ফাতেমা রহমান রুমা। বয়স ৪০-এর কোটা অতিক্রম করেছেন। এ সময়ের মধ্যে জীবনের উল্লেখ্যযোগ্য একটি অংশ ফ্যাশন, মডেলিং, রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নারী উদ্যোক্তাসহ নানামুখী সম্ভবনার কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন। পেয়েছিলেন ঈর্শ্বনীয় সাফল্য। চলারপথে আকস্মিক ঘটেছে ছন্দপতন। পুরুষতান্ত্রিক পশ্চাৎপদ সম্পন্ন মানুষের ছত্রছায়ায় অদম্যের পথে এগিয়ে চলা দৃঢ় মানসিকতার এ নারী সাময়িক থমকে গেলেও, আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফের শুরু করেছেন প্রবাসের মাটিতে নতুন জীবন-সংগ্রাম। এ লক্ষে স্বপ্নের বাতিঘর প্রজ্বলিত করতে নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জার্মানপ্রবাসী এ নারী উদ্যোক্তা। জীবন-সংগ্রামে হার নামানার অদম্য সেই নারী সম্পর্কে লিখেছেন শামস রহমান।
ফাতেমা রহমান রুমা। বয়স ৪০-এর কোটা অতিক্রম করেছেন। এ সময়ের মধ্যে জীবনের উল্লেখ্যযোগ্য একটি অংশ ফ্যাশন, মডেলিং, রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং নারী উদ্যোক্তাসহ নানামুখী সম্ভবনার কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ছিলেন। পেয়েছিলেন ঈর্শ্বনীয় সাফল্য। চলারপথে আকস্মিক ঘটেছে ছন্দপতন। পুরুষতান্ত্রিক পশ্চাৎপদ সম্পন্ন মানুষের ছত্রছায়ায় অদম্যের পথে এগিয়ে চলা দৃঢ় মানসিকতার এ নারী সাময়িক থমকে গেলেও, আকাশছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ফের শুরু করেছেন প্রবাসের মাটিতে নতুন জীবন-সংগ্রাম। এ লক্ষে স্বপ্নের বাতিঘর প্রজ্বলিত করতে নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন জার্মানপ্রবাসী এ নারী উদ্যোক্তা। জীবন-সংগ্রামে হার নামানার অদম্য সেই নারী সম্পর্কে লিখেছেন শামস রহমান।
খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফাতেমা রহমান রুমা। সদা হাস্যজ্জ্বোল, স্মার্ট, সুদর্শী আর রূপরহস্যের খুঁজে বেরানো মেয়েটির শৈশব আর পড়াশোনার বেশ কিছুটা সময় কাটে ঐতিহ্যবাহী সেই বাগেরহাট শহরে। এক সময় উচ্চতর পড়াশোনার জন্য চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। ১৯৯৮ সালে ভর্তি হন ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। সেখান থেকে ২০০০ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। একই সময়ে ভর্তি হন জেরিন আজগর ফ্যাশন হাউজে। সেখান থেকে রূপ ও ফ্যাশনের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেই শুরু করেন লেডিস
গ্ল্যামার বিউটি পার্লারের ব্যবসা। এর কিছু দিন পর ফ্যাশন ও রূপসজ্জা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণে নিতে চলে যান ভারতে। সেখান থেকে ডিপ্লোমা শেষ করে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পরীবাগের ২৩ হাতিরপুলে লেডিস গ্ল্যামার বিউটি পার্লারের সক্রিয় ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনন্যায় নিয়মিত ফটো মডেলিং। দৈনিক যুগান্তর-এ রূপ ও ফ্যাশনের ওপর বিভিন্ন ট্রিপস লিখতেন তিনি। বেসরকারি টিভি চ্যানেল আইয়ে প্রয়াত জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূরের উপস্থাপনায় ‘সাজাই স্বপ্ন ঘর’ এর অনুষ্ঠানে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছিলেন ফাতেমা রহমান রুমা।
মিডিয়ার বিভিন্ন অঙ্গনে সাফল্য আর সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার মধ্যে ফাতেমা রহমান রুমা ‘রিলায়েবল কুরিয়ার সার্ভিস লিমিটেড’ ও ‘ফাতেমা হারবাল প্রডাক্ট প্রডাকশন’ নামে ব্যক্তি মালিকানাধীন দু’টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৯৮ সালে। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছিল বেশকিছু নারী-পুরুষ কর্মীর। আর এ ঈর্শ্বনীয় সফলতার মধ্যে সবচেয়ে কাছের আপন মানুষটির অবিশ্বাসের দোলাচলে, আস্থার সংকটে থেমে যায় সেই অদম্য নারীর গতিময় স্বপ্নযাত্রা। ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে যায় তার সেই জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তার পরও ধমে যাননি তারুণ্যনির্ভর সেই নারী। নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে যোগ দেন জনসন পিএইচ ৫:৫ ও মডগার্ল কোম্পানিতে একজন বিউটি এক্সপার্ট হিসেবে পরামর্শদাতা হিসেবে। সেখানে কাজ করেন দীর্ঘদিন।
