স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে আট ঘণ্টার মধ্যে এক পরিবহন শ্রমিকের রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, ওই পরিবহন শ্রমিক রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ট্রান্সফরমারের তার চুরি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হন। এ সময় ট্রান্সফরমারের তেল পড়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। এতে তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে শওকত নামে এক পুরাতন তামা-লোহা সামগ্রী বিক্রেতাকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়ার পর ওই পরিবহন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। মৃত নুরুল ইসলাম নাহিদ (৪০) চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বিভিন্ন বাসে সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করতেন। সর্বশেষ তিনি হানিফ পরিবহনে কর্মরত ছিলেন।
এ ঘটনায় আটক মো. শওকত (৩২) নগরীর বাকলিয়া থানার মেরিনার্স সড়কের পুরনো তামা-লোহার সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তার বাড়ি কর্ণফুলী উপজেলায়।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে দুই ব্যক্তি একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে আহত নাহিদকে বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বালুর মাঠ থেকে চান্দগাঁও থানার চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় বাসায় নিয়ে যায় দুই ব্যক্তি। বাসা থেকে নাহিদ ও স্ত্রীকে নিয়ে তারা হাসপাতালের দিকে রওনা দেন। কিন্তু পথিমধ্যে দু’জন নেমে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং তদন্ত শুরু করে।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্ত্রীকে কক্সবাজার যাওয়ার কথা বলে নাহিদ গিয়েছিল রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা এলাকায়। সেখানে তার সঙ্গে জনৈক ওসমানসহ আরও ২-৩ জন ছিল। ভোর রাত ৪টার দিকে ট্রান্সফরমার থেকে তামার তার খুলতে গিয়ে নাহিদ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হন। ট্রান্সফরমার থেকে জ্বালানি তেল পড়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে। এসময় তার সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা শওকতকে ফোন করে। শওকত তাদের কাছ থেকে চোরাই তামা-লোহার সামগ্রী কিনত। শওকতের পরামর্শে ওসমানসহ দুই ব্যক্তি আহত নাহিদকে কর্ণফুলী নদীপথে নৌকায় করে বাকলিয়ায় নিয়ে আসে এবং বাসায় নিয়ে যায়। পরে ঝামেলার কথা ভেবে দুজন মাঝপথে নেমে যায়।’
ওসি জানিয়েছেন, ওসমান পেশায় নৌকার মাঝি। তার ফোন নম্বর সংগ্রহ করে দেখা যায়, তিনি শওকতের সঙ্গে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ৫০ বারের বেশি মোবাইলে কথা বলেছেন। মোবাইল কলের সূত্র ধরে শওকতকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। এরপর শওকত জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদের মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য দেয়।
শওকতের দেয়া তথ্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়ার দাবি করে ওসি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, রাতে ওসমান ও নাহিদের অবস্থান সরফভাটা এলাকায়। পাশাপাশি ওই এলাকার পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম’র সাথে আমরা যোগাযোগ করে সরফভাটা এলাকায় ট্রান্সফরমারের তার কাটার বিষয়েও সত্যতা পেয়েছি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ট্রান্সফরমারের সাথে বৈদ্যুতিক তারগুলোর সচল রাখার জন্য এক ধরনের তেল জাতীয় দ্রব্য থাকে। তার কাটার পর তেল জাতীয় ওই দ্রব্য নাহিদের হাতে ও শরীরে পরে ঝলসে যায়।’
ওসি আব্দুর রহিমের ধারণা, নাহিদ বিদ্যুতের তার চুরি করে এমন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। বৈদ্যুতিক তার চুরির সিন্ডিকেটটিকে শনাক্তের কাজ চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/একেএম