাবে এরকম উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
সারাবাংলা/এনআর/একেএম