স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও হট্টগোল হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বিদ্যমান কমিটিকে ‘অবৈধ’ বলার পর বাদানুবাদে জড়ান নেতারা। এ সময় সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় বলে উপস্থিত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না নগর আওয়ামী লীগের কোনো নেতা।
রোববার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে দলীয় কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
সভায় উপস্থিত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বক্তব্যে চলমান সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং ইউনিট-ওয়ার্ডে সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়ে কথা বলেন। সদস্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি অভিযোগ করেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনেক পুরনো লোকজনকে বাদ দিয়ে পছন্দের লোকজনকে সদস্য করা হচ্ছে। সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের তদারকির দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকলেও কেন তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি- এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রেজাউল।
নগর আওয়ামী লীগের বিদ্যমান কমিটিকে অবৈধ আখ্যায়িত করে রেজাউল বলেন, ‘২০১৩ সালে গঠিত কমিটির মেয়াদ তিন বছর পরেই শেষ হয়েছে। এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি অবৈধ। এই কমিটির ওয়ার্ড, ইউনিট এবং থানায় সম্মেলন করার কোনো এখতিয়ার নেই।’
মেয়র রেজাউলের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দফতর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসেরসহ কয়েকজন নেতা। এ সময় পাল্টাপাল্টি বাক্যবিনিময়ে সভাস্থলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর দু’জন সদস্য সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, মেয়রের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন- কমিটি অবৈধ হলে আপনি সভায় এসেছেন কেন? যতক্ষণ পর্যন্ত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই কমিটি বৈধ। অন্যদিকে হাসান মাহমুদ শমসের চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে মেয়রের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন। এ সময় মেয়র তাকে বারবার চেয়ারে বসে কথা বলার জন্য বলেন। পরে জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনি (মেয়র) উনার বক্তব্য রেখেছেন। আমি আমার বক্তব্য রেখেছি। দ্বি-মত থাকতেই পারে। এটা একেবারেই সাংগঠনিক বিষয়। বিশৃঙ্খলার কিছু তো হয়নি।’
এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে কয়েকবার ফোন করলেও তার কল রিসিভ না করায় বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
এদিকে হট্টগোলের পর সভায় নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডে ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো- পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড, বাগমনিরাম ওয়ার্ড, এনায়েত বাজার ওয়ার্ড, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড ও দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড। সম্মেলনের সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে।
জানতে চাইলে হাসান মাহমুদ শমসের সারাবাংলাকে বলেন, ’১৬ নভেম্বর থেকে ইউনিট সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আমরা পাঁচটি ওয়ার্ড নির্ধারণ করেছি। ইউনিটের পাশাপাশি ওয়ার্ডের সম্মেলনও হবে।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম