খুব ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেখান থেকেই ডিজাইনিং, সাজানো, কাপড় বানানোর প্রতি আগ্রহ জন্মায় ফারহা মাহমুদ তৃণার। ২০১৬ সালে এফ কমার্স এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ফেসবুক পেজ খুলে নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়ার স্রোত বয়ে চলছিল। তিনি ও তার বোন মিলে ঠিক করেন ফেসবুকে একটা পেজ খুলে নিজস্ব নকশায় তৈরি কাপড়গুলো শোকেসিং করবেন। ২০১৬ সালে তাদের ফেসবুক পেজ এর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৭ সালে টেক্সাসে ফ্যাশন শোতে তাদের ডিজাইন করা কাপড় প্রথম শোকেসিং হয়। সেই শোকেসিং থেকে বিপুল পরিমাণ সাড়া পাওয়া তৃণা কে আরো এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। প্রথমে বোনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে নিজেদের প্রথম শোরুম খোলেন। এরপর ঢাকার বনানীতে তৃণাস ক্লজেট আত্মপ্রকাশ করে। এটি মূলত “কাস্টোমাইজড ফ্যাশন হাউজ” যেখানে গ্রাহকরা নিজের মতো করে কালার ও ডিজাইন পছন্দ করে দিতে পারেন। ক্রেতাদের কাছে একদম প্রকৃত পণ্য উপস্থাপন করতে ফিজিক্যাল একটা শোরুমের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে তৃনা। তৃণাস ক্লজেটের বর্তমানে অনলাইন ও ফিজিক্যাল মিলে ৪টা স্টোর রয়েছে। যেখানে ক্রেতারা ২০০০ টাকা থেকে ১০০০০ হাজার টাকার ভিতরে নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী পণ্য কেনার সুযোগ থাকছে। বর্তমানে তার টিমে ১৫ জন রয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরো বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে তার।
নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য করণীয়
সফল হওয়ার জন্য প্রথমেই একজন উদ্যোক্তার ক্রেতাদের বিশ্বাস আর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করেন তৃণা। এজন্য সঠিক ডকুমেন্টেশন থাকাটা জরুরী। বিশেষ করে ট্রেড লাইসেন্স আগে থেকেই তৈরি করে ফেললে ক্রেতাদের পণ্য কেনার সময় বিশ্বাসের একটা জায়গা তৈরি হয়। যার ফলে ব্যবসার প্রসার খুব দ্রুত হয় বলে মত দেন তিনি। এছাড়াও যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তার মান ঠিক রাখা ও সোর্স ও সাপ্লাই চেইন সহজপ্রাপ্য করার দিকে জোর দিতে বলেন তিনি। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ক্লায়েন্টের কাছে সহজে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং প্রচারের জন্য একটি ওয়েবসাইট অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে এবং আপনার ব্যবসার ধরন ও ক্রেতাদের প্রতি আগ্রহ তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। উদ্যোক্তারা দক্ষতা উন্নয়নে নানা প্রশিক্ষণ, কর্মশালায় অংশ নিতে পারেন। অনলাইনে বর্তমানে অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে এসকল প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা হয়। তৃণার এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে তার লেগে থাকার মানসিকতা পারিবারিক অনুপ্রেরণা একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। তিনি ই-কমার্স ব্যবসায় আসার পরও কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনে সমস্যার মুখে পড়েন নি।
নতুন উদ্যোক্তাদের যেভাবে শুরু করা উচিত
