ওয়ালি-উল হক, শিক্ষানবীশ প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইসরাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী জনতার প্রতি সংহতি জানিয়ে ফানুস ওড়ানো হয়েছে চট্টগ্রামের আকাশে। ফানুসের গায়ে লেখা ছিল, ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’। এছাড়া ধর্ষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়াও এবং প্রাণীর প্রতি অবিচার বন্ধ কামনায়ও উড়েছে ফানুস।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রবারণা পূর্ণিমার রাতে নগরীর নন্দনকাননে চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহার থেকে এ ফানুস ওড়ানো হয়। এদিন চট্টগ্রামের বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে নানা ধর্মীয় আয়োজনে ভগবান বুদ্ধের দেবলোক থেকে সাংকশ্য নগরে অবতরণ উদযাপন হয়েছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, প্রবারণা পূর্ণিমার শুভ তিথিতেই ভগবান বুদ্ধ দেবলোক হতে সাংকশ্য নগরে অবতরণ করেছিলেন।
দিনটি উপলক্ষে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী নন্দনকানন বৌদ্ধবিহারে বিকেল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার পর হাজারো মানুষের সমাগম ঘটে, যার মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অনেকে উৎসবে শামিল হন। প্রজ্বলিত মোমের আলোয় ভক্তদের গুরুগম্ভীর প্রার্থনার পাশাপাশি ঢাকের তালে তরুণ তরুণীদের নৃত্য, বাজি ফোটানো ও ঝলমলে আলোকসজ্জা ছিল।
দিনভর পঞ্চশীল, অষ্টশীল, পূজা, ধর্মীয় আলোচনা, পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময়, আহার-বিনোদনের পর সন্ধ্যায় আনন্দমুখর পরিবেশে ফানুস উড়িয়েছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন। শত, শত ফানুস উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা করেন ভক্তরা। আগুনের উত্তাপে বিভিন্ন আকারের ফানুস ওড়ানোর এই দক্ষযজ্ঞ সামলাতে স্বেচ্ছাসেবকরা ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে।
নানা রঙে সজ্জিত বিভিন্ন ফানুসের গায়ে বার্তাও ছিল ভিন্ন। গতানুগতিক বুদ্ধের চিত্র ও বাণীর পাশাপাশি দেখা গেছে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘রেপ ফ্রি বাংলাদেশ’, ‘গাছ কেটে মৃত্যুকে আহ্বান করিয়েন না’, ‘সমস্ত প্রাণীদের প্রতি দায়িত্বশীল হও, এটাই সত্য ধর্ম’- এ ধরনের ভিন্নধর্মী বার্তাও। এছাড়াও শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগের বিখ্যাত চিত্র ‘দ্য স্টারি নাইট’র চিত্র সম্বলিত ফানুসের পাশাপাশি বনের দাবানল নেভাতে যাওয়া সাহসী দমকলকর্মীর চিত্র সম্বলিত ফানুসে লেখা ছিল ‘গ্রেটফুল টু আওয়ার হিরোস’।
হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর পরিবেশে ফানুসের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে আকাশ। এর মধ্যে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লিখে ওড়ানো ফানুসটি নজর কাড়ে সবার। ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও বর্বরতার শিকার অনেকে আবেগাক্রান্তও হন।
সাংস্কৃতিককর্মী ইমা বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনে নিরীহ শিশুদের বিভৎস হত্যাকাণ্ডের যে চিত্র আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, সেটা আমাদের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করছে। এমন বর্বরতা বিশ্বের শান্তিকামী, মানবতাবাদী কোনো মানুষই মেনে নিতে পারে না। আমরা ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি। এমন বর্বরতা বন্ধে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত হওয়ার প্রার্থনা করেছি। এছাড়া রাস্তাঘাটে নিরীহ প্রাণীর প্রতি অবিচার আমরা প্রতিনিয়ত দেখি। অথচ বুদ্ধের বাণী হচ্ছে সকল প্রাণীর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া। সেটাই আমরা স্মরণ করেছি।’
নগরীর কাতালগঞ্জের নবপণ্ডিত বিহার, পাথরঘাটা জেতবন শান্তিকুঞ্জ বিহার, ইপিজেড সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার ও মৈত্রী বনবিহার, চান্দগাঁও সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার, মোগলটুলী শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহার, বন্দর বৌদ্ধবিহারসহ প্রায় প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সকাল থেকেই নানা আয়োজন করা হয়।
ছবি : শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটোকরেসপন্ডেন্ট।
সারাবাংলা/ওইউ/পিটিএম