সোমবার , ১৫ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. ক্যারিয়ার
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. তরুণ উদ্যোক্তা
  7. ধর্ম
  8. নারী ও শিশু
  9. প্রবাস সংবাদ
  10. প্রযুক্তি
  11. প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  12. বহি বিশ্ব
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. মতামত

পহেলা বৈশাখ: প্রাণের উৎসবে জেগেছে চট্টগ্রাম

প্রতিবেদক
bdnewstimes
এপ্রিল ১৫, ২০২৪ ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ


স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চির নতুনের ডাক দিয়ে বাঙালির জীবনে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ; বাঙালির প্রাণের উৎসব। দিকে দিকে চলছে বৈশাখের জয়গান, নতুনের আবাহন। চট্টগ্রামবাসী জাতি-ধর্ম, বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে এক হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রায়। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের আক্রমণ থেকে বাংলার সংস্কৃতিকে রক্ষা করে অন্ধকারের জীবকে রুখে দেওয়ার দৃপ্ত শপথে বাঙালিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে এসব আয়োজনে।

পহেলা বৈশাখে জেগেছে চট্টগ্রামের সিআরবির শিরিষতলা, ডিসি হিল, শিল্পকলার অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চ। মঙ্গল শোভাযাত্রার ধ্বনি পৌঁছে গেছে নগরের ঘরে ঘরে। তাপদাহ আর প্রখর রোদ উপেক্ষা করে প্রাণের সম্মিলনে এক হয়ে মানুষ পহেলা বৈশাখের মতো আয়োজনের বিস্তার ঘটানোর তাগিদ দিচ্ছে।

প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে বর্ষবরণের বড় দু’টি আসর বসেছে সিআরবির শিরিষতলা ও ডিসি হিলে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরেও ছিল প্রাণের মেলা। অন্যদিকে, নগরীতে চবি’র চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা, চারুশিল্পী সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন এককভাবে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

নগরীর সিআরবির শিরিষতলায় এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ষোড়শ আয়োজন শুরু হয় রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে দিনব্যাপী এই আয়োজনে উদীচী চট্টগ্রাম, সঙ্গীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, সুর সাধনা সঙ্গীতালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে সাংস্কৃতিক ফোরাম, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম, সৃজামী, অদিতি সঙ্গীত নিকেতনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সম্মিলিত গান পরিবেশন করেন।

এছাড়া বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, শব্দনোঙ্গর ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসসহ কয়েকটি সংগঠনের শিল্পীরা বৃন্দআবৃত্তি পরিবেশন করেন। ওড়িষি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যনীড় ও রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

নগরীর ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আয়োজন এবার ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে। সকাল সাড়ে ৬টায় কায়া আশ্রমের শিল্পীদের ভরতনাট্যম নৃত্যের মধ্য দিয়ে ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঙ্গীত ভবন, গীতধ্বনি, ছন্দানন্দ, সুরসাধনা, উদীচী চট্টগ্রামের একাংশ, সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, খেলাঘর মহানগর, সুন্দরম শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।

নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র, সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমি, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, দ্য স্কুল অব ক্লাসিক অ্যান্ড ফোক ডান্স, নৃত্যানন্দন, নৃত্য নিকেতন, অঙ্গনা নৃত্যকলা একাডেমি, ধ্রুপদ নৃত্য নিকেতন, সৃষ্টি কালচারাল ইনস্টিটিউট, নৃত্যরূপ একাডেমি, কৃত্তিকা নৃত্যালয় ও নিপ্পন একাডেমির শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন করেছেন। এছাড়া বোধন আবৃত্তি পরিষদ, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, নরেন আবৃত্তি একাডেমি, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, শৈশব, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, স্বরনন্দন প্রমিত বাংলা চর্চা কেন্দ্র ও প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের শিল্পীরা বৃন্দ আবৃত্তিতে অংশ নেন।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

সিআরবির শিরিষতলা ও ডিসি হিলে প্রবেশের আশপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে সিএমপি। এসব অনুষ্ঠানে যেতে পায়ে হাঁটতে হয়েছে অনেক দূর। পুলিশের কড়াকাড়িতে গরমের মধ্যে ভোগান্তিতে পড়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে সকাল ৯টায় নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের ক্যাম্পাস থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ ছিল- নবতররূপে করি বাংলার বন্দনা। বাদশা মিয়া সড়ক থেকে আলমাস মোড়, কাজির দেউড়ি, জামালখান হয়ে সার্সন রোড দিয়ে শোভাযাত্রা আবার চারুকলা ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়।

চবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেণু কুমার দে ও মো. সেকান্দর চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর ঢোলবাদ্যের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা নগরীর বাদশা মিয়া সড়ক থেকে চট্টেশ্বরী রোড হয়ে কাজির দেউড়ি ঘুরে চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় হাতি ও মুরগির দুটি বড় ডামি স্থান পায়। এছাড়া পেঁচা, হাতি ও বাঘের মুখোশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে অংশ নেন শোভাযাত্রায়।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

একইস্থান থেকে চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘চট্টগ্রাম চারুশিল্পী সম্মিলন পরিষদ’ মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। উদীচী চট্টগ্রামের একাংশের পক্ষ থেকে নগরীর আন্দরকিল্লা থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রা ডিসি হিলে গিয়ে শেষ হয়।

সাংস্কৃতিক সংগঠক নসরু কামাল খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্বায়নের কালে বাঙালিকে তার সংস্কৃতি রক্ষায় নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, ধর্মের রাজনীতি, মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের সরাসরি আক্রমণের শিকার হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি। এর মধ্য দিয়ে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এ অবস্থায় দেশের শুভবোধসম্পন্ন সকল মানুষকে একত্রিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতির চর্চাকে বেগবান করতে হবে। একমাত্র সংস্কৃতির চর্চা পারে দেশকে কূপমণ্ডূকতা-পশ্চাৎপদতা থেকে রক্ষা করতে।’

বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘সর্বজনীন বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে উসকানি দিচ্ছে, পহেলা বৈশাখের মতো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এসব অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। পহেলা বৈশাখ, মঙ্গল শোভাযাত্রা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতার জয়গান গায়। শোষণ-বঞ্চনা, কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রেরণা দেয়।’

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফারুক তাহের সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রথমে সবাই মানুষ। তারপর আমরা বাঙালি। এরপর একেকজন একেক ধর্মের অনুসারী। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, পৌষপার্বণ, নবান্ন এগুলো আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতি। আপামর মানুষের এই সংস্কৃতি যেদিন সারা বাংলাদেশে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারব, সেদিনই আমরা সুন্দর স্বদেশ পাব।’

এদিকে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নগর পুলিশ। তিন স্তরের নিরাপত্তা দিয়ে প্রতিটি ভেন্যুতে থানার সার্বক্ষণিক টিম ও মোবাইল টিম, ফুট পেট্রোল, চেকপোস্ট, সাদা পোশাকে পুলিশ, ডিবি টিম, সোয়াট টিম, কুইক রেসপন্স টিম, ডগ স্কোয়াড কে-নাইন ও বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিট মোতায়েন আছে।

নগর পুলিশের কোতোয়ালি জোনের সহকারি কমিশনার অতনু চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্ষবরণের বড় দুটি আয়োজনই হয়েছে কোতোয়ালি থানা এলাকায়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দু’টি আয়োজনই সুন্দরভাবে চলছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে আমরা তৎপর আছি।’

ছবি: শ্যামল নন্দী/সারাবাংলা।

সারাবাংলা/আরডি/এনএস





Source link

সর্বশেষ - খেলাধুলা