সময়ের জনপ্রিয় পেশা ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং। অনলাইনে কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলো দেশের নিবন্ধিত ২ লাখের অধিক ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। তবে সফলদের সংখ্যা অর্ধ লক্ষাধিক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী রয়েছে।
ফ্রিল্যান্সিং দেশের লাখো তরুনের জীবন বদলে দিয়েছে। নারীরাও কাজের ক্ষেত্রে হিসাবে বেছে নিচ্ছেন এ পেশাকে। অনেকের জীবন বদলের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে নতুন কাজের এ ক্ষেত্রটি। স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারেও হাসি ফুটিয়েছেন তারা।এমনই তিন নারী ফ্রিল্যান্সারদের কথা জানাতে এ প্রতিবেদন। এ তিন জন এবার কাজের গুণে দেশ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের সম্মানিত করেছে সফটওয়্যার রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। এ তিন ফ্রিল্যান্সার শুধু নিজের গন্ডিতে নয়, বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছেন।দেশে ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং পেশাকে উৎসাহিত করতে ২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর আউটসোর্সিং পুরস্কার দিচ্ছে বেসিস। গত ১৩ এপ্রিল বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে একশ’ জন ফ্রিল্যান্সার ও আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়।এবারের সেরা নারী ফ্রিল্যান্সাররা হলেন সুলতানা পারভীন, সায়মা মুহিব ও মাহফুজা সেলিম। টেকশহরডটকমের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন পুরস্কার পাওয়ার পিছনের কথা ও আগামীর লক্ষ্য।
নোয়াখালীর মেয়ে সুলতানা পারভীন। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। উচ্চ মাধ্যমিকের পর বিয়ে হয় নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তার সঙ্গে। রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করার পর ভাবলেন নিজে কিছু করার।তখন নৌ-পরিবার কল্যাণ সংঘ এবং নৌবাহিনী লেডিস ক্লাবের সংগঠনিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। আগে থেকেই লেখার অভ্যাস থাকার কারণে বিভিন্ন ধরণের খাবারের রেসিপি লিখে জমাতে থাকেন। ২০০৯-২০১০ সালে স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে ইংরেজি ডিপ্লোমা কোর্স করেন। সেখানে থাকার সময় বই, পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও ইন্টারনেটে বিভিন্ন লেখা পড়ে আউটসোর্সিংয়ের ওপর আগ্রহ জন্মে সুলতানার।২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ২ দিনের একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চট্টগ্রামের বিকন আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন।প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়েই ওডেস্কে অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ শুরু করেন। প্রথমে ৫ ডলারের একটি প্রজেক্ট পান ইয়াহু অ্যান্সারের। তখন দেখলেন আউটসোর্সিংয়ে নিজের পছন্দের বিষয়ে কাজ করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তাই লেখালেখির বিষয়ে আবারও মনযোগ দেন।বর্তমানে রেসিপি, বুক রিভিউ, রিজিউম, কাভার লেটার ও লিংকডইনের কাজ করেন ও ভালো সাড়া পান। মাসে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করেন দেশসেরা এই নারী ফ্রিল্যান্সার।
আগামীতে নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেখালেখি (কনটেন্ট রাইটিং) সেবা দিতে চান সুলতানা পারভীন। এছাড়া নিজস্ব একটি রেসিপি সাইট করার পরিকল্পনাও রয়েছে তার।ময়মনসিংহের মেয়ে মাহফুজা সেলিম। তিন বোনের মেধ্য তিনিই ছোট। পড়োশোনা ও কাজের খাতিরে গত ৮ বছর ধরে ঢাকাতেই আছেন বড় বোনের সঙ্গে। বর্তমানে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পড়ছেন।আউটসোর্সিং পেশা শুরু করার আগে ২০১০ সালে গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর একটা কোর্স করেন মিরপুর অবস্থিত ‘নিডিট’ নামক প্রতিষ্ঠান থেকে। এরপর চাকরি খুঁজছিলেন।২০১১ সালের প্রথমদিকে এক বন্ধুর কাছ থেকে শোনেন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে। তার কথা শুনে বাসায় ইন্টারনেট সংযোগ নেন। ওই বছরে ওডেস্কে একটা অ্যাকাউন্ট খুলে কাজ শুরু করেন।মাহফুজা সেলিম কাজ করছেন গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে। ‘চিলড্রেন’স বুক ইলাস্ট্রেশনের কাজ বেশি করেন। মূলত শিশুতোষ গল্পগুলোকে চিত্রে রূপ দেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি।আগামীতে আউটসোসিং পেশাকে আরও ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট দিতে চান মাহফুজা। তিনি মনে করেন তার এখনও শেখার অনেক বাকি আছে। তাই নিজেকে আরও ভালোভাবে তৈরি করতে চান তিনি। শুধু টাকার জন্য নয়, শেখার জন্যও কাজ করছেন তিনি।
ঢাকা সিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী সায়মা মুহিব তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। ২০১১ সালে কলেজে পড়াকালীন সময়ে ইন্টারনেটে ইউটিউব ভিডিও এবং আর্টিকেল পড়ে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট কাজ শেখেন।ওডেস্কে প্রোফাইল খুলে শুরু করেন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের কাজ।বর্তমানে ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজও করেন। ওডেস্কে সর্বোচ্চ ৫ রেটিংয়ে প্রোফাইল থাকা সায়মা মুহিব বর্তমানে দিনে ১৫-১৬ ঘন্টা কাজ করেন।স্বামী মহিউদ্দিন মুহিবও আউটসোর্সিং পেশায় আছেন। গত বছর তিনিও বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড পান। মূলত স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই অনেকাংশে এগিয়ে গেছেন, এমনটাই মন্তব্য করেন সায়মা।সংসারের পাশাপাশি পুরোদমে চলছে সায়মা মুহিবের ফ্রিল্যান্সিং পেশা। বর্তমানে মাসে দেড় লাখের অধিক আয় করেন তিনি।সায়মা মনে করেন, ফ্রিল্যান্সার ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্ভব না। তাই দক্ষ ফ্রিল্যান্সার তৈরিতে আগামীতে কাজ করতে চান তিনি।