স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, অবৈধভাবে ১০ বছরেরও বেশি সময় গণভবনে বসে আছেন, এটার ভাড়া দিতে হবে। গণভবনের ভাড়া দিয়ে যেতে হবে।
রোববার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিকদল আয়োজিত ‘দেশ বাঁচাতে শ্রমজীবী মানুষের জাগরণ’ শীর্ষক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। নগরীর নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে নুর আহমদ সড়কের উভয়পাশ বন্ধ করে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে গণভবন বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটান। বুলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন গণভবন ছাড়তে হলে উনি কোথায় গিয়ে থাকবেন। আমি বলি, জনগণ যদি গণভবন থেকে আপনাকে বের করে দেয়, তাহলে আপনি আপনার স্বামী ওয়াজেদ সাহেবের বাড়িতে গিয়ে থাকবেন। বেগম খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের যে জেলখানায় রেখেছিলেন, সেখানেই হবে আপনার ঠিকানা।’
বরকত উল্লাহ বুলু’র এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে আরেক বিশেষ অতিথি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বুলুর কাছে শুনলাম, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- প্রধানমন্ত্রীত্ব চলে গেলে উনি কোথায় থাকবেন? শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হলে কিংবা নির্বাচনে পরাজিত হলে তিনি কোথায় থাকবেন সেটা কি মানুষের বিবেচ্য বিষয়? উনার মন্ত্রীরা কোথায় থাকবেন, সেটা কি মানুষের বিবেচ্য বিষয়?’
‘একটা কথা বলতে চাই, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জনগণের ভোট না নিয়ে, জনগণকে বাইরে রেখে, জনগণের ভোট কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবে যে ১০ বছরেরও বেশি সময় গণভবনে বসে আছেন, এটার ভাড়া দিতে হবে। গণভবনের ভাড়া দিয়ে যেতে হবে।’
সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির এক দফা-শেখ হাসিনা বিদায় হও। শুধু বিএনপি বলছে না, যুগপৎ আন্দোলনে যারা আমাদের সাথে আছে, তারাও রাস্তায় নেমে গেছে। যারা আমাদের বাইরে আছে, তারাও রাস্তায় নেমে গেছে। নতুন নতুন সংগঠনও রাস্তায় নেমে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েকটা হালুয়া-রুটির দল ছাড়া আর কেউ নেই। তবে এবার আর হালুয়া-রুটির দলগুলোরও পার পাবার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মানুষ তাদের নজরে রেখেছে।’
মার্কিন মন্ত্রীদের সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে খসরু বলেন, ‘গণতান্ত্রিক বিশ্ব বাংলাদেশে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেখতে চায়, যেখানে প্রত্যেক নাগরিক ভোট প্রদানের মাধ্যমে তাদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবে, তাদের সরকার নির্বাচিত করবে। তারা বাংলাদেশে এসেছে ভোটচোরদের আস্তানা ভেঙে দেওয়ার জন্য। বিদেশিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখের ওপর সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে এসেছে। এরপর কি আর কিছু বলার আছে?’
নেতাকর্মীদের ‘তৈরি হওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশিদের সমর্থন ভালো জিনিস। কিন্তু বিদেশিদের সমর্থনের ওপর বাংলাদেশের রাজনীতি নির্ভর করে না। তবে বিদেশিদের সমর্থনে সাধারণ মানুষ উদ্দীপ্ত হয়, সাধারণ মানুষ খুশি হয়। বিদেশিদের সমর্থনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু মূল দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। বিএনপির চেয়ে শক্তিশালী কোনো রাজনৈতিক দল এখন বাংলাদেশে নেই।’
বিএনপির ৩১ দফায় নতুন বাংলাদেশ কোন পথে চলবে তার রূপরেখা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এবার রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ফ্যাসিস্ট, ভোটচোর, দখলদার সরকারকে তাড়ালেই, শুধু শেখ হাসিনাকে তাড়ালেই বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান হবে না। আগামীর বাংলাদেশের চরিত্র কি হবে, সেটা ৩১ দফায় পরিষ্কার বলা আছে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘শ্রমিক-জনতা জেগে ওঠেছে। সারাদেশের মানুষ হারানো গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়। নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। আন্দোলনের জোয়ারে সরকার পালাবে। একদফা ছাড়া সমাধান হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্তবর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নির্বাহী সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
সারাবাংলা/আইসি/এনইউ