স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় ছয়দিন আগে যুবলীগ কর্মী শহীদুল ইসলাম আকাশকে খুনের মামলায় প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, আকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী যুবলীগ কর্মী মামুনের ভাই খুন হয়েছিল। সেই খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে মামুন আকাশকে খুন করে বলে র্যাবের তথ্য।
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর পতেঙ্গা এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। একইদিন চাঁদপুর জেলা সদরের পুরাতন বাজার থেকে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার অপর দু’জন হল- মামুনের ছোট ভাই মো. ইকবাল (২২) ও মুকেশ চন্দ্র দাশ (২৪)।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ থানার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ইনতিরহাট বাজারে নিজ ফার্নিচারের দোকানের সামনে শহীদুল ইসলাম আকাশকে (২৪) কুপিয়ে খুন করা হয়।
রোববার দুপুরে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এমএ ইউসুফ বলেন, ‘খুনের ঘটনার পরই আমরা ছায়া তদন্ত শুরু করি। তদন্তে আমরা জানতে পারি, আকাশ খুনের তিন বছর আগে ২০১৯ সালে মামুনের ভাই আফজালকে খুন করা হয়েছিল। মামুন তখন জেলে ছিল। এ সময় তার ছোট ভাই ইকবালকেও কুপিয়ে জখম করা হয়েছিল। এ মামলার অন্যতম আসামি আকাশকে তখন গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিছুদিন জেল খেটে আকাশ বের হয়।’
তিনি বলেন “এক সময় মামুন ও আকাশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। বারৈয়াহাট এলাকার স্থানীয় এক রাজনৈতিক নেতার ‘ক্যাডার’ হিসেবে কাজ করতেন। এ সময় তারা একসঙ্গে মাদক ও কাঠ পাচার করতেন। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে ব্যবসায়িক বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জেরে মামুন ২০১৫ সালে আকাশের ওপর হামলা করে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার করে বেশ কিছুদিন কারাগারে ছিলেন মামুন। ২০১৬ সালে আকাশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সাদ্দম নামে একজন খুন হয়। ওই মামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে আকাশ জেলেও খেটেছিল।’
র্যাব কর্মকর্তা ইউসুফ আরও জানান, এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে আকাশ ও মামুন এক নেতার কর্মী হিসেবে আর থাকতে পারেনি। মামুন ওই নেতার পক্ষ ত্যাগ করে প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক নেতার গ্রুপে যোগ দেয়। মামুনের সঙ্গে তাদের আরেক বন্ধু মোতালেবও ওই গ্রুপে যোগ দেয়। মোতালেবও আকাশ হত্যা মামলার আসামি। ২০১৯ সালে নিজের নাবালিকা চাচাতো বোনকে বিয়ে করায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় গ্রেফতার হয়ে মামুন কারাগারে যায়। ২২ মাস জেল খেটে গত ১৩ সেপ্টেম্বর মামুন জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
‘মুক্তি পেয়েই মামুন ফেনীর একটি শপিংমলে বসে আকাশকে খুনের পরিকল্পনা করেন। আকাশের সঙ্গ দ্বন্দ্বের জেরে মোতালেব এতে ইন্ধন দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন জামিনে মুক্তি পাওয়ার পাঁচ দিনের মাথায় ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে ক্রেতা সেজে এক যুবককে আকাশের ফার্নিচারের দোকানে পাঠায়। ওই ক্রেতা তর্ক বাধায় আকাশের সাথে। এ সময় মামুন দলবল নিয়ে গিয়ে আকাশকে দোকান থেকে টেনে বের করে কিরিচ দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে। পরে মোতালেব তার হাতে থাকা ধামা দিয়ে গলায় ও থুতনিতে আঘাত করে। এ সময় আকাশের বাবা ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয় এবং অন্যরাও কুপিয়ে জখম করে আহত করে। পরে হাসপাতালে আকাশ মারা যান।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উচ্চাভিলাসী মামুন ও আকাশের স্বপ্ন ছিল তারা একটি বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র হবেন। এজন্যও তাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। আকাশকে খুনের ঘটনায় মামলার পাঁচ নম্বর আসামি স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মিজানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। মোতালেবকে ধরতে র্যাব অভিযান চালাচ্ছে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, আকাশ খুনের ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সাত/আট জনকে আসামি করে জোরারগঞ্জ থানায় মামলা করেন তার বোন। এ ঘটনায় গ্রেফতার মামুনের বিরুদ্ধে হত্যা, মাদকসহ ১২টি, তার ছোট ভাই ইকবালের বিরুদ্ধে ১৭টি এবং মুকেশের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা আছে। আর নিহত আকাশের বিরুদ্ধে খুন, মাদকসহ মামলা ছিল ১৩টি।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম