স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রায় দশ মাস আগে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি পাহাড় এলাকায় ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র খুনের ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামি এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর শহর ছেড়ে পটিয়ায় পালিয়ে যাওয়া ওই যুবক সবসময় মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরে থাকতেন। এভাবে বেশভূষা ও বারবার মোবাইলের সীম পাল্টে দশ মাস গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছিল।
বুধবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে পটিয়া পৌরসভার খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নগরীর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর জানিয়েছেন।
গ্রেফতার শ্রাবণ দে (২০) পটিয়া জেলার ধলঘাট ইউনিয়নের করণখাইন গ্রামের মৃত অজিত দে’র ছেলে। নগরীর কোতোয়ালী থানার রাজাপুকুর লেইনে তাদের বাসা।
২০২২ সালের ২২ এপ্রিল রাতে নগরীর চেরাগি পাহাড় সংলগ্ন রাজাপুকুর লেইনের দয়াময়ী ভবনের সামনে দু’দল কিশোর-তরুণের মারামারির সময় ছুরিকাঘাতে আসকার বিন তারেক ওরফে ইভান (১৮) নামে এক তরুণ খুন হন। ইভান নগরীর বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাসা ছিল নগরীর এনায়েত বাজারে।
এ ঘটনায় ইভানের বাবা এস এম তারেক বাদি হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়লী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। পুলিশ হত্যাকাণ্ডের পর দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল।
ওসি জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শ্রাবণকে শনাক্ত করা হয়েছিল। শ্রাবণই ইভানকে ছুরিকাঘাত করেছিল বলে আমরা তথ্য পেয়েছিলাম। ঘটনার পর সে পালিয়ে পটিয়ায় চলে গিয়েছিল।’
শ্রাবণকে গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেয়া কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রাবণ পটিয়ার ধলঘাটে তার মামার বাড়িতে থাকতো। খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের সামনে আঁখি স্টুডিও নামে একটি দোকানে ফটোস্ট্যাট মেশিন অপারেট করতো। সে সবসময় মাথায় ক্যাপ ও মুখে মাস্ক পরে নিজের চেহারা আড়াল করে রাখতো। কয়েকদফা মোবাইলের সীম পরিবর্তন করে। এজন্য তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে আমাদের নয় মাস লেগেছে।’
সেসময় পুলিশ ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত ইভানসহ মারামারিতে জড়িতরা সবাই নিজেদের ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতো। বিভিন্নসময় ছাত্রলীগের নামে বিভিন্ন মিছিল-সমাবেশেও তাদের দেখা যেত। উঠতি বয়সের এসব কিশোর-তরুণরা স্থানীয়ভাবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আবার এদের মধ্যে জামালখান, আন্দরকিল্লা, রহমতগঞ্জ- এ ধরনের বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক উপগ্রুপ আছে।
রহমতগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সাব্বির সাদিক নামে একজনের নেতৃত্বে একটি উপগ্রুপ আছে। সাব্বির নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। কাউন্সিলর শৈবাল এবং সাব্বির সাদিক নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জামালখানে ফুটপাতের পাশে চেয়ারে বসা নিয়ে দুই উপগ্রুপের মধ্যে ঝগড়া একপর্যায়ে সংঘাতে রূপ নেয়। এর জেরেই প্রাণ হারান কলেজ ছাত্র ইভান।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