মাটির তৈজসপত্র মৃৎশিল্পের সবচেয়ে প্রাচীন রূপ। বাংলার ঐতিহ্যের একটা সময় প্রাচীনকালের রাজা বাদশাদের বাসাবাড়ির আনুষাঙ্গিক বিষয় ছিল মাটির তৈরি আসবাবপত্র। একসময় এই সকল জিনিসপত্রের সৌখিনতার ছোঁয়ায় খুঁজে পাওয়া যেত বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। কেনই বা আমাদের জীবনে থাকবে না মাটির টান? মাটিই যে আমাদের সব। এখনকার যান্ত্রিক জীবনে এই মাটির ঐতিহ্যের স্থানকে দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম, কাঁচ ও প্লাস্টিকের দ্রব্য। মাটির এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার আর একটি নাম ‘কাদামাটির বাজার’। জ্যোতি তফরদারের হাত ধরে প্রায় এক বছর হল এই কাদামাটির বাজারের পথ চলা। গ্রামের প্রকৃতির মাঝে বেড়ে ওঠা জ্যোতি তফরদারের। মাটির প্রতি টান ও ভালবাসার এক প্রতিচ্ছবি হল কাদামাটির বাজার। অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে শুরু করা এই অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্মটি অল্প কিছু সময়ে দেশের ৫০টি জেলায় প্রায় ২৫০ এর বেশি মৃৎশিল্প ছড়িয়ে দিয়েছে সৌখিন মানুসষদের ঘরে ঘরে। বর্তমানে প্রায় ২০টির বেশি অর্ডার সম্পন্ন করেছে এই কাদামাটির বাজার যার থেকে খরচ বাবদ প্রতি মাসে আয় প্রায় ১০ হাজার টাকা।
কাদামাটির বাজার একটি অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস প্লাটফর্ম। যেখানে কোন ক্রেতা ঘরে বসেই সহজে অর্ডার সম্পন্ন করতে পারবে। অনলাইন ভিত্তিক বিজনেস মডেল হবার কারণে এই করোনা মহামারির সময়েও সৌখিন মানুষদের ঘরে ঘরে মৃৎশিল্পকে পৌঁছে দিতে পারছে জ্যোতি তফরদারের এই উদ্যোগ।
কাদামাটির বাজারের কালেকশনে আছে মাটির থালা, মাছ প্লেট, মাটির হাঁড়ি, ডিজাইন গামলা, ঘর ক্যান্ডেল, বাসন কোসন, গ্লাস, মগ, বাটি, কাপ-পেয়ালা, কারি সেট।
এই জিনিসগুলোতে দেখা যাবে কুমারপাড়া ডিজাইন। আর এ কাজে কুমারদের সাথে অংশ নিচ্ছেন অনেক ডিজাইনার। কারিগর এবং শিল্পীরা অনেক যত্নের সাথে এই শিল্পকর্মগুলো তৈরি করেন। মানুষের রুচি এবং বর্তমান সময়ের চাহিদার সাথে শিল্পকর্মগুলো দারুণভাবে সৌখিন মানুষের ঘরে ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। বর্তমানে মৃৎশিল্পের চাহিদা কম থাকলেও এর সৌন্দর্যের কদর এখনও কমে যায়নি, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল কাদামাটির বাজার। জ্যোতি তফরদারের বিশ্বাস তাঁর কাদামাটির বাজার দেশের মৃৎশিল্পের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে ছড়িয়ে যেতে পারবে এবং মানসম্মত শিল্প শৈলীতে পরিপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুণ এ সবার বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে কাদামাটির বাজার একদিন মার্কেট প্লাটফর্মে জায়গা করে নিবে।
আমাদের জীবন ও জীবিকার পাশাপাশি মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখতে এক অনবদ্য ভুমিকা পালন করছে। আর সেই ঐতিহ্যকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তুলে ধরতে জ্যোতি তফরদারের কাদামাটির বাজার অসীম অবদান পালন করছে। প্রকৃতি ও মাটির প্রতি ভালবাসাই তাঁকে এমন মহৎ উদ্যোগের দিকে ধাবিত করছে। তৈজসপত্র গুলো কেবল সৌন্দसदর্যের খাতিরেই নয়, এগুলোর রয়েছে সময় উপযোগী ব্যবহার ও প্রয়োজনীয়তা। জ্যোতি তফরদার আমাদের একজন অনুপ্রেরণা। তিনি ও তাঁর কাদামাটির বাজার এগিয়ে থাকুক, এটাই কাম্য।
কেমিয়া মাহফুজ অতি
কন্টেন্ট রাইটার ইন্টার্ন,
ওয়াইএসএসই।
The post সাফল্যের পথে ‘কাদামাটির বাজার’ appeared first on Youth School for Social Entrepreneurs.