ফাতেমা রহমান রুমা সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করেছেন আইন ও সালিশি কেন্দ্রের সঙ্গেও। সেখানে নিয়মিত অসহায় দুস্থ মেয়েদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন তিনি। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর পড়াশোনা করেন ২০০৫ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত। সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেন ছায়ানটের শিকর-এ। রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর ভালো গান করে ছায়ানটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানকে মাতিয়ে রাখতেন তিনি। এমন সাফল্যের মধ্যেও হঠাৎ ব্যক্তিগত জীবনে নেমে আসে আধার কালো অন্ধকার। ভেঙে যায় জীবনের ব্যক্তিগত স্বপ্নঘর। হয়ে যান একা। বিমর্ষমনচিত্তে একাই শক্তি জোগিয়ে ফের ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা। আবার রাজধানীর কলাবাগানে লেডিস গ্ল্যামার বিউটি পার্লার অ্যান্ড হারর্বাল-এর আরেকটি শাখা ওপেন করেন। বর্তমানে সেখানে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন নারীকর্মী। এর মধ্যে কয়েক বছর আগে পাড়ি জমান উন্নত দেশ জার্মানিতে। ব্যক্তিগত ভালোবাসার স্বপ্নের বীজ বপন করেন সেখানে। বিশ্বাসের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে ফাতেমা রহমান রুমা নামের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিগত পেজে সে সাক্ষীই বহন করে।
ফাতেমা রহমান রুমার সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলে জানা যায়, তিনি জার্মানিতেও কর্মদক্ষতার ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। একজন দক্ষ কমমেটোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন জার্মানির সুনাধন্য প্রতিষ্ঠান ইবেনসোতে। সেখানে দীর্ঘদিন কাজ করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়ছেন। তিনি মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের পারদর্শিতা মণিকোটায় পৌঁছাতে ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই’। তবে এ অবস্থায় একজন নারী যদি তার নিরাপদ আশ্রয়স্থলে বিশ্বাস ভঙ্গের ফাঁদে পড়েন, তা বড়ই কষ্টের।
ফাতেমা রহমান রুমার আরও একটি পরিচয় হলো- তিনি জার্মান চেম্বার অব কমার্সে একজন নারী ব্যবসায়ী হিসেবে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া তিনি সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি’র জার্মানি প্রতিনিধি হিসেবে। এতে জার্মানিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সভা-সেমিনারের সংবাদ কভারেজ করে প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটিতে যথেষ্ট পরিচিতও পেয়েছেন এ নারী সাংবাদিক। সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জার্মানবাংলা২৪ডটকম নামে একটি নিউজ পোর্টালে।
এ দিকে জার্মানিতে Ebenso ruma’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নিয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরেই বর্তমানে নতুন করে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে আমি কিছুটা ক্রান্তিকাল পার করছি। প্রবাসের মাটিতে ব্যক্তিগতভাবে বহুবাধা অতিক্রম করে একজন নারী হিসেবে একাই জীবনযুদ্ধের সংগ্রামে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। তবে নিজের ওপর বিশ্বাস হারাইনি। শিগগরই পুরোদমে জার্মানিতে ‘Ebenso ruma’ হাউজের কার্যক্রম শুরু করব।’
জার্মানিতে ‘Ebenso ruma’’ হাউজের কার্যক্রম ভালোভাবে শুরু করতে পারলে বাংলাদেশ থেকে নারী কর্মী আনার চিন্তাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
পরিশেষে বলা যায়, আত্মবিশ্বাসী একজন নারী হিসেবে ব্যক্তিজীবন, কর্মজীবন সব জীবনযুদ্ধেই ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন জার্মানপ্রবাসী এ নারী উদ্যোক্তা ফাতেমা রহমান রুমা। সমাজে মিডিয়াকেন্দ্রিক সমালোচনার বিপক্ষে একজন নারী হিসেবে নিজ গুণে, নিজ শক্তিতে পুরুষের মতো সক্ষমতা রাখতে চাচ্ছেন তিনি। তিনি মনে করেন, আর এ জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে প্রকৃত বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো মানুষের। এমন মানুষের সহযোগিতা, অনুপ্রেরণা, উৎসাহ আর সাহস জোগানোর মাধ্যমে একজন অদম্য হার নামানা নারী উদ্যোক্তার নতুন স্বপ্নযাত্রায় বাধাহীন গতি ফেরার সম্ভাবনা সহজ হয়ে যায়। যা থেকে অনুপ্রাণিত হবে নতুন নারীসমাজ। আর সম্ভাবনার নতুন ধার উন্মোচিত হবে স্বদেশের মতো জার্মানিতেও।
লেখক, শামস রহমান ( বিশিষ্ট্য কলামিস্ট ও সাংবাদিক)