মঙ্গলবার , ১৭ অক্টোবর ২০২৩ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. ক্যারিয়ার
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. তরুণ উদ্যোক্তা
  7. ধর্ম
  8. নারী ও শিশু
  9. প্রবাস সংবাদ
  10. প্রযুক্তি
  11. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  12. বহি বিশ্ব
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. মতামত

চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে অর্থহাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মেয়রের বিরুদ্ধে

প্রতিবেদক
bdnewstimes
অক্টোবর ১৭, ২০২৩ ৩:২০ অপরাহ্ণ

সাকিব আল হাসান নাহিদ, জামালপুর।

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে আওয়ামীলীগের দলীয় অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ির ফেরার পথে এক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনায় তার দরিদ্র পরিবারের স্নাতকোত্তর পাশ করা বড় ভাইকে চাকরী দেওয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর বিরুদ্ধে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বলছেন, একদিন তাকে বলেছিলাম চাকরী পেতে হলে ৩-৪ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। এ কথা শুনে সে আর আসেনি। তার কাছে টাকা নেয়েছি এ কথা মিথ্যা। আমি কোনো টাকা নেয়নি।

নিহত ওই ছাত্রলীগ নেতা বাবুল হাসান (২৪)
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের পূর্বমাগুরী হাট এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে।
তিনি চিকাজানী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। বাবুলের মা-বাবা, তিন ভাই ও দুই বোন।
তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একটি এনজিওর চাকরি করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে এসেছে।

নিহত ওই ছাত্রলীগ নেতার পরিবার সুত্রে জানা যায়, নিহত বাবুল হাসান ২০২২ সালের ১৮ মে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের দলীয় একটি অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের আতারস্ট্যান্ড এলাকায় ট্রাক চাপায় মারা যান।
তিনি রাজনীতির পাশাপাশি একটি এনজিওর চাকরি করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে পুরো পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। এতে স্থানীয় সংসদ সদস্য পরিবারের যেকোন শিক্ষিত একজন সদস্যকে সরকারি চাকরি নিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরে চাকরির বিষয় নিয়ে সংসদ সদস্য মেয়রের সাথে দেখা করতে বলে। সেই সুযোগে দরিদ্র পরিবারটির কাছ থেকে চাকরী নিশ্চিত করার কথা বলে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় মেয়র৷

কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবুলের মা ছখিনা বেগম বলেন,‘ছেলেটি দল করতো। দলের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারা গেছে। ছেলেই সংসার চালাতো। ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে আমরা অন্ধকারে ডুবে যাই। বড় ছেলে সোলায়মান হোসেন মাস্টার্স শেষ করে বেকার। এমপি সাহেবের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বড় ছেলের একটি চাকরির জন্যে যোগাযোগ করি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সার্কুলার হয়। আবারও এমপি সাহেবে সঙ্গে যোগাযোগ করি, তখন এমপি সাহেব ছেলেকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে আসতে বলে। আল্লাহর রহমতে ছেলে লিখিত পরীক্ষায় পাস করে। পরে আবার এমপি সাহেবের সাথে দেখা করা হয়। তখন এমপি সাহেব দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী ওরফে অপুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে মেয়র অপুর সঙ্গেও কথা হয়। হঠাৎ একদিন অপু একটি লোকের মাধ্যমে বড় ছেলে সোলায়মানকে দেখা করতে বলেন। বড় ছেলে অপুর সঙ্গে দেখা করেন।

ছখিনা বেগম আরও বলেন,‘চাকরি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে মেয়র অপু ছেলের কাছে ৫ লাখ টাকা চান। তখন ছেলে মেয়র অপুকে বলেন, এতো টাকা কোথায় পাবো। তখন মেয়ের অপু বলেন, টাকা দিলে তোমার চাকরি শতাভাগ নিশ্চিত। পরে সোলায়মান বাড়ি ফিরে আমাদের জানায় বিষয়টি। সরকারি চাকরি নিশ্চিত হবে, এইভেবে আমরা চাষাবাদের একমাত্র জমি ও দুটি গরু বিক্রি করে এবং কিছু টাকা ধারদেনা করে, দুইবারে ৪ লাখ টাকা মেয়র অপুকে দিয়ে ছিলাম। কিন্তু ছেলের চাকরি আর হয়নি। পরে টাকা ফেরতের জন্যে মেয়র অপুর কাছেও যাওয়া হয়, তখন মেয়ের অপু বলেন, চাকরির জন্যে টাকা নাকি তিনি অন্য মানুষকে দিয়েছে। টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান।

নিহত বাবুলের বাবা আবুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো। ছেলে মারা যাওয়ার পর স্থানীয় এমপি আমার বড় ছেলেকে চাকরি দিতে চান। তাঁর (এমপি) সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের মেয়র অপুর সাথে যোগাযোগ রাখতে বলেন। কিন্তু মেয়ের অপু চাকরির জন্যে আমাদের কত কষ্টের টাকাগুলো নিয়ে আর ফেরত দিলো না। টাকাগুলো ফেরত দিলে, আমরা আবার চাষাবাদ করে চলতে পারতাম। ’

নিহত বাবুল হাসানের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান বলেন,‘বাবুলের পরিবার জন্মগত আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান যাতে দেশ স্বাধীন করতে পারেন, সেই জন্যে বাবুলের বাবা চারটি গরু দিয়ে মানুষকে খাওয়াইছে। এক সময় তিনি (বাবুলের বাবা) ধনী মানুষ ছিলেন। নদীভাঙার শিকার হয়ে আজ নিঃস্ব। এখন তাঁদের দিন চলে না। তাঁর সন্তান আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে গিয়ে মারা গেছে। তাঁর পরিবারের একজন সদস্যের চাকরির জন্যে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় টাকা দিয়ে প্রতারনার শিকার হন। এটা ভাবাই যায় না।’

এ ব্যাপারে দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নূরুন্নবী অপু বলেন, ‘সে আমার কাছে চাকরির জন্য আসতো। একদিন তাঁকে বলি, চাকরি পেতে গেলে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ করতে হবে। এ কথা শুনে তিনি চলে যান। তিনি আর আমার কাছে ফিরে আসেননি। আমি তার কাছে টাকা নিয়েছি , এই কথা মিথ্যা। আমি কোন টাকা নেয়নি।’

সর্বশেষ - বিনোদন