সারাবাংলা ডেস্ক
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নিজ ঘরে আগুনে তিন মেয়ে হারানো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী দম্পতির বাসায় গিয়ে সান্ত্বনা জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শনিবার (২২ জুলাই) সকালে উপমন্ত্রী নওফেল নগরীর কোতোয়ালী থানার আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের বান্ডেল সেবক কলোনিতে যান। এ সময় তিনি সন্তানহারা মিঠুন-আরতি দম্পতিকে গভীর সমবেদনা জানান।
উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাদের বলেন, ‘আপনাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। সন্তান হারানোর বেদনা সহ্য করা কোনো পিতামাতার পক্ষে সম্ভব নয়। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনাদের সন্তানের আত্মার শান্তি কামনা করি।’
এ সময় সেবক কলোনির বাসিন্দাদের বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন এ আসনের সংসদ সদস্য উপমন্ত্রী নওফেল।
নগর আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, কাউন্সিলর রুমকি সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম জেলা হরিজন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণু দাশ এবং একই সম্প্রদায়ের ঝান্না দাস, দিলীপ দাস, কৃষ্ণ দাশ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গত ২০ জুন চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার বান্ডেল রোডের সেবক কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেই কলোনিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শতাধিক পরিচ্ছন্ন কর্মীর বসবাস। হরিজন সম্প্রদায়ের এ মানুষগুলোকে ‘সেবক’ নাম দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
সেবক কলোনির ছোট্ট দুই কক্ষের বাসায় পরিবার নিয়ে থাকেন মিঠুন দাশ। তিনি এবং তার স্ত্রী আরতি দাশও পরিচ্ছন্ন কর্মী। তাদের চার মেয়ে, সারথী রাণী দাশ (১৭), সাখশী রাণী দাশ (১৩), হ্যাপি রাণী দাশ (৬) ও আড়াই বছর বয়সী সুইটি রাণী দাশ।
সারথী পাথরঘাটা মেনকা সিটি করপোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণী, সাখশী মিউনিসিপ্যাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণী এবং হ্যাপি স্থানীয় সানরাইজ গ্রামার স্কুলের কেজি শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাখশী রাণী দাশ গত ২৪ জুন মারা যায়। সারথী গত ৩০ জুন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই হ্যাপি রাণীর মৃত্যু হয় একই ইনস্টিটিউটে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোতোয়ালী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামসুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন, দগ্ধ ও স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের কারণসহ সার্বিক চিত্র উদঘাটন করেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, মিঠুন ও আরতি ভোরে সড়ক ঝাড়ু দেয়ার কাজে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। মা বড় তিন মেয়েকে বলে গিয়েছিলেন, ছোট মেয়ে আড়াই বছর বয়সী সুইটির ঘুম ভাঙলে তাকে যেন দুধ গরম করে দেয়া হয়। মেঝ বোন সাখশী সকালে গ্যাসের চুলায় দুধ গরম করে ছোট বোনকে খাওয়াতে খাওয়াতে তার পাশে ঘুমিয়ে পড়েন।
দুধের পাতিল চুলা থেকে নামিয়ে রাখলেও চুলার সুইচ বন্ধ করার কথা মনে ছিল না সাখশীর। ঘন্টাখানেক পর সারথী ঘুম থেকে উঠে দ্রুত ছোট বোনের জন্য দুধ গরম করতে যান। তিনি ম্যাচের কাঠি জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে পুরো ঘরে আগুন ধরে যায়। তখন সুইটিকে বাঁচাতে তিন বোন তার শরীরের ওপর উপুড় হয়ে থাকেন। বাসার চালের সঙ্গে ছিল তাপ প্রতিরোধক রেক্সিন। আগুনে সেগুলো গলে গলে পড়তে থাকে তাদের শরীরের ওপর। চিৎকারের শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন গিয়ে দরজা ভেঙ্গে তাদের চারজনকে উদ্ধার করেন।
অগ্নিকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিকভাবে দগ্ধদের চিকিৎসার জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
সারাবাংলা/আরডি/ইআ