নতুন উদ্যোক্তাদের যেদিকে দক্ষতা আছে বা যে বিষয়েই আপনি ব্যবসা শুরু করেন না কেন ফারাহ মাহমুদ তৃণার মতে তিনটি দিকে তাদের খেয়াল রাখা উচিত
১. পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখা।
২. পণ্যের সহজপ্রাপ্যতা।
৩. সঠিক ডকুমেন্টেশন রাখা।
এ তিনটি বিষয় ঠিক রেখে যদি ব্যবসা করতে পারে এবং আস্তে আস্তে ই-কমার্সে সফল হয় তবে ফিজিক্যাল স্টোর চালু করা যেতে পারে।
দেশে ই কমার্স খাতের বর্তমান অবস্থা
ইন্টারনেট ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার সহজলভ্যতায় ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে সাথে আজকাল ই-কমার্স ব্যবসা অনেক সহজ হয়ে আসছে এবং সরকারের এ বিষয়ে নতুন নতুন উদ্যোগের কারণে অনেক উদ্যোক্তারাই এগিয়ে আসার সুযোগ পাচ্ছে। তারপরও কিছু চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। এর মাঝে অন্যতম- সুস্থ প্রতিযোগিতা, সাইবার সিকিউরিটি, কাস্টমার লয়্যালিটি।
আজকাল দেশে ই-কমার্স ও এফ কমার্স এর জনপ্রিয়তা দিনকে দিন তুমুলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন ঘরে বসেই নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এবং তারা অর্থ আয় করছেন। এক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু করাটা আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। আগে ব্যবসা শুরু করতে গেলে সবার আগেই পুঁজি নিয়ে ভাবতে হতো। আর এখন কারো কোন বিষয়ে দক্ষতা থাকলেই বা কোন কিছু বানাতে পারলে একটা নতুন উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবে। ভাবে ফেসবুক খুলে যদি ব্যবসা করা যায় সেক্ষেত্রে আমিও আমার পরিবারে সাহায্য করতে আর্থিক উপার্জনে সহায়তা করতে পারব। যারা ফেসবুকে ব্যবসা করেন তাদের সব সময় সঠিক ডকুমেন্টেশন অর্থাৎ ট্রেড লাইসেন্স ঠিক রাখার দিকে বরাবরই জোর দিয়ে আসছেন ফারাহ মাহমুদ তৃণা। এতে শুধুমাত্র ক্রেতাদের আস্থা অর্জন ছাড়াও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন আর ফোরাম এর সাথে যুক্ত হতে সাহায্য করবে যা তাদের ব্যবসার প্রচার ও প্রসারে সহায়তা করবে
এফ-কমার্স এর বর্তমান অবস্থা
খুব কম খরচেই এফ কমার্স ব্যবসা শুরু করা যায়। তবে ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে ও ব্যবসা প্রসারে সঠিক ডকুমেন্টেশন এর প্রয়োজন যার জন্য ফি বাবদ খরচ পরে। এছাড়াও পণ্য তৈরিতে কাঁচামাল কেনা, কারিগরদের খরচ এবং আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে পণ্য কেনা, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এ খরচ হয়। আবার ব্যবসার উদ্দেশ্যে যে ওয়েবসাইট খোলা হয় তার জন্য প্রতিবছর ডোমেইন,হোষ্টিং কেনা ও রিনিউ বাবদ খরচ পরে। অর্থাৎ এফ কমার্সেও কিছুটা খরচ পড়বেই।
শেষ কথা
উদ্যোগ নিলে কখনোই পিছপা হওয়া যাবে না বরং সব সময় লেগে থাকতে হবে। অনলাইনে ব্যবসা করলে পণ্যের ছবি যেটা দেয়া আছে পণ্য সরবরাহের সময় যেন ঠিক একই পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছায়। ই-কমার্স ব্যবসার মান বজায় রেখে এভাবে ক্রেতার আস্থা অর্জন সম্ভব। তবে অনেক বিকৃত মানসিকতার ভুয়া ক্রেতা থাকে তাদেরকে চিহ্নিত করা জরুরি। উদ্যোক্তার যদি সঠিক ডকুমেন্টেশন থাকে তবে এভাবে লাখ লাখ সফল উদ্যোক্তা তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন ফারহা মাহমুদ তৃণা।
Md..Fardin Rahman Khan
Intern,YSSE