জীবন ধারণের তাগিদে মানুষকে বেছে নিতে হয় কোনো না কোনো পেশাকে। আর ভালোলাগার কাজকে পেশা হিসেবে পাওয়াটা আমাদের সবার জন্যই আনন্দের ব্যাপার। অনেকেই আবার প্রতিনিয়ত খুঁজে নিচ্ছেন নিজের পছন্দ মত কাজ এবং হয়ে উঠছেন উদ্যোক্তা। আর এমনই একজন উদ্যোক্তা হলেন মৌরী মনিকা কস্তা, যিনি তার ভালোলাগার কাজকেই নিজের উদ্যোগ হিসেবে নিয়েছেন। আর তার উদ্যোগের নাম দিয়েছেন তিনি ” পুতুলা “, যেখানে মূলত হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাক, গয়না ও ঘর সাজানোর জিনিস নিয়ে তার কাজ।
তার জন্ম গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার অধীন তুমিলিয়া গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে বাবার চাকুরির সুবাদে পরিবারসহ চলে আসেন ঢাকার মিরপুরে। হলিক্রস স্কুল ও কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়েন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে ইংরেজীতে অনার্স করেন। অনার্স প্রথম বর্ষে থাকা অবস্থায় একটি পার্ট টাইম চাকুরি শুরু করেন তিনি এবং পরবর্তীতে সেখানে স্থায়ীভাবে নিয়োগ পান। কিন্তু অন্যের অধীনে কাজ করাটা ঠিক ভালো লাগার জায়গাটার সাথে মিল ছিল না তার কোনোভাবেই। আর করোনার সময়ে চাকুরীতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসতে থাকায় তিনি ও তার স্বামী মিলে আবার গাজীপুর ফিরে আসেন। তখন ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়ে আসা বইয়ের “উদ্যোক্তা“ ও “আত্মকর্মসংস্থান” এই শব্দ দুটো তাকে দারুণভাবে উৎসাহ দেয় নিজের একটা পরিচয় গড়ে তোলার। তাহলে জানা যাক তার উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প :
YSSE: কত টাকা নিয়ে আপনি এই উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করেন এবং আপনার এই হ্যান্ডপেইন্ট কাজগুলো সাধারণত কে করে থাকে?
মৌরী মনিকা কস্তা: চাকুরির সঞ্চয়ের থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে আমি প্রথম শুরু করি আমার এই উদ্যোগ, আর আজ আমি একজন উদ্যোক্তা এবং আমার সব পণ্যের উপর হ্যান্ডপেইন্ট এর কাজগুলো আমি নিজেই করে থাকি।
YSSE: কাজ শুরু করার জন্য আপনি হ্যান্ডপেইন্টেড পণ্যই কেন বেছে নিলেন?
মৌরী মনিকা কস্তা: আকাঁআকিঁর প্রতি প্রচন্ড ভালোলাগা ছিল ছোটবেলা থেকেই। আর অনলাইনেও হ্যান্ডপেইন্ট এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় হ্যান্ডপেইন্টেড পোশাক, গয়না ও ঘর সাজানোর পণ্য নিয়ে ২০২০ সালের জুলাই মাসে আমার স্বপ্নের উদ্যোগ “পুতুলার” যাত্রা শুরু করি।
YSSE: একজন সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনে আপনার অনুপ্রেরণা হিসেবে কে বা কারা রয়েছে?
মৌরী মনিকা কস্তা: আমার এই স্বপ্নযাত্রায় আমার সাথে অনুপ্রেরণা হয়ে আছে আমার পরিবার যারা আমাকে মানসিক শক্তি যুগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তার সাথে উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম ( উই গ্রুপ ) ও ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপ(ডিএসবি)। এই দুটো গ্রুপের কথা উল্লেখ করার কারণ হলো উদ্যোগ শুরুর প্রথম দিকেই অনেক বাধা ও হতাশা আসতে থাকে, সে সময়টায় উই গ্রুপে সবার কর্মতৎপরতা ও সফলতার গল্পগুলো দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলো আমাকে। এই উই গ্রুপের মাধ্যমেই ডিএসবি গ্রুপের দেখা পাই যেখান থেকে উদ্যোগ পরিচালনার যাবতীয় খুঁটিনাটি জ্ঞান ও নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ পাই আমি।
YSSE: যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয় এই উদ্যোক্তা হয়ে উঠার পিছনে আর কোনো উদ্দেশ্য আছে নাকি?
মৌরী মনিকা কস্তা: আত্মকর্মসংস্থান তৈরি করবো ও একটা সময় আরো অনেকের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি করবো এটাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য এবং এখনো এই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
YSSE: একজন উদ্যোক্তা হিসেবে ” পুতুলা ” নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মৌরী মনিকা কস্তা: “পুতুলা“ আমার স্বপ্নের ও ভালোলাগার একটি জায়গা। আমার নামের সাথে আমার উদ্যোগের নামটি একই সমান্তরালে উচ্চারিত হবে এটাই আমার স্বপ্ন। অনলাইন এর পাশাপাশি নিজের একটি অফলাইন শপ করার ইচ্ছা আছে যেখানে সবাই পুতুলার নিজস্ব পণ্যগুলো নিজের করে নিতে পারবে হাতে স্পর্শ করে।
YSSE: নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কি কোনো দিকনির্দেশনা দিতে চান?
মৌরী মনিকা কস্তা: আমার উদ্যোগ পুতুলা কে নিয়ে এই সময়ের মধ্যে আমি যা শিখেছি তা হলো, উদ্যোগকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট পণ্য সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান রাখা। কারণ দক্ষতা এমন একটি শব্দ যা আমাদের প্রতিনিয়ত এগিয়ে রাখে আর দশ জনের থেকে। আপনি যেই পণ্য নিয়েই কাজ করুন না কেন, আগে তার সম্পর্কে জানুন, বুঝুন, শিখুন এবং তারপর তাকে সুন্দর ও তথ্যপূর্ণ উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট আকর্ষণীয় করে তুলুন!
আমি ব্যক্তিগতভাবে বলবো, বর্তমান সময়ে নতুন উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও উদ্যোগ পরিচালনার যাবতীয় জ্ঞান এর লাইব্রেরি হলো “ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ” গ্রুপ। আমার দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোগকে গুছিয়ে পরিচালনা করার পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল এই গ্রুপের।
রাজিয়া রহমান
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ইন্টার্ন
YSSE