বর্তমানে প্রতিনিয়তই অনেকে নিজের দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার জন্য নানান রকম পদক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে। আর এমনই একজন উদ্যোক্তা হলেন ফাইজাহ্ ওমর তূর্ণা, যার জন্ম বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলায়। তিনি কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংলিশ ও লিটারেচার বিভাগের একজন ছাত্রী। আর তার দেশীয় পণ্য নিয়ে উদ্যোগের নাম হলো ” আরঁশিলতা “ , যা মূলত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ। বর্তমানে ফাইজাহ্, শাহীনুর রহমান শিমুল ও আরিফ আহমেদ তিনজন মিলে এই উদ্যোগটি নিয়ে কাজ করছেন।
ফাইজাহ্ শুরুটা করেছিলেন হঠাৎ করেই একদম একা হাতে। ২০১৮ সালে “উইনেম এন্টারপ্রেনারশিপ“ নামে একটা ৩ দিন ব্যাপী ট্রেনিং এ যুক্ত হন, ইউএন উইমেন এর একটি প্রজেক্ট যা শুধু জাককানইবি আর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয়। ৩ দিনের ট্রেনিং শেষে তিনি এক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। তিনি জানতে পারেন কীভাবে নিজেকে আত্মনির্ভর করা যায় সামাজিক উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে। শুরুতে ওই ট্রেনিং তার জন্য লাইফের একটা লার্নিং পার্ট ছিলো। ছোটবেলা থেকে ড্রয়িং এর প্রতি আগ্রহ ছিল পাশাপাশি ক্যাম্পাসে ডিপার্টমেন্টে ক্রাফ্ট এর কাজ, স্টেজ বানানোর কাজ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। আর তখনই সে ভাবলো কিছু করা যাক নিজের মতো করে। আর ওই মুহূর্তে কাঠের গহনা টা খুব চলমান ছিল। যেই ভাবনা সেই কাজ নিয়ে নিজের জমানো মাত্র দুই হাজার টাকায় গহনা বানানোর কাঁচামাল কিনে নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিল। একটা পেইজ (আঁরশিলতা/Arshilota) ও খুলে নিলেন ১০ এপ্রিল ২০১৯, এটাই ছিল তার প্রথম পদক্ষেপ। হলের আপুদের থেকে এবং ডিপার্টমেন্ট থেকে অনেক সারা পেয়েছিলেন। যার মাধ্যমে তার এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়।
আরঁশিলতার মূল লক্ষ্য হলো “An Oasis of Pleasure “ অর্থাৎ আমরা গ্রাহকের সন্তুষ্টি এবং বিশ্বাসে বিশ্বাসী। তাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশীয় পণ্যগুলি প্রদর্শন করা এবং স্থানীয় শিল্পীদের সহায়তা করা । স্থানীয় দেশীয় শিল্প, স্থানীয় দেশীয় পোশাক খাদি পাঞ্জাবি ,বাটিক শাড়ি থ্রি-পিস,মণিপুরি শাড়ি,থ্রি-পিস,ওড়না টাংগাইলের শাড়ি , সিলেটের চা, হস্তশিল্প, গহনা-কাঠের ও এন্টিকের, ড্রাইফ্রুটস , কাজু বাদাম, কাঠ বাদাম , সুন্দরবনের মধু ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে তারা। আরঁশিলতা স্থানীয় দেশীয় শিল্পকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা করছে। আর তারা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তাদের পণ্যগুলো সরবরাহ করছে। পুরো বাংলাদেশে সুন্দরবন কুরিয়ার পরিসেবা বা এস.এ পরিবহন এর মাধ্যমে পণ্যগুলো সরবরাহ করছে।
ফাইজাহ্ ও শাহীনুর রহমান দুইজন ই এক ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ফাইজার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র তার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখে এ উদ্যোগের সাথে যুক্ত হন। বর্তমানে সে এমন দুই জন সহযোদ্ধা পেয়েছে যার মাধ্যমে আঁরশিলতার নাম এখন দেশ ব্যাপী। শাহীনুর রহমান বর্তমানে আঁরশিলতার ম্যানেজমেন্ট এর কাজগুলো করছেন ময়মনসিংহে এবং ডিজিটাল কাজগুলো সব আরিফ আহমেদ দেখছেন। আসলে কোনো কিছুই ভালো টিম ছাড়া সম্ভব না। বর্তমানে এই লকডাউনের মধ্যেও তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তারা মূলত গত লকডাউন থেকেই মাঠে নামে আরও ভালো ভাবে। এখন পর্যন্ত আনুমানিক ৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন। উদ্যোক্তা হওয়া যেমন সহজ তেমন কঠিন। প্রোডাক্ট সোর্সিং,প্রডাক্ট এনে প্রসেসিং করা, ফটোগ্রাফি, পেইজে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন, ক্রেতার সাথে প্রোডাক্ট পাঠানো পর্যন্ত ক্রেতার পছন্দ হলো কিনা সবই বিজনেসের একটি অংশ , যা একটি আর একটির সাথে জড়িত। এছাড়াও ডিজিটাল প্রচার তো রয়েছেই। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটো মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন তারা তাদের পণ্য নিয়ে।
নতুনদের উদ্দেশ্যে ফাইজাহ্ বলেন, ” আমরা স্বপ্ন দেখি একদিন বড় উদ্যোক্তা হবার। কথাটি আমাদের কাছে অনেক বড় মনে হলেও অত সহজ নয়। আমার কাছে এখন মনে হয় মানুষ যত হোচট খাবে তত শিখতে পারবে। তখন উদ্যোক্তা কথার মানেও বুঝবে। তাই চেষ্টা করা উচিত কিছু করার,কিছু শিখার। নিজের জন্য নয় অন্য ১০ জন যেন আমাদের দ্বারা উপকৃত হয় এমনভাবেই কাজ করা উচিত। আমি বিশ্বাস করি কেউ যদি তার চিন্তা ধারায় যখন পজিটিভ থাকে তখন খুব কঠিন কাজটাও সহজ হয়ে যায়। নিজেকে তৈরি করতে হলে নিজের চিন্তা ভাবনার স্তর ও বাড়াতে হবে। আমার মতে ভাগ্যকে নিজের হাতে তৈরি করে নিতে হবে তাহলেই সফলতা আসবে। এই সময়ে যারা পরিশ্রম করবে তারাই আসল। তাই সবারই নিজের মতো চেষ্টা করা উচিত পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য“।
রাজিয়া রহমান
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ইন্টার্ন
ওয়াইএসএসই