স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে প্রায় দু’ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন একদল কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনেরা। পুলিশ সড়ক থেকে সরাতে গেলে তাদের সঙ্গে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়।
কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে তিনদিন হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমবারের মতো রাস্তায় আসেন ভুক্তভোগীরা।
উল্লেখ্য, পাবলিক–প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও চমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিসসহ কিডনি রোগীদের বিভিন্ন সেবা দিচ্ছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যান্ডর মেডিকেইডস প্রাইভেট লিমিটেড। ২০২২ সাল পর্যন্ত রোগীপ্রতি ডায়ালাসিসের জন্য সরকারিভাবে প্রতি সেশনে ৫১০ টাকা ও বেসরকারিভাবে ২৭৯৫ টাকা করে নেয়া হত। কিন্তু ২০২৩ সালের প্রথমদিন থেকে সেটা বেড়ে সরকারিভাবে ৫৩৫ ও বেসরকারিভাবে ২৯৩৫ টাকা হয়েছে।
কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে গত শনিবার (০৭ জানুয়ারি) থেকে চমেক হাসপাতালের ‘স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টারের’ সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা, যাদের সবাই কম খরচে সেবা নেয়ার জন্য বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা।
মঙ্গলবার সকালে কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনেরা বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে চমেক হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে রাস্তায় অবস্থান নেন। এর আগে তারা ‘স্যান্ডর ডায়ালাইসিস সেন্টার ‘ তালা ঝুলিয়ে দেন।
সড়কে অবস্থান নেয়া কিডনি রোগী জান্নাত সিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে, আমাদের কিডনি ডায়ালাইসি করতে শুধু মাসে ১৭-১৮ হাজার টাকা চলে যাবে। এত টাকা আমরা কোত্থেকে দেব ? আবার ওষুধের খরচ আছে। আমরা তো তিনদিন ধরে হাসপাতালের ভেতরে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু উনারা কোনোভাবেই শুনছেন না। সেজন্য আমরা রাস্তায় চলে এসেছি।’
রাউজান থেকে কিডনি রোগী স্বামীর সঙ্গে আসা সৈয়দা জান্নাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আপনি আমাদের বাঁচান। আপনি ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাঁচিয়েছেন। এবার নিজের দেশের আমাদের মতো অসহায়-গরীব জনগণকে বাঁচান। কিডনি ডায়ালাইসিসেস দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা যারা অসহায় আমরা কোথায় যাব, কিভাবে চিকিৎসা করব ?’
বাঁশখালী থেকে কিডনি রোগী বাবাকে নিয়ে আসা মো. ইমরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারিভাবে ডায়ালাইসি ফি ৫৩৫ টাকা এটা আমরা মানি না, মানি না, মানি না। এখানে যারা ডায়ালাইসিস করতে আসেন সবাই গরীব। বড়লোক কেউ তো এখানে আসে না। তাদের জন্য ক্লিনিক আছে। গরীব লোকের ওপর বাড়তি খরচের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে কেন ?’
এদিকে কিডনি রোগী ও তাদের স্বজনদের অবস্থানের কারণে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। হাসপাতালের সামনে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির উভয়পাশে গাড়ি আটকা পড়ে। দুপুর দেড়টার দিকে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য টানাহ্যাঁচড়া শুরু করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় এক যুবক মোবাইলে ভিডিও ধারণ শুরু করলে আন্দোলনকারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পুলিশ ওই যুবককে ধরে সামনে ইপিক হেলথ সেন্টার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ লোকজন তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিছুটা ধস্তাধস্তির পর পুলিশ ওই যুবককে নিয়ে থানায় চলে যায়। এরপর আন্দোলনকারীদেরও সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিডনি ডায়ালাইসিসে ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে কিছু লোক সড়কে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা তাদের সরানোর চেষ্টা করি প্রথমে। কিন্তু তারা কোনোভাবেই সড়ক ছেড়ে যাচ্ছিলেন না। তাদের বুঝিয়ে দুপুর দেড়টার দিকে সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে পেরেছি। এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