রাজনীন ফারজানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: আড়াই বছর ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সেবা দিয়ে আসছিল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাতত্য ও জেপিজেড। তবে তাদের কর্মীদের প্রতি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের অব্যাহত অপেশাদার আচরণ ও দুর্ব্যবহারে তারা চূড়ান্ত পর্যায়ে অতীষ্ঠ। সর্বশেষ এক সভা থেকে তাদের প্রতিনিধিকে দুর্ব্যবহার করে বের করে দেওয়ায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পর্কই ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
সাতত্য ও জেপিজেড বলছে, সিটি করপোরেশনে কাছে তাদের বকেয়া বিল প্রায় তিন কোটি টাকা। তারা সাড়ে তিন বছর ধরে সেবার বিপরীতে কোনো ধরনের বিল না পেলেও নগরের উন্নয়নমূলক কাজে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা দিয়ে আসছিল। কিন্তু করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে তারা সেই সম্পর্ক ছিন্ন করছে। সিটি করপোরেশনকে যে সেবা দিয়ে আসছিল, তা আর চলমান রাখতে চায় না জানিয়ে গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরের কাছে তারা চিঠি দিয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের মন্তব্য চাইতে গেলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। অন্যদিকে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের।
চিঠি থেকে জানা যায়, ডিএসসিসির অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (দ্বিতীয় সংশোধিত) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাতত্য ও জেপিজেড নামে দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজ করছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ডিএসসিসি এলাকায় ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠের উন্নয়নকাজ চলছে। এসব উন্নয়নকাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে সাতত্য। প্রধান প্রকৌশলীর দুর্ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও দক্ষিণ সিটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরকে গত মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার স্থপতি অধ্যাপক রফিক আজম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ওসমানী উদ্যানের উন্নয়নকাজের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সাতত্য। এই উদ্যানের উন্নয়নকাজ নিয়ে একটি বৈঠকে সাতত্যের প্রতিনিধি প্রকৌশলী ইলিয়াছ মিয়া অংশ নিলে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান তার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে তাকে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেন। ডিএসসিসিকে এতদিন প্রতিষ্ঠানটি যে সেবা দিয়ে আসছিল, তা আর দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সাতত্যর কর্ণধার স্থপতি রফিক আজম জানান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের জুন মাসে। আড়াই বছর ধরে তারা চুক্তি নবায়ন না করলেও কিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে।
সারাবাংলাকে অধ্যাপক রফিক আজম বলেন, ‘এরপরও নগরের সৌন্দর্যবর্ধনে দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সিটি করপোরেশনকে সহযোগিতা করে আসছিলাম। কিন্তু সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সবসময় খারাপ আচরণ ও দুর্ব্যবহার করেন। সর্বশেষ একটি বৈঠকে অংশ নিতে গেলে সাতত্যর প্রকৌশলী ইলিয়াছ মিয়াকে দক্ষিণ সিটির প্রধান প্রকৌশলী সভাকক্ষ থেকে বের করে দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা দেখিয়েছে চুক্তিতে নাম না থাকা। কিন্তু এতদিন ধরে আমরা নিজ উদ্যোগে সেবা দিয়ে আসছি, শহরের খেলার মাঠ উদ্ধার ও সৌন্দর্যবর্ধনে সাহায্য করছি, সেটি তিনি মাথাতেই রাখলেন না।’
সাতত্যর এই কর্ণধার আরও বলেন, নিজের পকেটের টাকা দিয়ে কাজ করছি। আমাদের তিন কোটি টাকার বিল বকেয়া। ওসমানী উদ্যানের কাজ শুরু করতে আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা করেছি। গত ২৮ ডিসেম্বরও আমি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করেছি। বিল ছাড়াই আমরা সব কাজ করেছি। এরপর টেন্ডার হয়েছে। এখনো আমরা তত্ত্বাবধান করছি। অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছি, আমাদের টাকা পরে দিলেও সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের যেন বেইজ্জতি করা না হয়।’
তা সত্ত্বেও প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমান অব্যাহতভাবে প্রতিনিধিদের সঙ্গে অপেশাদার আচরণ করেন, যা মেনে নিতে না পেরেই সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ করার কথা জানানো হয়েছে বলে জানান রফিক আজম।
সাতত্যর চিঠির জবাবে সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, সাতত্য-জেপিজেডের সব বিল পরিশোধ করা হয়েছে। তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলীর আচরণ নিয়ে সাতত্যর যে অভিযোগ, সে বিষয়ে সিটি করপোরেশন কিছুই বলেনি।
অধ্যাপক রফিক আজম বলেন, এই বয়সে এসে একজন শিক্ষক হিসেবে সম্মানটুকুই চাই। সেটুকু না পেলে কাজ করা তো সম্ভব না। ঢাকা আমার নিজের শহর। সবুজ নিয়ে আমার কাজ। আমি কাজের সুযোগ চাই, সেইসঙ্গে চাই উপযুক্ত সম্মান।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চাইতে গেলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তার কার্যালয়ে গিয়ে পরিচয় ও দেখা করার উদ্দেশ্য জানিয়ে চিরকুট পাঠালে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি এই প্রতিবেদকে বসিয়ে রাখেন। এরপর মুখোমুখি হলে তিনি না দাঁড়িয়েই হাঁটতে হাঁটতে বলেন, ‘এটি পাবলিক রিলেশনের বিষয়। আমি কোনো কথা বলব না।’
তার আচরণ নিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা কীভাবে ব্যাখ্যা দেবেন— জানতে চাইলে কোনো উত্তর না দিয়েই স্থান ত্যাগ করেন আশিকুর রহমান। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসেরও কোনো বক্তব্য দেননি।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর