ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলের নিয়োগ বাণিজ্য সংক্রান্ত দুই মিনিট ১৭ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে। এতে এক নিয়োগপ্রার্থীর সঙ্গে তার কথোপকথন শোনা যায়।
গত ২১ আগস্ট আনুমানিক বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাথী খাতুন নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে অডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৎকালীন অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বর্তমান প্রক্টর ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের নামও শোনা যায়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষক গত বুধবার (২২ আগস্ট) ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ড. বিকুল।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আননুর যায়েদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ছড়িয়ে পড়া এই অডিও ২০১৮ সালে ফাঁস হয় বলে জানা গেছে। তবে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তিনি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন দাবি করছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই ২৪১তম সিন্ডিকেট সভায় ১০টি বিভাগে ৩৭ জন শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ১৫, ১৬ এবং ১৭ জুলাই একজন প্রার্থী নিয়োগ নিয়ে পরপর পাঁচটি অডিও ফাঁস হয়। প্রথম ফাঁস হওয়া অডিওতে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১৬ জুলাই ড. আজাদকে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট পদ থেকে ও ড. বিকুলকে টিএসসিসির পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি দেয় এবং বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কর্তৃপক্ষ।
ওই দুইজন শিক্ষক এক প্রার্থীকে শিক্ষক পদে চাকরি দেয়ার নামে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয় অডিওতে শোনা যায়। অডিওমতে ওই প্রার্থীকে টাকা লেনদেনের জন্য আজাদ ও বিকুলের সাথে যোগাযোগের নির্দেশ দেন ইতিহাস বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল ২৪৪তম সিন্ডিকেট সভায় তাদেরকে স্ব-স্ব পদ থেকে একটি করে পদাবনতি দেওয়া হয়। অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে ড. আজাদকে পদাবনতি করে সহযোগী অধ্যাপক এবং ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলকে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে।
পরে ২০২১ সালের ৩ আগস্ট তাদেরকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয় দুদক। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই শিক্ষকের শাস্তি তুলে নেয়।
জিডি সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে অভিযোগ উঠলে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করে। ২০২১ সালের ৩ আগস্ট তাদেরকে ওই অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয় দুদক। জিডির আবেদনে ড. বিকুল বলেন, গত ২১ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অজ্ঞাতনামা একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই মীমাংসিত ঘটনাকে কেন্দ্র তার কণ্ঠ এডিট করে একটি মিথ্যা ফেসবুক পোস্ট করে তার সম্মানহানী করার চেষ্টা করে। পরে তিনি বারংবার ওই অজ্ঞাতনামা ফেসবুক আইডির সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। এমতাবস্থায় বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারণ ডায়েরি করা একান্ত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ড. বাকি বিল্লাহ বিকুল বলেন, ২০১৮ সালের একটি মীমাংসিত ঘটনা, যেটা রাষ্ট্রপক্ষ সুরাহা করে ফেলেছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। সেই পুরাতন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় কুচক্রী মহল আমাদের সম্মানহানী করার জন্য এটা নতুন করে তারা ফেসবুক পোস্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইসিটি অ্যাক্টে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। এটা গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করছে এবং এটা নিয়ে একাধিক জিডি করা হয়েছে।
সারাবাংলা/এনইউ