পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান বলেছেন, বাংলাদেশ কয়লা বিদ্যুৎকে পরিহার করে সবুজ নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে এগুচ্ছে। কারন কয়লা বিদ্যুৎ কখনো টেকসই উন্নয়ন নয়। সরকার উপকূল, চর, হাওর, পাহাড় ও বরেন্দ্র অঞ্চলকে গুরুত্ব দিয়ে বিপদাপন্ন মানুষের জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ হাতে নিচ্ছে। আমরা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য বিশেষ করে পাহাড়, ছড়া, নদী-নালাকে সংরক্ষণ করে উন্নয়নকে আমরা অভিযোজন করছি। সিলেটে জলবায়ু বিষয়ক এক সংলাপের প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার ( ১৬ অক্টোবর) নগরীর এক অভিজাত হোটলে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা এবং ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ যৌথভাবে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনকে (কপ২৬) ঘিরে এ জলবায়ু সুবিচার সম্মেলনের আয়োজন করে।
তরুণদের উদ্দেশ্য করে পরিকল্পনা মন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা কারো দান-খয়রাতের আশায় বসে নেই। তবে আমরা যেকোন দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে মর্যাদাভিত্তিক অংশীদারিত্ব বির্ণিমানে প্রস্তুত। তরুণদের আরো সাহস নিয়ে আমাদের মন্ত্রী-এমপিদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে। তাদের প্রশ্ন করতে হবে জলবায়ু তহবিলের টাকা কোথায় যায়? কেন দুর্নীতি হয়?? এতে আমরা চাপের মধ্যে থাকব এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন অফিসের পরিচালক জুডিথ হার্বার্টসন ও ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোহাম্মদ আকমল শরীফ।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের সমন্বয়ক সোহানুর রহমান ও তরুণ জলবায়ু কর্মী হুমায়রা আহমেদ জেবা। মূল তথ্যপত্র উপস্থাপন করেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার- হিউম্যানিটিরিয়ান ও রেজিলিয়েন্স মইন উদ্দীন আহমেদ।
সংলাপে ঢাকাস্থ ব্রিটিশ হাইকমিশনের ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট উন্নয়ন অফিসের পরিচালক জুডিথ হার্বার্টসন বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন বিশ্বনেতা হিসেবে নন, বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর প্লাটফর্ম ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। তিনি বিশ্ব পর্যায়ে জলবায়ু বিষয়ে প্রশংসনীয়ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে জলবায়ু অ্যাকশন প্ল্যান, ডেল্টা প্ল্যান এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারেটি প্লানের মত বেশ কিছু নীতি গ্রহণ করেছেন। জলবায়ু অর্থায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ৭৮.৯ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু অর্থায়ন করা হয়েছিল, যা ২০২০ সালের জন্য করা প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ২১.১ বিলিয়ন ডলারের তহবিলের ব্যবধান রয়েছে। কপ২৬ সম্মেলনকে ঘিরে উন্নত দেশগুলো আরো জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যস্ত। আমাদের কাছে খুব সাম্প্রতিক তথ্য নেই কিন্তু শীঘ্রই জানা যাবে তারা কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। সঠিক অগ্রাধিকারের জন্য যেখানে যতটুকু প্রয়োজন সেখানে ন্যায়সঙ্গতভাবে পর্যাপ্ত জলবায়ু তহবিল নিশ্চিত করা প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে। জলবায়ু সুবিচার প্রতিষ্ঠায় তরুণদের কার্যকর ভূমিকাও গুরুত্বপুর্ন বলে তিনি মনে করেন। যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ জলবায়ু অংশীদারিত্বেও অংশ হিসেবে ব্রিটিশ সরকার কপ-২৬ ও পরবর্তী সময়ে তাদের সহযোগিতা বিশেষ করে (উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরে) অব্যহত রাখবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে নগরের নানা ধরনের বিরুপ প্রভাব পড়ছে। এজন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। শুধু কথার মধ্যে মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জরুরীভাবে কাজের মধ্যে সম্পৃক্ত হতে হবে। মেয়র হিসেবে তিনি নগর ব্যবস্থাপনায় আরো কার্যকর ভূমিকা পালনের অঙ্গীকার করেন। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বিত কার্যক্রম এবং অংশীদারিত্বে সিলেট নগরকে একটি বাসযোগ্য ও জলবায়ু সহনশীল নগর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এসময় তিনি ছাদে বৃক্ষরোপণ করলে ট্যাক্স হ্রাস করার ঘোষণা দেন।
সংলাপে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২ শতাধিক নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, তরুণ সম্প্রদায় ও জলবায়ু কর্মীরা উপস্থিত থেকে কপ-২৬ সম্মেলনকে নিয়ে তাদের প্রত্যাশা ও প্রচেষ্টার কথা নীতি-নির্ধারকদের সামনে তুলে ধরে। এসময় বক্তারা অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের দাবি জানান। হাওর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় জলবায়ু তহবিল প্রদান, যথাযথ ব্যবহার এবং জনসম্পৃক্ততার দাবি তোলেন।