আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির লিমিটেড (সিইউএফএল)। কারখানায় উৎপাদিত সার সারা দেশের ২৮টি গুদাম থেকে সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামসহ আশপাশের আটটি জেলায় সার সরবরাহ করা হয় সিইউএফএল কারাখানা ও কালুরঘাটে অবস্থিত দুটি গুদাম থেকে। চট্টগ্রাম ছাড়া বাকি জেলাগুলো হলো কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর। তবে সার সরবারাহে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন খরচের নামে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশন (বাফা) সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান ও স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের চাঁদা আদায় বন্ধ করে বিপাকে পড়েছেন বলে দাবি করেন কারখানার বর্তমান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা ট্রান্সপোর্টের স্বত্তাধিকারী মুজিবুর রহমান।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বাফার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান উল্টো বর্তমান ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সার সরবরাহে বখশিশের নামে চাঁদা আদায় দাবির অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেন। এতে বর্তমান ঠিকাদারের বিরুদ্ধে বখশিশের নামে চাঁদা আদায়ের কোন প্রমাণ পায়নি বলে জানান কারখানা কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, সিইউএফএলের সার সরবারাহের জন্য ২ কোটি ১১ লক্ষ টাকায় এক বছরের জন্য টেন্ডার পান আনোয়ারা ট্রান্সপোট। গত ১ জুলাই থেকে সার সরবরাহের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও গত ২৫ জুলাই বাফার নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে কালুরঘাট গুদামের ঠিকাদার মেসার্স কাশেম এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী ইফতিয়াল কাশেম চার্লিকে চট্টগ্রামের বাফার প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়ার পরই শুরু হয় উৎপাদিত সার উত্তোলন এবং পরিবহন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র।
বাফা নোয়াখালী জেলার সভাপতি গিয়াস জামাল বলেন, ‘সার উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ হয়নি। আমি গতমাসেও সার এনেছি। আগে সার সরবরাহে একটি চক্র ওভার লোডিংয়ে বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে প্রতি ট্রাকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতেন। কিন্তু বর্তমান ঠিকাদার এবং বাফার প্রতিনিধি এই অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করেছে।’
বাফা লক্ষীপুর জেলার সভাপতি মোহাম্মদ ফারুক বলেন, লক্ষীপুর জেলায় ৬০ জন সারের ডিলার রয়েছে, যারা সিইউএফএলের সার আমদানী করে। বিগত সময়ে প্রতিগাড়ীতে ১৫ টন সার পরিবহনে বখশিশ ও লোকাল গাড়ী ভাড়া দেখিয়ে ১২ শ টাকার স্থলে ২৫শ থেকে ২৬ শ টাকা আদায় করত। এই টাকার কোন প্রকার রশিদ দিতনা। তবে বর্তমানে আমাদের থেকে কোন প্রকার বখশিশ বা বাড়তি টাকা নিচ্ছেনা। এ নিয়মে চললে আমরা ডিলাররা উপকৃত হব।
আনোয়ারা ট্রান্সপোর্টের স্বত্তাধিকারী মুজিবুর রহমান,বিগত সময়ে বাফা সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম খান ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সার সরবরাহে লোকাল গাড়ী এবং বখশিশের নামে বাড়তি টাকা আদায় করত, তাদের এই চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেওয়ায় তারা এখন আমাদের বিরোদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে।
মেসার্স কাশেম এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী ও বাফার চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ইফতিয়াল কাশেম চার্লি বলেন, আমি গত ২৫ জুলাই থেকে দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত করে জানতে পারলাম বিগত প্রতি টন সারে ৫৫ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা আদায় করত। এতে ১৫ টনের গাড়ীতে ১৩ শ টাকার স্থলে বিভিন্ন অযুহাতে ২৬শ টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন। বর্তমান ঠিকাদার ও আমি চট্টগ্রাম বাফার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে আসার পর এই অতিরিক্তি টাকা আদায় বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতে তারা আমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। চলতি মাসে সিইউএফএল কারখানা ও কালুরঘাট গুদাম থেকে সার সরবরাহ একদিনের জন্যও বন্ধ ছিলনা। কিন্তু একটি চক্র সার সরবরাহ বন্ধ বলে গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ডিলারদের থেকে পূর্বের ন্যায় অতিরিক্ত টাকা আদায় না করায় তারাও বর্তমানে সন্তষ্ট। আমি দায়িত্ব পাওয়ার কারনে চক্রটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
বাফার নির্বাহী সচিব রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিইউএফএল এ সার কারখানায় কমান্ড জেলা সমুহে বিসিআইসি ডিলার বৃন্দের নিকট সুষ্ঠ ভাবে সার সরবরাহ দেওয়ার সময় কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে বিএফএ’র পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করা জন্য চট্টগ্রাম জেলার সার সরবরাহকারী প্রতিষ্টান এবং বিএফএ’র সদস্য মেসার্স কাশেম এন্ড ব্রাদার্সের স্বত্তাধিকারী ইফতিয়াল কাশেম চার্লিকে চট্টগ্রাম প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করা হল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, উদ্ধুত পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক বৈঠক করেন। এতে সিদ্ধান্ত হয় কালুরঘাট গুদাম থেকে প্রতি ট্রাকে ৮ টণ করে সার সরবরাহের সিদ্ধান্ত হয়। তবে কালুরঘাট গুদামে সিইউএফএল কর্তৃক তদন্ত কমিটি বখশিশের নামে চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে কোন প্রমাণ পায়নি।