বৈশ্বিক মহামারীতে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে ভঙ্গুর। হাজার হাজার মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। দেশের উদ্যোক্তারাও তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এই করোনাও কি কারো জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে? হ্যাঁ, করোনাও যে কারো জন্য হয়ে সৌভাগ্য বয়ে আনতে পারে তাই দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য মিলি খন্দকার হতে পারে এক অনুপ্রেরণার নাম। করোনায় নানা প্রতিকূলতাকে জয় করে উদ্যোক্তার ভূমিকায় নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন।
করোনা মহামারীতে আরো অনেক মানুষের মত রিমিও অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তখন থেকেই ভাবছিলেন কিছু একটা করতে হবে। শুধু নিজের পরিবারের জন্যই নয় আশেপাশের মানুষের জন্যও কিছু করতে হবে এ কথা ভেবেই তিনি ব্যবসার উদ্যোগ নেন।
শাড়ি পরতে খুব ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসা থেকেই পহেলা মে মাত্র ২০ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু হয় তার অফিসিয়াল পেইজ গোলাপজান এর যাত্রা। এখন লাখ টাকার কেনাবেচা হয়।
উদ্যোক্তা জীবনের শুরু থেকেই ই-কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন তিনি। যেহেতু ই কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন কিছু তাঁতীর সাথে তাঁর আগে থেকেই পরিচিতি ছিল। প্রথমে ভেবেছিলেন গোলাপজানে শুধু শাড়িই রাখবেন। খবর পেলেন লকডাউনে পাবনার এক তাঁতীর আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তার ঘরে খাবার নেই কিন্তু লুঙ্গি আছে। তিনি তাদের ঘর থেকে লুঙ্গিগুলো কিনে নিলেন। ভাবলেন এতে তার অনেক উপকার হবে। সেই লুঙ্গিগুলো আনার একদিনের মাথায় সব বিক্রি হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি নিয়মিতই তার থেকে লুঙ্গি নিতেন। আস্তে আস্তে বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি লুঙ্গির সাথে সাথে শাড়ি, বেডশীড, থ্রি পিস বিক্রি শুরু করেন।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় জন্ম রিমি খোন্দকারের । উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন ফেনীতেই। ফেনী জিয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর উচ্চশিক্ষার জন্য ঢাকায় আসেন। এরপর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। পাশাপাশি হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে পড়েছেন। তবুও গতানুগতিক চাকরির কথা না ভেবে কেন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখলেন মিলি? বরাবরই স্বাধীনচেতা মিলির উত্তর তিনি চেয়েছিলেন মুক্তভাবে কিছু একটা করতে। ধরাবাঁধা যেখানে নিজের কিছু করার সুযোগ নেই এমন কিছু করতে চাননি কখনোই। এজন্যই স্বপ্ন দেখেছেন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার।
প্রত্যেকেরই উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে কেউ-না-কেউ অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকে। রিমির অনুপ্রেরণার উৎস কে ছিলেন? রিমির ভাষ্যমতে,” উইয়ের রাজীব আহমেদ ভাইয়া এবং নিশা আপু আমার অনুপ্রেরণা। এবং আমার বর মাইনুল আমার জন্য অন্যতম অনুপ্রেরণা সে সব কিছুতে আমাকে সাহায্য করে। উনাদের দেখে উদ্যোক্তা হতে অনেক সাহস পেয়েছি। নয়তো এতদূর আসতে পারতাম না।”
খুব কম সময়ের ভিতর গোলাপজান হয়ে উঠেছে আস্থার প্রতীক। প্রতিযোগিতায় অন্যদের থেকে আলাদা কিভাবে?
রিমি অনেক আগে থেকেই বই প্রেমী। বই পড়তে ভালোবাসেন। শাড়ির সাথে উপহার হিসেবে দেন বই। প্রত্যেকটি পণ্য এর ছবি তোলার তোমার সাথে থাকে একটি মানানসই বই।
এ সময়কার তরুণ এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের সাথে চুক্তি করে গোলাপজান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কেনাকাটা করলে বই দেওয়া হয়। তার স্বপ্ন পৃথিবী একদিন বইয়ের হবে।বইয়ের ছোঁয়া লাগবে সবার প্রাণে। বই হবে সবার ভালবাসা ভাললাগার বন্ধু। নামইবা গোলাপজান কেন? নাম হিসেবে চেয়েছিলেন পুরনো ধাঁচের একটা নতুন নাম যা ঐতিহ্যকে বহন করে। তাই নানি দাদি কে স্মরণ করে গোলাপজান নামটি রেখেছেন।
আর একটা বিষয় যে গোলাপজান কে আলাদা করে- আমাদের ফ্যাশন জগতটা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক। তিনি চেয়েছিলেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তার পণ্য পৌঁছে যাক আর সবার সাধ্যের মধ্যে যেন পণ্য পৌঁছে দিতে পারেন।
যেহেতু ফেনীর মেয়ে,ফেনীর উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। তিনি চান নিজের মাধ্যমে, গোলাপজানের মাধ্যমে প্রাণের জেলা ফেনীকেও তুলে ধরতে। চান সবাই তার নামের আগে বলুক ফেনীর রিমি আপু।
গোলাপজান নিয়ে রিমির স্বপ্ন আকাশছোঁয়া। তিনি চান বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের কাছে যেন পরিচিত হয়ে ওঠে গোলাপজান। তার চিন্তাভাবনা এখন শুধুই গোলাপজান নিয়ে।শুধু ব্যবসা না এটি যেনো একটি সেবাও হয়ে উঠতে পারে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে তার পণ্য পৌঁছে যেতে পারে তাই তিনি চান।
Md Fardin Rahman Khan
Intern,YSSE