নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেডের ডিভিডেন্ড প্রদানের বিষয় নিয়ে সঙ্কায় ভুগছেন বিনিয়োগকারিরা। এক যুগেরো বেশি সময় লসের ধারাবাহিকতায় বহাল থাকা এই কোম্পানিটির ভবিষ্যত নিয়ে ভাবাচ্ছে বিনিয়োগকারিদের। বিগত কোন বছরেরো কোন প্রকার লভ্যাংশ প্রদানের তথ্য মেলেনি কোম্পানিটির। কোম্পানি বার্ষিক প্রতিবেদন সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
১৫ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন সাপেক্ষে ১৯৯০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ৬৬৪ কোটি ৭০ লাখ ২০ হাজার টাকা।
কোম্পানিটি দীর্ঘ কয়েকবছর লসেরধারায় চলছে। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, ২০০৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কোন বছরেও মুনাফার সন্ধান পায়নি আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।
বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০ অনুসারে, কোম্পানিটির মোট সম্পদ থেকে দেনা বেড়েছে দ্বিগুন। কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমান ১১২৬ কোটি ২৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিটির মোট দেনার পরিমান দাঁড়িয়েছে ২২৯১ কোটি ৯২ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৭ টাকা।
কোম্পানিটির সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩য় প্রান্তিকের অনিরিক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, এসময় কোম্পানিটির করপরবর্তি লোকসান হয় ৩১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৭৩৯ টাকা। উল্লেখিত সময়ে এসে কোম্পানিটির মোট পুঞ্জিভুত লোকসানের পরিমান দাড়ায় ১৯১৫ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৭৩৯ টাকা।
এদিকে কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক আকলিফ বিন আমিরের সাথে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাসির বিন আলীর পারিবারিক সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যদিও ২০১৮ এর জারিকৃত কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কোডের ১ এর ২ নং অনুচ্ছেদের বি এর ২ নং ধারায় বলা আছে, কোম্পানির সাথে পারিবারিক সম্পর্ক যুক্ত কোন ব্যাক্তি বা আত্নিয় স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কর্পোরেট গভর্ণ্যান্স কোডের কোন ক্যাটাগরির ভিত্তিতে তিনি স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন ওয়েবসাইট কিংবা বার্ষিক প্রতিবেদনে এটি এড়িয়ে গেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
এ বিষয়ে এবং কোম্পানিটির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি উত্তম কুমার দে কোম্পানি সম্পর্কে এতো কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন কর্পোরেট সংবাদকে। তিনি বলেন, তিনি কিছুদিন আগেই কোম্পানি সেক্রটারি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিতে। যার কারনে কোম্পানি সম্পর্কে কোন তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।
বছরের পর বছর শুধুই লসের অংশিদার বানিয়েছেন বিনিয়োগকারিদের, লভ্যাংশ্যের অংশিদার বানাতে পারেনি আইসিবি ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড। কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে হতাশায় ভুগছেন শেয়ারহোল্ডাররা। তাই বিনিয়োগের আগে কোম্পানি সম্পর্কে ভালো ভাবে পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ২ হাজার ৩০০ টি। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৫২.৪৬ শতাংশ, সরকারি বিনিয়োগকারি ০.১৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ২২.৩৪ শতাংশ এবং বাকি ২৪.৭৩ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারিদের হাতে।
আজকে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় সর্বনিম্ন ৪.৯০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকায় । আজকে কোম্পানিটি ১৩৭ বারে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ২৮৯ টি। যার বাজার মূল্য ৩৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ওঠানামা করে সর্বনিম্ন ৩.৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭.৪০ টাকায়। কোম্পানিটি বর্তমানে মার্কেটের জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে।