স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালানোর সময় বঙ্গোপসাগরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ১১ জনের লাশ গত দুইদিনে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ চারজন ও কোস্টগার্ড সাতজনের লাশ উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে নারীপুরুষ ও শিশু আছে।
১০ জনের মধ্যে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থানা পুলিশ একজন এবং কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের টিম সাতজনের লাশ উদ্ধার করেছে। এর আগে গতকাল সোমবার (১৬ আগস্ট) সন্দ্বীপ থানা পুলিশ তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশীর আহম্মেদ খান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার দুপুরে আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাতে ১০-১২ বছর বয়সী এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে আনুমানিক ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে চারজনের লাশই সন্দ্বীপের মগধরা উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে ওসি বশীর জানিয়েছেন। তিনি আরও জানান, লাশগুলো উদ্ধারের পর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে স্বজনরা তাদের লাশ শনাক্ত করবেন।
এদিকে সাগরে টহলরত কোস্টগার্ড টিম মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সন্দ্বীপের ছোয়াখালি খাট এলাকা থেকে পাঁচজন, বাউরিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে এক মেয়ে শিশু এবং সন্তোষপুর থেকে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে। মোট সাতজনের মধ্যে আনুমানিক ছয় বছর বয়সী তিন মেয়ে শিশু ও দুই ছেলে শিশু এবং একজন ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ আছেন।
কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘সন্দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আমরা মোট সাতজন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করেছি। লাশগুলো উদ্ধারের পর ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে।’
গত শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাতে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে ৪০ জন রোহিঙ্গা নিয়ে সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় বঙ্গোপসাগরের মোহনায় একটি ইঞ্জিনচালিক নৌকা ডুবে যায়। তাদের মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা জেলেদের নৌকায় করে ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফিরে যায়। গত দুইদিনে ১১ জনের লাশ উদ্ধারের পর আরও ১৫ জন নিখোঁজ আছেন বলে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত দিয়ে মায়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করেন। সেসময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। গত তিন দশকে আসা নতুন-পুরনো মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ দিতে নৌবাহিনী নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করে। সেখানে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, খেলার মাঠ, হাসপাতালসহ প্রায় এক লাখ মানুষের নিরাপদে থাকার সব ব্যবস্থা আছে বলে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।
এ অবস্থায় গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়া শুরু হয়। কয়েক দফায় ১৮ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ভাসানচরে গিয়েছিলেন। তবে এর মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে ভাসানচর থেকে ফের কক্সবাজারে পৌঁছেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া শতাধিক রোহিঙ্গা পালানোর পথে মীরসরাই ও সন্দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায় আটক হয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/এনএস