উদ্যোক্তা দম্পতি জি,এম-আদল এবং সিরাজুম মুনিরা।
তাদের উদ্যোগের নাম আমারপিরোজপুর.কম। “পিরোজপুর জেলাকে ব্রান্ডি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য” এই স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে তাদের যাত্রা শুরু। জেলার পণ্য ব্রান্ডিং করার এটি একটি ভিন্নধর্মী উদ্যোগ।
জি,এম-আদল এবং সিরাজুম মুনিরা দম্পতি, দুজনই গ্রাজুয়েট। আমারপিরোজপুর.কম এর সহ উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছে এই তরুণ দম্পতি ।
জি,এম-আদল ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করে আর সিরাজুম মুনিরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসন বিষয়ে পড়াশুনা শেষ করেছেন।পড়াশুনা শেষ করে চিরাচরিত চাকরির পিছনে না ঘুরে তারা হয়েছেন উদ্যোক্তা।
আমারপিরোজপুর.কম এর যাত্রার শুরুর গল্প জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা দম্পতি জানান, “মাধ্যমিক,উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে গ্রাজুয়েশন করার উদ্দেশ্যে যখন আমরা ভার্সিটিতে যাওয়া শুরু করি তখন বন্ধুরা অন্যদের মত জিজ্ঞেস করত আমাদের জেলা কোথায়, পিরোজপুর জেলার নাম বললে অনেকেই একবারে সঠিকভাবে চিনত না। তখন থেকেই নিজের জেলাকে সবার মাঝে পরিচিতি করার একটি স্বপ্ন ছিল। ভাবতাম নিজের জেলাকে নিয়ে এমন একটা উদ্যোগ নেব যার মাধ্যমে এক নামে সবাই পিরোজপুর জেলাকে চিনবে। এভাবেই আমারপিরোজপুর.কম নিয়ে শুরু।
একই জেলার মানুষ আমরা দুজন, আমরা চাকরির জন্য দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জয়েন করি। পরাধীন চাকরি খুব ভাল লাগছিল না। এরই মাঝে হঠাৎ করোনা ভাইরাস প্রোকট আকার ধারণ করে এবং লক ডাউনের পরে আমরা উভয়েই চাকরি হারাই। চরম সমস্যায় পরি, তবুও হতাশ হইনি। চাকরি যেহেতু পাচ্ছিলাম না হাতে চাকরি থেকে আয় করা যে স্বল্প পরিমান টাকা ছিল তা নিয়ে আমাদের উদ্যোগ আমারপিরোজপুর.কম এ পুরোদমে সময় দেয়া শুরু করি। অনলাইনে বেশি করে প্রচার প্রচারণা শুরু করি। ভাল রেসপন্স আশা শুরু করে। এক্ষেত্রে অনেক কাছের বন্ধুরা এগিয়ে এসেছিল। তাদের কাছে কৃতজ্ঞ, হয়ত তাদের কারনেই আজ আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে।”
আমারপিরোজপুর.কম এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা জানান, “পিরোজপুর একটি মৎস ও কৃষি নির্ভর জেলা। কৃষকরা নানা রকমের ফসল এখানে ফলায়। তার মধ্যে মাল্টা, কালোজিরা, চাল অন্যতম। পিরোজপুরকে মাল্টার সুবর্ণভূমি বলা হয়। মাল্টা এ জেলার সরকার কর্তৃক স্বীকৃত একটি ব্র্যান্ড। পিরোজপুরকে বলা হয় মাল্টার সুবর্নভূমি।
অন্য দিকে পিরোজপুর একটি নদী বিধৌত জেলা। জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নদী- খাল। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা গড়ে উঠেছে এই নদীকে কেন্দ্র করে। এদের মধ্যে রয়েছে জেলে সম্প্রদায়, যারা নদীতে ও সাগরে মাছ ধরে, আবার কেউ কেউ রয়েছে, যারা মাছ শুটকি করে জীবিকা নির্বাহ করে। এর উপর ভিত্তি করে অনেক শুটকিপল্লীও গড়ে উঠেছে এখানে।
এছাড়াও এই এলাকার কিছু মানুষ প্রাচীন কাল থেকে শীতল পাটি শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। মিষ্টি বাঙালির আপ্যায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাঙালির যেকোনো অনুষ্ঠান মিষ্টি ছাড়া অপূর্ণ থেকে যায়। এর মধ্যে রসগোল্লার স্থান সবার উপরে। শত বছরেরও বেশি সময় ধরে এই এলাকার রসগোল্লা ব্যাপক সমাদৃত। প্রবীণ বিশেষজ্ঞদের মতে রসগোল্লার আদি উৎপত্তিস্থল এই পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায়।
বর্তমানে আমারপিরোজপুর.কমের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এই অঞ্চলের বিখ্যাত রসগোল্লাসহ কৃষকদের উৎপাদিত অর্গানিক সুগন্ধি কালোজিরা চাল,অর্গানিক মাল্টা ও শুটকি দেশের নানা প্রান্তে সরাসরি ভোক্তাদের বিপণন করা হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন এবং দেশের নানা প্রান্তের সাধারণ ভোক্তারা তাদের কষ্টার্জিত টাকায় ভেজালমুক্ত পণ্য কিনতে পারছেন।
এ জেলার শীতলপাটিসহ কিছু শিল্প বিলুপ্তির মুখে। এই শিল্পগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমারপিরোজপুর.কম প্রতিনিয়ত কাজ করছে। আমারপিরোজপুর.কম এ এখন পিরোজপুর জেলার বিখ্যাত শীতলপাটিও পাওয়া যায়।”
তারা ইতিমধ্যে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৪ টির অধিক জেলার মানুষের কাছে আমার পিরোজপুর.কম এর পণ্য পৌছাতে সক্ষম হয়েছে। দিন দিন মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাসে এগিয়ে যাচ্ছে আমারপিরোজপুর.কম, এটি এখন অনেকের কাছেই একটি ব্রান্ডের নাম। আমারপিরোজপুর.কম কে এগিয়ে নিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করছে পিরোজপুর জেলার বিসিক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃপক্ষ (বিডা),ইএসডিপি সহ আরো অনেকে।
এই উদ্যোগের উদ্যোক্তা জি, এম আদল এবং সিরাজুম মুনিরা দম্পতি স্বপ্ন দেখেন জেলার শত বেকার তরুণের কর্মসংস্থান হবে আমারপিরোজপুর.কমের মাধ্যমে।