তরুণরা প্রাণবন্ত, আত্মবিশ্বাসী, সাহসী এবং উজ্জ্বল। তাদের উপরই একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। তারাই পারে দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে। আজকের তারুণ্যে আমরা মূলত কথা বলি তরুণদের নিয়ে, তাদের সাফল্য, সমাজ ও দেশের জন্য তাদের যে অবদান, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। আর এই তরুণদের নিয়ে ওয়াইএসএসই দ্বারা আয়োজিত ” আজকের তারুণ্যের” ৪৭তম পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন Safewheel Limited এর সহ প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ব্যবসা উন্নয়ন কর্মকর্তা ‘ ফয়সাল ইসলাম ‘। তিনি মূলত মাদ্রাসা বিভাগের ছাত্র ছিলেন পরবর্তীতে BUP বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই বইপত্র পড়তেন এবং তা বন্ধুদের সাথে আলোচনা ও করতেন। রাফিক, আনাস ও ফয়সাল তিনজনই Safewheel এর প্রতিষ্ঠাতা এবং তারা মাদ্রাসার সহপাঠী ও ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাদের ইচ্ছা ছিল নিজেদের জন্য কিছু করার, দেশের জন্য কিছু করার এবং জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল যে প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে।
Safewheel এর আইডিয়া টা আসে মূলত Hult prize এর অংশগ্রহণের মাধ্যমে ( এমন কোনো আইডিয়া দিতে বলা হয়েছিল যা ১০বছরে ১০গুন মানুষের কাজের সুযোগ করে দিবে)। Safewheel Limited এর মূল লক্ষ্য হলো ” Moving wheel saving lives”। এটি একটি হেলথকেয়ার স্টার্টআপ। এটি শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। বাংলাদেশের দামী সমাজে ভরসার প্রতীকও বটে, যেখানে ১৫০টির ও বেশি গ্রামের মানুষদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছে সল্প খরচে অ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আর কি কি সেবা দেওয়া যায় এ নিয়েই কাজ করছে Safewheel। তাছাড়াও জিতে নিয়েছে UNDP এবং Earthtech এর মত বড় বড় সম্মাননা।
Safewheel স্টার্টআপ হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিল Hult prize এর ফাইনালে, তো তাদের এক বছরের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ” Hult prize হচ্ছে সামাজিক প্রভাব তৈরী করার যে স্টার্টআপ গুলো সেগুলো নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করে। তাদের যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে তারা HDG নিয়ে কাজ করে। তারা বলেন, মানুষ এমন স্টার্টআপ নিয়ে কাজ করবে যেখানে আর্থিক ধারণক্ষমতা থাকবে, পাশাপাশি মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করবে। Hult prize এর মোট ২৭টি অঞ্চল ছিল। যেহেতু তারা সাংহাই তে বিজয়ী হয় তাই সেই ২৭টি অঞ্চলের বিজয়ীদের মধ্যে তারা ছিল একটি। তারা সেখানে থাকা অবস্থায় ব্যবসায়ের খুঁটিনাটি থেকে শুরু করে, কি কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে, কি কি চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হতে হবে সেগুলো শিখানো হয়। Hult prize এ অংশগ্রহণ করার যে অভিজ্ঞতা তা বলার মত উপেক্ষা রাখেনা, এটি এমন একটি জায়গা যার মাধ্যমে তারা জীবনে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করে”।
Hult prize এর ফাইনালে যাওয়ার সময় Bill Clinton এর সামনে পিচিং দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল বা বিভিন্ন মাল্টি প্রজেক্ট এ ইনভেস্টরকে সন্তুষ্ট করতে হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা কেমন ছিল বলতে বলায় তিনি বলেন, ” Hult prize এর অ্যাক্সিলারেটর এর কথা বলতে গেলে প্রথম অভিজ্ঞতা হিসেবে সেটা অনেক রোমাঞ্চকর, কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং ছিল। তখন আমরা অনেক কিছুই জানতামনা বা বুঝতামনা। পরে যখন USA তে Bill Clinton এর সামনে এবং বিভিন্ন ইনভেস্টর এর সামনে পিচিং দেওয়ার সময় বুঝতে পারি যে আসলে ইকোসিস্টেম টা কীভাবে কাজ করে, কীভাবে তাদের সন্তুষ্ট করা যায় কিন্তু তখনো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ( কোম্পানীর ব্যাংক একাউন্ট না থাকা, কোম্পানীর পুরো তথ্য না থাকা)। তবে জীবনের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতার মধ্যে Hult prize এর অভিজ্ঞতা সবচেয়ে উপরে থাকবে”।
