ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: রাজনৈতিক সমাগমকে কেন্দ্র করে আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের সিট বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া সার্বিক বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত’ আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্পষ্ট বক্তব্য—স্নাতক ও স্নাতকোত্তর টার্ম/সেমিস্টার ফাইনালসহ সব একাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. ফোরকান উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
২৮ মার্চ রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন তার রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়ে বুয়েটের একটি সেমিনার রুমে কর্মসূচির আয়োজন করেন—এমন অভিযোগ এনে শুক্রবার দুপুর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি—বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডিএসডব্লিউ) ড. মিজানুর রহমানের জ্ঞাতসারেই কর্মসূচিটি সম্পন্ন করেছে ছাত্রলীগ।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুর থেকে আন্দোলনে নামে বুয়েট শিক্ষার্থীরা৷ এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে ছয়দফা দাবি জানায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
এক পর্যায়ে বুয়েট উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে এসে তাদের দাবি-দাওয়া পূরণ ও তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। তবে ‘পুরোপুরিভাবে সন্তুষ্ট’ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আজকের মতো মাঠ ছেড়েছেন।
আরও পড়ুন: ফের উত্তাল বুয়েট, দাবি না মানলে ‘আন্দোলন চলবে’
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ২৮ মার্চ মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক ২১তম ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল থেকে বহিষ্কার, তার সহযোগীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা বহিরাগতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিপ্রদানসহ মোট ছয়দফার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ১ ও ২ নম্বর দাবি আগামীকাল শনিবার সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) পদত্যাগের দাবি জানান তারা।
পরে রাত ৮টার দিকে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘যখন ঘটনাটি ঘটেছে, তখন তোমরা তা আমাদের জানাতে পারতে। সেটি তোমরা করোনি।’
একপর্যায়ে আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী বুয়েট উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন—‘স্টাফরা বলেছে, ওদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ডিএসডব্লিউ স্যারের পারমিশন ছিল।’ জবাবে সত্য প্রসাদ মজুমদার বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেন।
এর আগে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দফতরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিনকার ঘটনায় কেউ ডিএসডব্লিউ’র দফতরে আবেদন করেনি। এমনকি ফোনেও কেউ যোগাযোগ করেনি।’
বুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘তোমাদের একনম্বর দাবি অনুযায়ী পুরোকৌশল বিভাগের ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট বাতিল করা হবে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
বুয়েট উপাচার্য বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। তবে তোমাদের ৪ নম্বর দাবিতে যে সময় বেঁধে দেওয়া আছে, সে সময়ের মধ্যে কাজ করা কঠিন। একটু সময় প্রয়োজন।
উপাচার্যের এমন বক্তব্যের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানান।
উপাচার্য স্থান ত্যাগ করলে আগামীকাল শনিবার সকাল আটটায় বুয়েট শহিদ মিনারে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়ে আজকের মতো আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে খুন হন বিশ্ববিদ্যালয়টির তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এই ঘটনার পর বুয়েটে সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি ও অঞ্চলভিত্তিক ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ।
সারাবাংলা/আরআইআর/একে