মোঃ আল জাবেদ সরকারঃ ৩১ মে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে, ‘Commit To Quit’ ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের পূর্বেই তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্য পূরণে তামাক পণ্যের উপর উচ্চ হারে করারোপ এবং তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন সংশোধন এখন অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছ।
সারা পৃথিবীতে তামাক বৈধ পণ্য হলেও এর কারনে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করে। তামাক শুধু মানুষের সু-সাস্থ্যর অন্তরায় না একই সাথে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালনে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের দায়িত্ব।
অধূমপায়ীর তুলনায় ধূমপায়ীর ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ২৫ গুণ। এছাড়া সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ মহামারিতে ধূমপায়ীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি ৪০ – ৫০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ২৬ হাজারের অধিক মানুষ মারা যায়।তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস), ২০১৭ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৫ বছর তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ)। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৮ শতাংশ, যেখানে অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠির মধ্যে এই হার মাত্র ২৪ শতাংশ। গ্যাটস ফলাফলে আরো দেখা গেছে, ২০০৯ সালের তুলনায় একজন বিড়ি ব্যবহারকারীর বিড়ি বাবদ মাসিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে, সিগারেট ক্রয় করতে একজন ধূমপায়ীর গড় মাসিক ব্যয় হয় ১০৭৭.৭ টাকা। অথচ শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য একটি পরিবারের মাসিক গড় ব্যয় যথাক্রমে মাত্র ৮৩৫.৭ এবং ৭০০ টাকা (খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১৬)। সাম্প্রতিক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক স্কুলে পড়া ৯৫ শতাংশ শিশুর শরীরে উচ্চমাত্রার নিকোটিন পাওয়া গেছে, যার মূল কারণ পরোক্ষ ধূমপান।
ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র – ডরপ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণে সুপারিশমালাঃ
Ø মায়েদের সচেতন করলে ঘর থেকেই শুরু হবে তামাক নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম যেখানে মায়েরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
Ø তরুনরা বিশেষ করে নতুন যারা তামাক শুরু করে (১৩-১৪ বছর বয়স থেকে) তাদের সচেতন করে তামাক ব্যবহার বন্ধ করা।
Ø প্রতিটি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে অধুমপায়ী আবেদনকারীকে অগ্রাধিকার দেয়া, এতে করে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা ধুমপান শুরু করবে না।
Ø সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে সিগারেট সকল তামাক পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের বিশেষ করে তরুণ ও দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া।
Ø মধ্যমেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্রান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা;
Ø ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্তসহ সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে শত ভাগ ধূমপান মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা;
Ø বিক্রয় স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা;
Ø বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা;
Ø সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ।