কখনো কি এমন হয়েছে যে আপনি উৎসাহী হয় কোনো কিছু অর্ডার করলেন তবে তা আসতে এতটাই সময় নিল যে আপনার সব উৎসাহ মাটি হয়ে গেল? খুবই বিরক্তিকর তাই না? রাজীব দাস কে এর জন্য প্রায়ই ভোগান্তি পোহাতে হতো। কানাডা থেকে ফিরে এসে যখন পরিবারের টেক্সটাইল ব্যবসায় হাত দিলেন তখন থেকেই ক্লায়েন্টদের একটা অভিযোগ বারবার শুনতে হতো তাকে। পণ্য আসতে দেরি হচ্ছে। শুধু এই একটা সমস্যাই তাদের ব্যবসায় একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে থাকে। রাজীবকে তো বটেই, রাজিবের বাপ-দাদা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল শিল্পপতি কে এই এক সমস্যার মাঝে দিয়ে যেতে হয়।
একদিন যখন উবার রাইডের মাধ্যমে যাত্রা করেছিলেন তখন উবার এর একটা ব্যাপার তাকে খুবই আকৃষ্ট করে। গাড়ীর জন্য অপেক্ষা না করেই পরিবহন সেবা গ্রহণের ধারণাটির মাধ্যমে রাজিবের উপলব্ধি হয় যে বাংলাদেশেও ঝামেলা-মুক্ত পণ্য পরিবহন ব্যবস্থার বিকাশ ঘটতে পারে।
সেখান থেকে একটি বুদ্ধি তার মাথায় আসে। তিনি তার কানাডা প্রবাসী কিছু বন্ধুকে বাংলাদেশ নিয়ে এসে একটি নতুন উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবেন।
সেই থেকেই লুপ ফ্রেইট এর জন্ম হয়। ২০১৮ সালের শুরুতে লুপ ফ্রেইট এর যাত্রা শুরু হয়। আস্তে আস্তে পুরো বাংলাদেশে এর কার্যক্রম ছড়িয়ে যায়। এর কার্যক্রম করোনার মাঝেও বিস্তার পেতে থাকে ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ৬ লাখ টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগ নিতে সক্ষম হয়।
এটি একটি মাধ্যম যা পণ্য সরবরাহকে কিভাবে আরো কার্যকর করা যায় সাথে সাথে একে আরো সহজ ও ডিজিটাইজড করা যায় এ নিয়ে কাজ করে।
ভবিষ্যতে কি অবস্থায় দেখতে চান লুপফ্রেইট কে?
ভবিষ্যতে যারাই বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য দেশে পণ্য সরবরাহ করতে চায় লুপফ্রেইট তাদের জন্য একটি অপরিহার্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে চায়। রাজীব বিশ্বাস করেন পণ্য সরবরাহ মার্কেটে বাংলাদেশের একটি বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে আর শিপারদের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেবা এনে দিয়ে এই সম্ভাবনাকে আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব।
লুপের কার্যক্রমের ব্যাপারে রাজিব বলেন,” ধরুন আপনারা যদি বাংলাদেশ থেকে ওয়ালমার্টে পণ্য সরবরাহ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাদের পছন্দসই জায়গা থেকে আমরা পণ্যগুলো সংগ্রহ করে সেগুলোকে আপনাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারি। সকল আনুষ্ঠানিকতা আমরাই সম্পন্ন করে দেব এবং আপনাদের কিছুই করতে হবে না। এটিকে বাংলাদেশে পুরোপুরি বিস্তৃত করতে আরো এক বছরের মতো সময় লাগতে পারে।”
কি কাজ করে লুপ ফ্রেইট?
দেশে ও দেশ থেকে বিদেশে শিপারদের পছন্দসই সময়ে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করে লুপ ফ্রেইট। পণ্যের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে তাদের একটি real-time ট্রাকিং ফিচার রয়েছে। শিপারদের পছন্দসই সময়ের উপর ভিত্তি করে সর্বাধিক প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে সেবা প্রদান করে এটি।
এ বিষয়ে রাজিব বলেন, “যেহেতু আমি নিজেই পণ্য পরিবহনের সমস্যায় পড়েছিলাম তাই চেষ্টা করি সবচেয়ে কম সময় ট্রাক সরবরাহ করার সাথে সাথে পুরো প্রক্রিয়াটাকে ডিজিটাইজ করতে যেন কার্যক্রম আরো সুন্দরও সহজভাবে পরিচালনা করা যায়।”
কিভাবে কাজ করে এটি?
লুপ ট্রাক ড্রাইভারদের নিয়ে কাজ করে এবং সব সময় এর পরিবহনের অবস্থানের উপর নজর রাখে যেন যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় শিপারদের জন্য পরিবহন সরবরাহ করতে পারে। কাস্টমারদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য পরিবহনের মূল্য সম্পর্কে ধারণা দিতে লুপের একটি অ্যাপ রয়েছে যা তাদের ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে।
লুপ দুটি উপায়ে গ্রাহকদের সাথে তাদের দাম নির্ধারণ করে; প্রথমটি হলো চুক্তিভিত্তিক – সারা বছর একই মূল্যে, এবং বাজার-হারে – বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দামে। কাস্টমারদের পণ্য পরিবহনের সঠিক মূল্য সম্পর্কে ধারণা দিতে অতীতের বাজারমূল্য হতে এটি ডেটা সংগ্রহ করছে যেন বর্তমানে কাস্টমারদের সঠিক মূল্য সরবরাহ করতে পারে। এ বিষয়ে রাজিব বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের এবং কাস্টমারদের সুবিধার জন্য পুরো প্রক্রিয়াটা কে ডিজিটাইজ করার চেষ্টা চালাচ্ছি। এই অ্যাপের মাধ্যমে সিপাররা তাদের শিপমেন্টগুলোকে আরো সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করতে পারে কেননা সোমবারের বদলে মঙ্গলবার পরিবহন মূল্য কম হতে পারে।
ছাড়িয়ে যেতে চান বাংলাদেশকেও।
রাজীব বিশ্বাস করেন, “ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে তাদের। যেহেতু বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া এবং চায়নার মাঝে প্রবেশপথ হিসেবে কাজ করে লুপ ফ্রেইট বাংলাদেশি জনবলকে ব্যবহার করে আন্তঃদেশীয় পরিবহন ব্যবস্থায় বিপ্লব বয়ে আনতে পারে।”
এ বিষয়ে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালাম বলেন,”লুপ ফ্রেইট বাংলাদেশ থেকে শুরু করে এশিয়ার সমস্ত উৎপাদন ও বিতরণকারী দেশের পণ্য সরবরাহ সূচককে উন্নত করতে প্রস্তুত। সঠিক ও ডেটা ড্রিভেন পদ্ধতিতে আগালে এটি করা সম্ভব হলে মনে করি”।
Md.Fardin Rahman Khan
Intern,YSSE