Hult prize এ অংশগ্রহণ করার সময়টাতে একাডেমিক দিকগুলোতে কি ধরনের সহযোগিতা পেয়েছিল তা জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, “BUP অনেক বেশি সহযোগিতা করে। তিনটা দেশে পরপর যাওয়ার সম্পূর্ণ তহবিল তারা দেয়। অন্যদিকে একাডেমিক দিকটার কথা বলা কঠিন, আমরা নিজেরা অনেক চেষ্টা করি মেইনটেইন করার কিন্তু অবশেষে পিছিয়ে পড়াতে স্টার্টআপ থেকে ব্রেক নিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করে তারপর আবার শুরু করি “।
ঠিক এই মুহূর্তে Safewheel কোন পজিশন এ আছে, কারেন্ট হেলথকেয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট সম্পর্কে কীভাবে জানেন আর কেনো এই সেক্টরে কাজ করছে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ” এখনও আমরা এটাকে স্টার্টআপই ভাবছি কারণ কোভিড এর কারণে আমাদের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকে যার কারণে কোম্পানীর লিগাল কে বাইন্ডিং থাকে তা প্রশমিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এখন তারা কিছু জিনিসকে ডেভেলপ করার চেষ্টা করছে, বিভিন্ন মডেলের কথা চিন্তা করছে, মানুষকে আরো বিভিন্নভাবে কীভাবে সেবা দেওয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছে। কারেন্ট হেলথকেয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট নিয়ে জানা বলতে দুই ধরনের ইনোভেশন আছে। তা হলো – ১. Finding something new ২. Get inspired from others ( দেশের বাহিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত লোকেরা তাদের গ্যাপ গুলোকে কীভাবে প্রশমিত করছে, কীভাবে সমস্যা সমাধান করছে সেগুলো নিয়ে পড়া) । আর এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটা স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতার জন্য এসব বিষয়ের উপরে পড়তে থাকা। কেন এই সেক্টরে আছি বলতে গেলে , আমরা এমন একটা দেশে বাস করি যেখানে চিকিৎসার জন্যও ভর্তুকি দিতে হয় এবং প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোর খরচ বহন করা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা আর এইসব বিষয়গুলো হচ্ছে আমার এই সেক্টরে আসার মূল কারন”।
পরবর্তী ৫বছরে Safewheel কে কোন পজিশন এ দেখতে চান এবং কি ধরনের সমস্যা সমাধান করতে চান জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ” এখন অনেক ধরনের স্টার্টআপ উঠে আসছে যারা ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করে দিচ্ছে। পরবর্তীতে সমস্যার সমাধান করতে চাই বলতে – ঘর থেকে টেস্ট এর নমুনা দিতে পারে কি না, যদি কোনো ছোট সমস্যা থাকে তাহলে হাসপাতাল যাওয়া জরুরী কিনা। আর পরবর্তী ৫বছরে আমরা বিশ্বাস করি যে, প্রত্যেকটা ঘরে যেন Safewheel সল্প খরচে সেবা পৌঁছে দিতে পারে “।
নতুনদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে বলায় তিনি বলেন, ” যদি কেউ আসলেই কাজ করতে চায় তাহলে সুযোগ থাকলে এখনই শুরু করা উচিৎ কারণ মানুষ ভুল করতে করতেই শিখে এবং সবসময় মনে রাখতে বলেন Improve yourself every single day। আরও বলেন যারা Nonprofit organizations নিয়ে কাজ করতে চায় – Look for business model, they will give us revenue ( তহবিল উত্থাপন করতে হলে একটা চিন্তা থাকা অত্যন্ত জরুরী যে আমার ক্যাশটা ফিরে আসার কি কি উপায় আছে)”।
এই লাইভ থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, যদি কারো নতুন কোনো কাজ করার ইচ্ছা থাকে তাহলে সময় নষ্ট না করে সেই মুহূর্তেই উদ্যোগ নিয়ে নেওয়া উচিৎ। আর যে কাজটি সে করতে চায় সেই বিষয়ক অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাজগুলো সমন্ধে যথেষ্ট পড়াশুনা করা উচিত যেন পড়ে যেয়ে সকল পরিস্থিতির মোকাবেলা করার মত যথার্থ জ্ঞান থাকে কারণ মূলত এই বিষয়গুলোই হচ্ছে সফলতার চাবিকাঠি।
রাজিয়া রহমান
কন্টেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট
ইন্টার্ন
ওয়াইএসএসই