স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ডাক্তার আফছারুল আমিনের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনে লড়তে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ছয়জনের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়াও তৃণমূল বিএনপিসহ নিবন্ধিত তিন দল ও স্বতন্ত্র দুজন প্রার্থী আছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনে মঙ্গলবার (৪ জুলাই) নগরীর লাভ লেইনে উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ছয় প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু মঙ্গলবার বিকেলে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এরপর নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় প্রথমে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও তৃণমূল থেকে যারা আমাকে পরামর্শ দিয়ে যোগ্য করে তুলেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
‘চট্টগ্রাম ১০ আসন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। যখন আমি এখানে ছাত্রলীগ করতাম, তখন আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রাথমিক পাঠ নিয়েছি। আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যে দল মনোনয়ন দেয়, স্বাভাবিকভাবে তার কিছু প্রত্যাশা থাকে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে আমি চেষ্টা করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের সুবিধা ও দেশের উন্নয়নের জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আবার কিছু হয়নি। সে সব কর্মসূচি বাস্তবায়নে আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। আমার যে দায়িত্ব সেটি আমি পালন করে যাব। আমি আমার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন, সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়ন বিশ্ববাসীকে আকর্ষণ করেছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যহত রাখতে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে জনগণ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে বলে আমার বিশ্বাস।’
মহিউদ্দিন বাচ্চু চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নগর ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যুবলীগ ছেড়ে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ নেন।
উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সামসুল আলম ও তৃণমূল বিএনপির দীপক কুমার পালিত মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দীপক কুমার পালিত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিবন্ধনের প্রক্রিয়ায় থাকা জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র। যেহেতু আমাদের দল এখনও নিবন্ধন পায়নি, সে জন্য নিবন্ধিত তৃণমূল বিএনপি থেকে আমি প্রার্থী হয়েছি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আমি পটিয়া থেকে নির্বাচন করেছিলাম, বিএনএফ’র প্রার্থী হিসেবে। আমি যে দল থেকেই নির্বাচন করি না কেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আমার বিষয়ে সরকারের সব মহল অবগত আছে। নির্বাচনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমি প্রার্থী হয়েছি।’
এদিকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট নামে একটি দল থেকে রশিদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র হিসেবে আরমান আলী ও মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছয়জন প্রার্থী মনোনোয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এবার সব কেন্দ্রে ভোট নেওয়া হবে ইভিএম ব্যবহার করে। ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে কি না সেটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে বলতে পারব। ওই আসনে এবার ভোটকেন্দ্র থাকবে ১৫৬টি ও ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ২১২টি।’
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর, ডবলমুরিং, খুলশী) আসনে ভোটগ্রহণ হবে। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ৬ জুলাই, আপিল দায়ের করা যাবে ৭ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১১ জুলাই, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ জুলাই এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৩ জুলাই।
২০০৮ সাল থেকে অনুষ্ঠিত তিনটি সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আফছারুল আমিন। গত ২ জুন তিনি মারা যান।
সারাবাংলা/আইসি/আরডি/একে