মামুনুর রশীদ রাজ: দেশের নারীরা এগিয়ে যাচ্ছেন দ্রুত। এর মধ্যে বেশিরভাগ নারীই স্বনির্ভরতার জন্য চাকরিতে যাচ্ছেন। আর কিছু নারী এগিয়ে আসছেন ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ব্যবসায়। তারা নানা প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের পাশাপাশি অন্য নারীদেরও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগিতা করছেন।
ঢাকার ডেমরা এলাকার ইভানা আক্তার এমনই একজন তরুণ নারী উদ্যোক্তা। যিনি কাজ শুরু করেছেন দেশীয় পোষাক নিয়ে। দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে যে সকল নারীরা দেশীয় পোষাক নিয়ে কাজ করছেন, এদের মধ্যে অনেকেই তাদের পণ্য প্রস্তুতের পর তা মান ধরে রেখে ক্রেতা পর্যন্ত পৌঁছে দিতে অনেক ভোগান্তি পোহান। এক পর্যায়ে তারা উদ্যোগ থেকে সরে পড়েন। এমন নারী উদ্যোক্তাদের মনোবল ধরে রাখতে এবং পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তিতে তৈরী করেছেন প্লাটফর্ম “Evana Rashid “।
ইভানা বলেন,আমাদের দেশে গ্র্যজুয়েশন শেষ করার পর আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হয় একটি চাকরি খোজা। অনেকেই আবার গ্র্যাজুয়েশনের আগেই চাকরি খোজা শুরু করে। প্রয়োজনের তাগিদে তখন পড়া লেখা শেষ করার আগেই চাকরিতে প্রবেশ করে এবং নামমাত্র মূল্যে নিজের জীবনের মূল্যবান সময়গুলো বিক্রি করতে থাকে।
ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক এর ছাত্রী হিসেবে আমার পরিবার থেকেও আমার উপর ব্যাংক কিংবা এমন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার অনেক প্রেসার ছিল। কিন্তু প্রথম থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন কিছু করার।আমার ইচ্ছা ছিল আমি এমন কিছু করব যেটা আমার ভাল লাগে । ছোটবেলা থেকেই আমার মধ্যে স্বাধীন মনোভাব এবং ভিন্নভাবে কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। আমার স্বাধীন মানসিকতা আমাকে সাহায্য করেছে এই উদ্যোগটি নিতে । আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া; আর একজন মানুষ যিনি আমার স্বপ্নপূরণে সদা ছায়াসঙ্গী হয়ে পাশে থাকেন, তিনি আমার সারাজীবনের সঙ্গী আমার স্বামী।
অন্য অনেকের ক্ষেত্রেই স্বামীর সাপোর্ট পেতে অনেক বেগ পেতে হয়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ভিন্নতা ছিল। আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তার সাথে শেয়ার করার পর বাধা দেয়ার বিপরীতে আমাকে সাহস যুগিয়েছেন, ভরসা দিয়েছেন, পেজ এবং অনলাইন ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে সম্যক ধারণা দিয়েছেন। যেটা না হলে একজন নারীর পক্ষে উদ্যোক্তা হওয়াটা সহজ হয়ে ওঠে না।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের জুন থেকে আমি ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে ব্যবসার পরিসর খুব বেশি না হলেও অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি । দিন দিন ব্যবসার পরিসর বাড়ছে। বর্তমানে আমি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পণ্য সরবরাহ করি।
আমি মূলত শুরু করেছিলাম জামদানি শাড়ি নিয়ে। কিন্তু এখন ক্রেতার চাহিদায় তাঁতের শাড়ি, জুম শাড়ি,হ্যান্ডপ্রিন্ট,ওড়না,এক্সক্লুসিভ শাড়ি,বাটিক থ্রি-পিস, ব্লক থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা সহ নারী পোষাকে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হচ্ছে পেজে পণ্য তালিকা।
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে ইভানা বলেন, প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা অতিক্রম করা সম্ভব। আপনি যে কাজ ভালো পারেন এবং আপনার কাছে যত কম টাকাই থাক না কেন, সেটা দিয়েই শুরু করুন। কারণ কাজ শুরু না করলে কেউ জানবে না যে আপনি কাজ করতে পারেন বা কাজ করতে চান। আমি যখন আমার ব্যবসা শুরু করি আমাকে অনেকেই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল কারণ আমি মেয়ে । কিন্তু এই ধরনের ধারণাকে পাল্টে দেওয়ার জন্যই এই পর্যন্ত এগিয়ে এসেছি এবং আল্লাহ চাইলে আরও এগিয়ে যাব।
তিনি বলেন, আমি কখনো আত্মবিশ্বাস হারাইনি। আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, আমি এ কাজে সফল হবই । আল্লাহ যদি তৌফিক দান করেন তাহলে আমি আমার Online Business আরও এগিয়ে একটা শোরুম দিতে চাই । “Evana Rashid” কে আরও জনপ্রিয়তা লাভ করাতে চাই ।