ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডেস্ক ::
পানামায় শেষ হলো জাতিসংঘ জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত পরামর্শদাতা সংস্থার ২৭তম অধিবেশন (#SBSTTA27)। পাঁচ দিনের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন নিয়ে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ গ্রহণ করেছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি থাকলেও কিছু বিষয়ে এখনো মতভেদ রয়ে গেছে। যা আগামী ২০২৬ সালের অক্টোবরে আর্মেনিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য কপ১৭ সম্মেলনে সমাধান করতে হবে।
বৈঠকটি ২০ অক্টোবর শুরু হয়ে ২৪ অক্টোবর শেষ হয়। পাঁচ দিনের এই আলোচনায় প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং কুনমিং-মন্ট্রিয়ল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক (জিবিএফ)-এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি। রাত ১১টা ২ মিনিটে গ্যাভেল বাজিয়ে বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আলোচনা ছিল সবচেয়ে বিতর্কিত। বাস্তুতন্ত্রভিত্তিক অভিযোজন নির্দেশিকা নিয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় কিছু প্রস্তাব বন্ধনীর মধ্যে থেকে যায়। তবে তিনটি ‘রিও কনভেনশন’—জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও মরুভূমিকরণ—এর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে সবাই একমত হন।
বৈঠকে আলোচনার মূল বিষয় ছিল কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের সম্পর্ক, জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এবং কুনমিং-মন্ট্রিয়ল গ্লোবাল বায়োডাইভার্সিটি ফ্রেমওয়ার্ক -এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি।
জিবিএফ বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনায়, প্রতিনিধিরা স্থানীয় জনগোষ্ঠী, নারী ও যুবসমাজের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পাশাপাশি জাতীয় সরকারের বাইরের বিভিন্ন অংশীদারের প্রতিশ্রুতি ও কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে আলোচনায়।
কৃষি ও জীববৈচিত্র্য ইস্যুতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো টেকসই মাটি ব্যবস্থাপনা এবং কৃষি, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য খাতের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়। তারা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-কে ২০২০–২০৩০ সালের মাটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের নেতৃত্ব অব্যাহত রাখার আহ্বান জানায়।
শেষ দিনে গৃহীত ১০টি সুপারিশের মধ্যে ছিল জীববৈচিত্র্য ও কৃষি, স্বাস্থ্য, বন, জলবায়ু পরিবর্তন, বিদেশি আগ্রাসী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণ এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত জীবের ঝুঁকি মূল্যায়নসহ নানা বিষয়।
আঞ্চলিক প্রতিনিধিরা ও পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো বৈঠকের অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি জানালেও রাজনৈতিক মতভেদের কারণে কিছু বিষয় অমীমাংসিত থেকে যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাড়তি অর্থায়ন, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর জোর দেন।
সমাপনী বক্তব্যে সিবিডির-এর নির্বাহী সচিব অ্যাস্ট্রিড শোমেকার বলেন, “জীববৈচিত্র্য ক্ষয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ—এই তিন সংকট মোকাবিলায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতাই একমাত্র কার্যকর পথ।”
সভাপতি জ্যাঁ ব্রুনো মিকিসা (গ্যাবন) প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “বিজ্ঞাননির্ভর নীতি ও সহযোগিতার মাধ্যমেই জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় রোধ করা সম্ভব।”
বাংলাদেশের তরুণ জলবায়ু কর্মী সোহানুর রহমান জানান, “এই আলোচনা আমাদের দেখিয়েছে যে, বৈশ্বিক সহযোগিতার ইচ্ছা থাকলেও বাস্তবায়নের পথে এখনো অনেক বাধা রয়ে গেছে। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু-সংবেদনশীল দেশে এই আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তব পদক্ষেপ ও অর্থায়নে রূপ নেওয়াই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”